Hot

রিমান্ডে নেতাদের উপলব্ধি শেখ মুজিবকে আ.লীগের সম্পদ বানানো ভুল ছিল

শপথ ভঙ্গ করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী : আনিসুল * মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয় : জিয়া * আমাকে ছেড়ে দিন, দেশ ঠিক করে দেব : সালমান

‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের সম্পদ না বানিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পদ বানিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এটা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি নিজেকে এবং তার বাবাকে বেশি ফোকাস করতে গিয়ে জনগণের বিরাগভাজন হয়েছেন। সারা দেশে গ্রামে-গঞ্জে, জেলা-উপজেলায় শেখ মুজিবের এত ভাস্কর্য না বানিয়ে যদি একটি বা দুটি আন্তর্জাতিক মানের ভাস্কর্য বানাতেন তবে সেটা দেখতে ভিড় করতেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এতে শেখ মুজিবের সম্মান অনেক বাড়ত।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা এই উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন বলে ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে। 

সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ছিলেন একজন সাইলেন্ট কিলার। অসংখ্য গুম-খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কিত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম। একে একে বেরিয়ে আসছে তার অন্ধকার জীবনের নানা ঘটনা। অপরদিকে রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিবিকে জানিয়েছেন, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন সময়ে একগুঁয়েমি সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ হাসিনা তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। জিয়াউল আহসান জানান, বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল এনটিএমসি।

গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি জানায়, শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই আজ দেশের এই অবস্থা হয়েছে। তিনি কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা-নেতাদের কথা শুনতে চাইতেন না। যেভাবেই হোক তাকে ক্ষামতায় থাকতে হবে-এই মানসিকতা ছিল শেষ পর্যন্ত। পদত্যাগের আগের দিন ৪ জুলাই এক প্রতিমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘আপনি শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আমাকে বলি দিন। ছাত্রদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করুন।’ 

প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তবের পর তাকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। ডিবির জেরার মুখে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ওই সময় রাগ করে কোটা বাতিল করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, কোনো ধরনের রাগ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন না। শেখ হাসিনা সরকারের একজন মন্ত্রী হিসাবে তিনি নিজেও এর দায় এড়াতে পারেন না বলে আনিসুল হক ডিবিকে জানিয়েছেন। 

ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আসামিরা জানিয়েছেন, শেষের দিকে সেনাবাহিনীর প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ খুব ভালো কাজ করছে। আর্মিরা পারছে না কেন? সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে ডিবির প্রশ্ন ছিল- ‘আপনি কেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন ভালো ক্রিমিনাল ল’ইয়ার। এ কারণেই শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেন।’ 

এ সময় ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি একজন ক্রিমিনাল।’ আনিসুল হককে প্রশ্ন করা হয়, ‘বিভিন্ন সময়ে আপনারা বিদেশিদের উদাহরণ দিয়েছেন। কিন্তু বিদেশি রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে প্রায়ই পদত্যাগ করেন। কিন্তু আপনারা কেন বারবার পদ আঁকড়ে থেকেছেন?’ 

এ সময় চুপ থাকেন তিনি। পরে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনারা বলেছেন, দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। কিন্তু সামান্য অসুস্থ হলেই আপনারা বিদেশে চেকআপের জন্য যান কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ওটা বলার জন্য বলেছি।’ 

রিমান্ডপ্রাপ্তদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের প্রথম দুই-একদিন আমরা তেমন কিছু জিজ্ঞেস করি না। জিজ্ঞাসাবাদ করা না হলে তারা বেশি ভয় পায়। মনে করে ফের রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। তাদের যখন জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তারা আমাদের দেখে না। আমরাও তাদের দেখি না। 

জিয়াউল আহসানের মোবাইল ফোনে অনেক অপকর্মের তথ্য আছে জানিয়ে গোয়েন্দারা বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের সময় তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারিনি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তারা বলেন, এনটিএমসির মহাপরিচালক থাকাকালীন বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সফটওয়্যারে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকেও (এআই) কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু মোবাইল অপারেটররা সেটি বুঝতে পেরে বারবার আপডেট দিয়েছে। এ কারণে পুরোপুরি সফল হওয়া যায়নি। 

গ্রেফতারকৃত সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি বাম রাজনীতির মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বৈষম্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন কেন? জবাবে টুকু বলেন, আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমার বাবার ব্যবসা ছিল। আমার যা সম্পদ সবই ওই ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত। 

তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন মন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যা করার তিনিই করেছেন।’ তখন ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘সাহারার তেমন কোনো লোকজন ছিল না। তখন যা লুটপাট হয়েছে তা আপনার লোকজনই করেছে। আপনার অজান্তে কিছু হয়নি। 

ডিবির জিজ্ঞাসায় সালমান এফ রহমান বলেন, আমাকে আটকে রাখলে, আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৮০ হাজার লোক বেতন পাবে না। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেই ঋণের কিস্তি দিতে পারব না। এতে দেশেরই ক্ষতি হবে। তাই আমাক ছেড়ে দিন। আমি দেশ ঠিক করে দেব। এ সময় ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি ঠিক করলে এখানেই করুন। কোর্টে গিয়ে কথা বলুন। কিন্তু আপনাকে ছাড়া হবে না। একের পর এক মামলায় কমপক্ষে এক বছর আপনাকে রিমান্ডে থাকতে হবে।’ 

সালমান এফ রহমানের কাছে ডিবির জিজ্ঞাসা-‘গত নির্বাচনের আগেই তো আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার কথা ছিল। তখন হয়নি কেন?’ 

উত্তরে সালমান বলেন, আমরা ভারতের মাধ্যমে আমেরিকাকে ঝুঝাতে পেরেছিলাম যে, আমরা আমেরিকার পক্ষেই আছি। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তখন আমাদের এবং ভারতের কথায় আমেরিকা কনভিন্স হয়েছিল। না হলে তখনই আমাদের পতন হয়ে যেত।’

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা। এই মুহূর্তে যারা ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক এমপি সাদেক খান, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d