Trending

রোগী এসে বসে থাকেন চিকিৎসকের দেখা নেই

২৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল ফটকে তালা মারা। কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা কেউ নেই কর্মস্থলে। তার ঠিক এক মাস পর গত বুধবার দুপুরে একই কেন্দ্রে গিয়ে ফটক খোলা পাওয়া গেলেও চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি। 
মুছাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনের একাধিক দোকানদার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রাজু বলেন, ‘ডাক্তার আসেন মাঝেমধ্যে। ১১টার পর এসে ১২টায় চলে যান। রোগী এসে বসে থাকেন। অনেকে অপেক্ষা করে চলে যান। ডাক্তার থাকলেও ভালো করে চিকিৎসা দেন না; রোগীদের গায়ের কাছে যেতে দেন না। কাটাছেঁড়ার কোনো চিকিৎসা হয় না এখানে। প্রাইভেট চেম্বারে গেলে সুন্দর ব্যবহার করেন ডাক্তাররা।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপে ১২ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিতে নেই মেডিকেল অফিসার। সরেজমিন উপজেলার মুছাপুর, মাইটভাঙ্গা, আজিমপুর, সন্তোষপুর, আমানউল্ল্যা, উড়িরচর, সারিকাইত ও কালাপানিয়া ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোয় গিয়ে পাওয়া যায়নি একজন মেডিকেল অফিসারকেও।
২৩ এপ্রিল অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সেদিন আমার ডিউটি ছিল না। উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা সমর কান্তি সাহার ডিউটি ছিল সেদিন।’

উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা সমর কান্তি সাহা বলেন, ‘আমার ডিউটি মুছাপুর ও মগধরা ইউনিয়নে। কোন দিন কোথায় নির্দিষ্ট নেই। মগধরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল-সংক্রান্ত একটা ঝামেলায় উপজেলায় ব্যস্ত ছিলাম সেদিন।’
একই দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় আজিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিও তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিচে কথা হয় ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী রফিকুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সপ্তাহে দুদিন (বৃহস্পতি ও শনিবার) সকালে এসে আবার দুপুরে চলে যান।’
আজিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পপি দে বলেন, ‘আমি দুটি ইউনিয়নের (মুছাপুর ও আজিমপুর) দায়িত্ব পালন করি। তখন ১৪ দিনের ট্রেনিংয়ে চট্টগ্রামে ছিলাম।’

পরদিন ২৪ এপ্রিল মগধরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে পাওয়া যায়নি উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা সমর কান্তি সাহা ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাছুমা জাহান তৃপ্তিকে। অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাছুমা জাহান তৃপ্তি বলেন, ‘আমি দুই দিনের ছুটিতে চট্টগ্রাম ছিলাম।’
উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা সমর কান্তি সাহা উপজেলায় সেবা সপ্তাহ চলছে বললেও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, উপজেলায় ২৪ এপ্রিল সেবা সপ্তাহর কোনো কর্মসূচি ছিল না। সারিকাইত ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত (প্রষণে) মেডিকেল অফিসার বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছি।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসারদের সুবিধা দিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরিয়ে এনেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজটি করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মানস বিশ্বাস বলেন, ‘সন্তোষপুর ইউনিয়নে ভবন সংস্কারের কাজ চলায় মেডিকেল অফিসারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরিয়ে আনা হয়েছে। আমানউল্ল্যাহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। উড়িরচর
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে আছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসারের সংকটের কারণে মাইটভাঙ্গা ও সারিকাইত ইউনিয়ন থেকে বাকি দুজন মেডিকেল অফিসারকে গাছুয়াতে সরিয়ে আনা হয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button