রিজার্ভ এক বছরে কমেছে ৭১২ কোটি ডলার
চলতি বছরজুড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও বছর শেষে তা বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের হিসাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ কমেছে ৭১২ কোটি ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮২ কোটি ডলারে। এদিকে ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ডলার। এ হিসাবে ডিসেম্বরের গত দুই সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে ২১৯ কোটি ডলার।
এদিকে নিট রিজার্ভও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনের শেষে নিট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮ কোটি ডলারে। ১৪ ডিসেম্বর নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৯১৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। ১৪ দিনে নিট রিজার্ভ বেড়েছে ১৬৯ কোটি ডলার।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি বাবদ ৬৯ কোটি ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ বাবদ ৪০ কোটি ডলার ছাড় হওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। এ খাতের ডলারও রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমদানি কমেছে। এসব কারণে দেশের রিজার্ভ বছর শেষে বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও বাজার থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমছে। গত দুই বছর চার মাস ধরে রিজার্ভ কমছে। গত ১৫ ডিসেম্বরে আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড় হওয়ার পর থেকে রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় হওয়ার পরও রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছিল।
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় ও আমদানি ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমছে। আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রিজার্ভের ক্ষয় কিছুটা কমানো হয়েছে। তারপরও রিজার্ভ খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এদিকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ শতকোটি ডলারের বেশি একসঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আবার কমে যাবে।
রিজার্ভ বাড়াতে ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে ভোগ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে এগুলোর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়া ও খরচ বাড়ার কারণে ডলারের সংকট প্রকট হয়েছে। এতে বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে আরও বেশি আঘাত এসেছে। শীতে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বেশি হওয়ায় এগুলোর সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম কিছুটা কমেছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা কমেছে। তবে এখনো খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটের ওপরে রয়েছে।