Trending

রেমিট্যান্সের রেকর্ড ১০ মাসেই ২৫ বিলিয়ন ডলার

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস ১১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা এখন পর্যন্ত কোনো একক অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এ মাইলফলক অর্জন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডির মাধ্যম দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পাশাপাশি, এখন বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে ডলারের বিনিময় হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা আর ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তারা আরও জানান, আগে ঘোষিত ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা এখনো চালু রয়েছে। ফলে হুন্ডি ও অর্থপাচার কমার পাশাপাশি বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। আর এতে ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকার পরও চাঙা ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। ওই অর্থবছরে রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রাবসীরা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হয়। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। যা গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন (২ হাজার ১৬১ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কম হলেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৩৯১ কোটি বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ছাড়া দেশের প্রধান সব শ্রমবাজার থেকেই আশঙ্কাজনক হারে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। বিশেষ করে সউদী আরব থেকে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। অথচ ২০২২ সাল থেকে সউদীসহ প্রধান শ্রমবাজারগুলোয় রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালে অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। ২০২৩ সালে জীবিকার সন্ধানে অভিবাসী হয়েছেন রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ বাংলাদেশী। ২০২৪ সালে অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন। অর্থাৎ গত তিন বছরে ৩৪ লাখের বেশি বাংলাদেশী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গেলেও সে অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়েনি। চলতি বছরেও একই হারে শ্রমিকরা অভিবাসী হচ্ছেন। চলতি বছরের চার মাসে ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী প্রবাসে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এযাবতকালে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস ১১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্র্তারা। তারা বলছেনম দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। কমেছে হুন্ডির দৌরাত্মও। আর এসব কারণে বৈধপথে বাড়ছে রেমিট্যান্স। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বেড়ে গেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতিপ্রবাহ। দেশের ইতিহাসে রেমিট্যান্স আসায় একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে মার্চ ও এপ্রিলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলমি মাসের প্রথম ১১ দিনেই ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। আর প্রতিদিন আসছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ১২৮১ কোটি টাকা। এভাবে রেমিট্যান্স এলে চলতি মাসে আবারও রেকর্ড হতে যাচ্ছে অর্থাৎ তিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে মে মাসের ১১ দিনে এ পর্যন্ত দেশে মোট ২ হাজার ৫৪৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসের ১১ দিনে রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৯৯৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। অর্থবছরের হিসাবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসার প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ওই মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার। গত এপ্রিল মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা ছিল দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে যায় ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এদিকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমে সরকারের পতনের আগে গত জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তবে সরকারের পতনের পর আর রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল সোমবার দিনশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ডলার বা ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। প্রকৃত রিজার্ভ ২১ দশমিক শূন্য ৯৭ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d