Hot

রেমিট্যান্স আসার চেয়ে বাংলাদেশ থেকে তিনগুণ বেশি অর্থ নিয়েছেন বিদেশিরা

প্রবাসীদের দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের তিনগুণের বেশি অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে বেতনভাতা বাবদ নিয়ে গেছেন বিদেশি কর্মীরা। ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে সোয়া ১১ গুণ। একই সময়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা নিজ দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সোয়া ৩৭ গুণ। 

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির চেয়ে বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ছে। শুধু ২০২৩ সালেই বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে বেতনভাতা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়েছেন ১৫ কোটি ডলার। ওই সময়ে ডলারের দাম অনুযায়ী ১৬৫০ কোটি টাকা। বৈধভাবে নেওয়ার চেয়ে আরও বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারের নজিরও রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো ও রেমিট্যান্স আসার চিত্র তুলে ধরা হয়।

সূত্র জানায়, সরকারের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে বেশি ভারতীয় নাগরিক, দ্বিতীয় অবস্থানে চীনের নাগরিক। ভারতীয় ৩৭ হাজার ৪৬৪ এবং চীনের ১১ হাজার ৪০৪ জন। বাকিরা অন্যান্য দেশের। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসাবে নিয়োজিত। এর বাইরে অবৈধভাবে আরও অনেক বিদেশি আছেন, যাদের হিসাব এর মধ্যে নেই।

আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থান করে কাজ করলে আয়কর প্রদান ও কাজের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশে কাজ করতে হলে বিদেশিদের এ-থ্রি ভিসা নিতে হয়। ২০০৬ সালে প্রণীত ভিসা নীতিমালা সংশোধন করে প্রকল্পে কাজ করলে এ-থ্রি ভিসা নেওয়ার বিধানটি তুলে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময়ের পর থেকে এ থ্রি ভিসা ছাড়াই বিদেশি কর্মীরা কাজ করতে পারছেন। এতে দেশে আসা বিদেশিদের কাজের ধরন সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য সরকারের কোনো সংস্থার কাছে নেই। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বৈধ বিদেশি কর্মীরা যেমন বাংলাদেশ থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তেমইন অবৈধ কর্মীরাও হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ট্রাস্কফোর্সের এক তদন্তে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উচ্চতর বেতনভাতা দেওয়ার নামে দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে। এমন ঘটনাও ধরা পড়েছে, বিদেশি কর্মী নেই, অথচ তার নামে বিদেশে বেতনভাতা পাঠানো হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো ও রেমিট্যান্স আসার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে ৩৭ দশমকি ২৬ গুণ। একই সময়ে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ গুণ। 

আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্সের তিনগুণের বেশি বেড়েছে বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়ার প্রবণতা। বছরভিত্তিক হিসাবেও দেখা যাচ্ছে রেমিট্যান্সের চেয়ে বেশি বাড়ছে বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা নেওয়ার পরিমাণ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ শতাংশ। একই সময়ে বিদেশি কর্মীদের দেশ থেকে বেতনভাতা নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০০ ও ২০০১ সালে বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ৪০ লাখ ডলার করে নিয়েছেন ৮০ লাখ ডলার। ২০০২ ও ২০০৬ সালে ৬০ লাখ ডলার করে ১ কোটি ২০ লাখ, ২০০৩ সালে ৭০ লাখ, ২০০৪ ও ২০০৯ সালে ৮০ লাখ করে ১ কোটি ৬০ লাখ এবং ২০০৬ ও ২০০৭ সালে ৩০ লাখ করে নিয়েছেন ৬০ লাখ ডলার। ২০০৮ সালে প্রথমবার বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা নেওয়ার প্রবণতা কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর তারা নিয়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১০ সালে আবার কিছুটা কমে ৯০ লাখ ডলার নেওয়া হয়। ২০১১ ও ২০১২ সালে নিয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখ করে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ডলারে। ২০১৪ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। ২০১৫ সালে ৩ কোটি ২০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ এবং ২০১৭ সালে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার নিয়েছেন। ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে বিদেশি কর্মীদের বেতনভাতা নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার হয়। ২০২০ সালে ৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১ সালে ১০ কোটি এবং ২০২২ সালে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার নেওয়া হয়। ২০২৩ সালে নেওয়া হয় ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা মোট জিডিপির দশমিক ০৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এবং বড় শিল্পগুলোয় বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা বেড়েছে। এ কারণে তাদের বেতনভাতা নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। বর্তমানে বিদেশি কর্মীরা যে বেতনভাতা পান, এর ৭৫ শতাংশ তিনি নিজ দেশে বা অন্য কোনো দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় পাঠাতে পারেন।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি কর্মীরা বেতনভাতা হিসাবে নিয়েছেন ১৭ কোটি ৮০ লাখ, ভুটান থেকে ৭ কোটি ৮০ লাখ, ভারত থেকে ১ হাজার ২৩৬ কোটি, নেপাল থেকে ৫ কোটি ২০ লাখ, পাকিস্তান থেকে ৩১ কোটি ৭০ লাখ এবং শ্রীলংকা থেকে ৪০ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২২ সালে মালদ্বীপ থেকে নিয়েছেন ৫৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports