রুপিতে লেনদেন উদ্বোধন আজ, ডলারপ্রতি বিনিময় খরচে সাশ্রয় ১ টাকা
রুপিতে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হবে, শুধু সমপরিমাণ আমদানি দায় মেটাতে ভারতীয় এই মুদ্রা ব্যবহৃত হবে
বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা রুপিতে লেনদেন করতে পারবেন। আজ মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই সুবিধা মিলবে টাকায়ও। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রুপিতে বাণিজ্যের ফলে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ কমবে, শুধু তাই নয় প্রতি ডলারের বিনিময় খরচে অন্তত এক টাকা সাশ্রয় হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে সকাল ১১টায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী ও ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে দুই দেশের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে রুপিতে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হবে, শুধু সমপরিমাণ আমদানি দায় মেটাতে ভারতীয় এ মুদ্রা খরচ করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা ব্যবসায়ী ডলার কিংবা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রুপি কিনে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবেন না। বাংলাদেশ অংশে সোনালী, ইষ্টার্ণ ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে এ বাণিজ্য হবে।
ভারতের অংশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। এই লেনদেনের জন্য এরই মধ্যে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিজ দেশের দুটি ব্যাংককে হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সোনালী ও ইষ্টার্ণ ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পেয়েছে।
এরই মধ্যে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে লেনদেন হিসাব খুলেছে সোনালী ব্যাংক ও ইষ্টার্ণ ব্যাংক। একইভাবে বাংলাদেশের এ দুটি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে ভারতীয় দুই ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারতে বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি করে বাংলাদেশ। দেশটি থেকে আমদানি হয় ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো। এখন এ দুই বিলিয়ন ডলারও যদি রুপিতে নিষ্পত্তি করা যায়, তাতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া আগামী দিনে রপ্তানি আরো বাড়াতে পারলে তখন সুযোগ বাড়বে।
ইষ্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য হলে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ কমবে, শুধু তাই নয় প্রতি ডলারের বিনিময় খরচে অন্তত এক টাকা সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোকে টাকা-রুপিতে লেনদেনের অনুমতি দিয়েছি। আমরা সেটিই উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। উভয় দেশের মধ্যে একটি বড় পরিমাণে বাণিজ্য হয়। কাজেই সেই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সুবিধাটি আমরা পারস্পরিক মুদ্রায় নিতে পারব।’
বিশ্ববাণিজ্যে একক শক্তিশালী মুদ্রা মার্কিন ডলার। করোনাকালীন ও পরবর্তী সময়েও লেনদেনে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা এখনো ভোগাচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। ডলার সংকটে কোনো কোনো দেশ বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার করে লেনদেন শুরু করেছে।