Bangladesh

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়াম পরিবহন: ঝুঁকি জেনেও দায় নিচ্ছে সরকার

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম রডের প্রথম চালান দেশে আসছে সেপ্টেম্বরে। রাশিয়া থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকা আনা হবে তেজস্ক্রিয় এই জ্বালানি। এর পর কড়া নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় সড়কপথে পাবনার রূপপুরের প্রকল্প স্থানে নেওয়া হবে। দেশে পরিবহনকালে এবং সংরক্ষণের সময় দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য বীমা করা হচ্ছে না। এই দায় নিচ্ছে সরকার। এ জন্য আর্থিক নিশ্চয়তাপত্র ইস্যু করেছে অর্থ বিভাগ।

রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ জন্য অক্টোবরেই ইউরেনিয়াম রড (ফুয়েল রড) চুল্লিতে স্থাপন করা হবে। গত মে মাসে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সনদ সই করে বাংলাদেশ। ফুয়েল রড উৎপাদন করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিভিইএল। সাইবেরিয়ান অঞ্চলের রাজধানী নভোসিভিরস্ক শহরে ফুয়েল প্রস্তুত হচ্ছে। বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু থেকে তিন বছর পর্যন্ত জ্বালানির দাম দিতে হবে না বাংলাদেশকে। দুই ইউনিটে বছরে লাগবে ৭০ থেকে ৮০ টন ইউরেনিয়াম রড।

পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক দুর্ঘটনাজনিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি আইন (বিএইআর অ্যাক্ট-২০১২) অনুসারে পারমাণবিক স্থাপনা ও পারমাণবিক জ্বালানি সম্পর্কিত দুর্ঘটনার ক্ষতির দায় সম্পূর্ণরূপে অপারেটর বা লাইসেন্সির।

বিএইআর অ্যাক্টের ৪৫ ধারা অনুসারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংক্রান্ত প্রতিটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩০ কোটি স্পেশাল ড্রয়িং রাইটসের (এসডিআর) সমান বাংলাদেশি টাকা। এসডিআর হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের এক ধরনের মুদ্রা। বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে ৩০ কোটি এসডিআর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

আইন মতে, ক্ষতিপূরণের জন্য বীমা পলিসি চালু অথবা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ জোগান নিশ্চিত করতে হবে। বিএইআর অ্যাক্টের ৪৬ ধারা অনুযায়ী অপারেটর (অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন) দাবি মেটাতে অসমর্থ হলে বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিপূরণের পাওনা নিশ্চিত করবে।

এই আর্থিক দায় নিশ্চিতে গত ২ এপ্রিল পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অশোক কুমার পাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিবকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগকে গত ৫ জুন আরেকটি চিঠি পাঠায়।

চিঠি দুটির বক্তব্য অনুসারে পরমাণু শক্তি কমিশন বলছে, বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো একটি বড় বিনিয়োগের এবং প্রযুক্তিঘন স্থাপনার বীমা করার অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানে নেই। এ ছাড়া রূপপুরের জন্য বর্তমান পর্যায়ে বীমা করা হলে প্রতিবছর প্রিমিয়াম (কিস্তি) হিসেবে যে খরচ হবে, তা প্রকল্প ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। তাই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু এবং প্রকল্পের বিদেশি ঋণের (রাশিয়া) সিংহভাগ পরিশোধের আগ পর্যন্ত পারমাণবিক দুর্ঘটনাজনিত জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও সম্পদের ক্ষতিপূরণের দায় সরকার বহন করতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই প্রকল্পের কারিগরি কমিটির অষ্টম সভায় এই সুপারিশ করা হয়। পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহন-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কমিটিতেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে অপারেটরের দায় মোচন-সংক্রান্ত ‘আর্থিক নিশ্চয়তাপত্র’ জারি করতে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ ২০ জুন ট্রেজারি এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা অনু বিভাগকে নিশ্চয়তাপত্র ইস্যুর নির্দেশ দেয়।

রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানির (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, রূপপুরের জন্য রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) নীতিমালা অনুসরণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এই জ্বালানি গ্রহণ করবে বাংলাদেশ। তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রথম ইউনিটের কমিশনিংয়ের প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী অক্টোবরের শুরুতে প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হবে।

বীমা কাভারেজের বিষয়ে রাশিয়ার কোনো আপত্তি রয়েছে কিনা– প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। রাশিয়ার দূতাবাস এবং রূপপুর প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী রোসাটমও বীমার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া, যা ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

রোসাটমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটোমসট্রয় এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor