Bangladesh

‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতে বাধা

আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিলেন শিক্ষকরাও, আজ প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশব্যাপী ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পুলিশি বাধার মুখে পড়েছে। রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে ঘটেছে আটক ও ধস্তাধ্বস্তির ঘটনাও। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক ও আইনজীবীরা। তবে রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কিছু জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্কের মৌন মিছিলে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিল শেষে ছত্রভঙ্গ করে টেনেহিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা মৌন মিছিলে সংহতি জানিয়ে অংশ নিতে আসি। তাছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে, টেনেহিঁচড়ে দুজনকে আটক করে নিয়ে গেছে। এই বর্বরতার বিচার চাই, শিক্ষার্থীদের মুক্তি চাই। ছাত্র হত্যার বিচার চাই। স্বাধীন দেশে কথা বলা আমাদের মৌলিক অধিকার। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তখন পুলিশ বাধা দিলে কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন প্রাচীর টপকে ক্যাম্পাসে ঢোকেন স্কুল-কলেজের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মৌন মিছিলে যোগ দেন তারা। মিছিল শেষে চলে যাওয়ার আগ-মুহূর্তে হঠাৎ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেন এবং ছাড়িয়ে আনেন। পরে তাদের নিরাপদে ক্যাম্পাস ত্যাগে সহায়তা করেন। এ সময় ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হন পুলিশ। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের বিভাগীয় প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন ও  সমকাল পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি অর্পণ ধরকে মারধর ও তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, শিক্ষার্থীদের চ্যাঙদোলা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারা এরা! আমরা জবাব চাই। এটা কোন ফোর্স? এটা কি কোনো বৈধ বাহিনী? এটা কোনো বৈধ সরকারের আচরণ হতে পারে? সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল, তারা এটা করতে নিষেধও করেছে। গণতান্ত্রিক এই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলার অধিকার তো আছে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

এদিকে পুলিশের বাধায় প- হয়ে গেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশ’ কর্মসূচি। পাশাপাশি সেখান থেকে ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা জানান, সারা দেশে ছাত্রহত্যা, শিক্ষক লাঞ্ছনা, শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার, হয়রানির প্রতিবাদে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ‘ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশ’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেয় পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা আসলে ১২ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, শিক্ষার্থী হত্যা ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক সরকারি ও বেসরিকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটক থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। পরে মৌন মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান শিক্ষকরা।

সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, গর্দান হত্যার বিচার তলোয়ারের কাছে চাইতে পারি না। সরকারের যে পুলিশ বাহিনী সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, তারা এ পুলিশের বিচার করতে পারবে না। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। সরকারকে এসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিবাদ করলেই বিভিন্ন ট্যাগ (তকমা) লাগানো হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই খুলে দিতে হবে। হত্যাকান্ডের বিচার এ সরকার করবে না। কারণ, তারা নিজেরাই খুনি।

এদিকে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের সমাবেশে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এটিই শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত। রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা টিএসসিতে জমায়েত হলে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। কিছুক্ষণ অবস্থান ও স্লোগান দিয়ে জমায়েতটি শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে পূর্বঘোষিত ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোসও আমরা পালন করছি। তবে এ সময় টিএসসিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, দেশব্যাপী শিক্ষার্থী হত্যা ও হয়রানির প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকদের আয়োজিত মানববন্ধনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকরাও বাধার মুখে পড়েন। তবে বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলেন, বেলা ১১টায় মানববন্ধন করার কথা থাকলেও আমরা তা করতে পারিনি। আমাদের অনেক সহকর্মীকে কোটবাড়ি এলাকায় আটকে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোন ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না?

ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল নগরীর টাউন হল এলাকায় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশমুখে বিক্ষোভও করেন তারা। এর আগে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী সমাবেশস্থলে এলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতন্ডা হয়। এদিকে আনন্দ মোহন কলেজে যাওয়ার সড়কের মুখে মিছিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা টাউন হল চত্বরে আসেন। পরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আরও শিক্ষার্থী এসে সেখানে জড়ো হন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে ধাওয়া দিয়েছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই ধাওয়া দেয়। আমরা কি আমাদের নিহত ভাই-বোনদের স্মরণে মোমবাতিও জ্বালাতে পারব না? একজন একজন করে প্রতিটি হত্যার বিচার না হওয়া এবং চলমান সময়ে গ্রেপ্তার একজন ব্যক্তি কারাগারে থাকা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, শিক্ষার্থীসহ নিরপরাধ জনসাধারণ হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মুখে ও মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষকরা। একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলেন, তরুণ প্রজন্ম ও দেশের ভবিষ্যৎ এসব শিক্ষার্থীর ওপর যে নৃশংসতা চলছে তাতে আমরা বাকরুদ্ধ ও মর্মাহত।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলি, হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে গাইবান্ধা পৌর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পলাশপাড়া মোড় হয়ে ইউটার্ন নিয়ে গাইবান্ধা ডিসি আফিসের আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় গাইবান্ধা বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা।

পরে পুলিশ আদালত চত্বর থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিলে তারা ডিসি অফিসের সামনে থেকে এসে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক অবরোধ করে।

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে বিক্ষোভ সমাবেশ স্থগিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে আজ শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি এ ঘোষণা দেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরে নবাবগঞ্জ সেন্টু মার্কেটের সামনে গোলচত্বরে জাতীয় সংগীত, দেয়াল লিখন, রণসংগীত, কবিতা আবৃত্তি ও প্রতিবাদী নৃত্যের আয়োজন করে। একপর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মাঝে চকলেট বিতরণ করে শিক্ষার্থীরা।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গানে গানে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেছেন বগুড়ার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। পরে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দেয়াল লিখন কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor