Trending

রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ৮৫ শতাংশ রোগী: বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ

প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে * উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কমবে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ

দেশে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৭ জনে ১ জন। বাকি ৮৫ শতাংশ রোগী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই অসংক্রামক রোগজনিত অকালমৃত্যু অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এমন বাস্তবতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস-২০২৪। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’। দিবসটি উপলেক্ষ্য উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আগামীকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যালি ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, বিনামূল্যে রক্তচাপ নির্র্ণয় ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলেন, হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে রক্তপ্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাডপ্রেশার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। দুটি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয়। যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার; আর যেটার সংখ্যা কম, সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।

প্রতিটি হৃদস্পন্দন, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও ব্লাডপ্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসাবে ধরা হয়।

যদিও বয়স-নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও’র-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের (৩০-৭৯ বছর বয়সি) অর্ধেকই (৫৫ শতাংশ পুরুষ, ৪৬ শতাংশ নারী) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এই আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। সভায় জানান হয়, বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ।

ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন-২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেছে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এসব রোগ মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ খুবই সামান্য, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব। সরকার ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট-এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. এনামুল হক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা ও ওষুধে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হলে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জাকির হোসেন জানান, ‘আমরা আশা করছি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button