Uncategorized

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে লাগতে পারে আরো এক বছর

২০২৪ সালের জুলাই মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ১২০০ মেগাওয়াট প্রথম ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করা কথা রয়েছে। এই সময়সীমা পূর্ণ হতে আর মাত্র ১০ মাস বাকি রয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অনেকটা বাকি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের প্রথম ১২০০ ইউনিট চালুর মাত্র ১০ মাস আগে এসে কর্মকর্তারা এখন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য আরো এক বছর বা আরো কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএইসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) উভয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে গৃহস্থালি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইনের অভাবে এটি কাজে লাগবে না।

বিএইসি-কে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, পিজিসিবি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালনের কাজ করবে।

এই প্রথম তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

পিজিসিবি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে আমরা তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি।’

তিনি যে তিনটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো- নদী ক্রসিংলাইন নির্মাণ, সাবস্টেশন স্থাপন ও ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য দুটি নদী ক্রসিং প্রয়োজন- যমুনা নদীর ওপর দিয়ে নয় কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপর দিয়ে সাত কিলোমিটার।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি পিজিসিবি এই বিষয়ে দু’টি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।’

তিনি আরো বলেন, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আসবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন ডাবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে। যা ধামরাইয়ে একটি নতুন ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড-সাবস্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি ফার্মকে ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর চুক্তি দেয়া হয়েছে এবং এর কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে।

পিজিসিবি’র আরেকজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখা। কারণ এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিদ্যুৎ, যেখানে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে সবসময় স্থিতিশীল চাহিদা থাকবে।’

তিনি বলেন, প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে পিজিসিবি এ বিষয়ে কাজ করার জন্য রাশিয়া থেকে একজন পরামর্শক নিয়োগ করে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ওই পরামর্শদাতা হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান।

তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ের সমাধান খুঁজতে বর্তমানে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল রাশিয়া সফর করার পরিকল্পনা করছে।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান আরএনপিপি থেকে সময়মতো বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালন শুরু করার বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যে প্রস্তুত হবে কিনা এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় এখনো অন্ধকারে রয়েছে।

পিজিসিবি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অফিসিয়াল তথ্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ নিশ্চিত করতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একীভূতকরণ ও নিরাপদ পরিচালনার জন্য এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য ১০ হাজার ৯৮১ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফর পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিস অব রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট’-শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।

এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং সাত কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, চারটি ৪০০ কেভি বে এক্সটেনশন এবং পাঁচটি ২৩০ কেভি বে এক্সটেনশন।

ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল ও ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ প্রোটেকশন, প্রোটেকশন সিস্টেম, ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ‘কোয়ালিটেটিভ আপগ্রেডেশন অব বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম’ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়ন করাও এই প্রকল্পের অংশ।

ওয়েবসাইটের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং বরাদ্দ দেয়া অর্থের ৪৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে- ১৫০ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা, ১৫৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ, ৯০ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া এবং ৫১ কিলোমিটার কালিয়াকৈর-আমিনবাজার সঞ্চালন লাইন নিয়ে গঠিত।

২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের সাত কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা এবং ৮১ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের অংশ রয়েছে।

পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানান, জমির ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপনের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ হলেও সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক নদী পারাপার নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d