রেকর্ড কর্মী যাওয়ার বছরে রেমিট্যান্স বাড়ল সামান্য
২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে কাজের জন্য গেছেন। ঘোষণার চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিয়ে রেমিট্যান্স কিনছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এরপরও সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় যা মাত্র ৬৩ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০২১ সালের তুলনায় গেল বছর কম এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন বছর ধরে জনশক্তি রপ্তানি বেশ চাঙ্গা। তবে সেই অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসছে না। কেননা নানা কারণে প্রবাসীদের মধ্যে অবৈধ পন্থা অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। অর্থ পাচার এবং মিথ্যা ঘোষণায় কম দর দেখিয়ে আনা পণ্যের বাকি অর্থ পরিশোধের জন্য বিদেশেই প্রবাসীর রেমিট্যান্স কিনে নিচ্ছে একটি চক্র। দেশে সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শেষ দিকে কেনার দরে শিথিলতা না দেখালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ এর চেয়ে কম থাকত। বর্তমানে রেমিট্যান্স কেনার দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারিত থাকলেও ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২২ টাকায় কিনেছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ২৯ কোটি ডলার বেশি। আর আগের মাস নভেম্বরের তুলনায় ৬ কোটি ডলার বেশি। ডিসেম্বর মাসের রেমিট্যান্স গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্স কমতে থাকায় গত অক্টোবর থেকে দরের ক্ষেত্রে শিথিলতা ছিল। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বেশি দরে রেমিট্যান্স কেনা ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে জরিমানা করার পর ওই মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৩৩ কোটি ডলারে নামে।
জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিভিন্ন দেশে গেছেন ১২ লাখ ১০ হাজারের বেশি কর্মী। শেষ মাসে ১ লাখ গেলেও তা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার। এর আগে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ৯ হাজার কর্মী বিদেশে কাজের জন্য ২০১৭ সালে। তবে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেড়েছিল করোনার মধ্যে। মূলত তখন হুন্ডি চাহিদা তলানিতে নামায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছিল বেশি।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রেমিট্যান্স ৩৩৯ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার দাঁড়ায়। সেখান থেকে সামান্য বেড়ে ২০২১ সালে আসে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এর পরের বছর ২০২২ সালে কমে ২ হাজার ১২৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সেখান থেকে সামান্য বেড়ে গত বছর ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার দেশে এসেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয়ের প্রধান অংশই এখন আসছে হুন্ডিতে। হুন্ডি চাহিদার কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আশানুরূপভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে রিজার্ভের পতন থামানো যাবে না। রিজার্ভ এভাবে কমতে থাকলে ডলারের দর বেড়ে টাকার মানে আরও কমবে। এমনিতেই এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে আশানুরূপভাবে রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারা, রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে না আনা এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশানুরূপ পর্যায়ে নিতে পারছে না বাংলাদেশ। আইএমএফ শুরুতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাখা গেছে ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনার কার্যকর কিছু উদ্যোগ নিলে ডলার সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব।