Hot

রোজই শুনি মরে মরে

বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বয়স ৮০ বছর, সময় হয়ে গেছে, এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেদিন সুযোগ পাব ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেবো স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না বেশি স্যাংশন দিলে আমরাও দিয়ে দেবো

যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ওটা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। আপনাদেরও বলবো, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বেশি স্যাংশন দিলে আমরাও দিতে পারি, আমরাও দিয়ে দেব। গত সোমবার রাতে লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা (বিএনপি) এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আতেল আছে। তারা বলে, একটু কি সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশের সব থেকে দামি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো ৮০’র উপরে। সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এতো কান্নাকাটি করে লাভ নাই। সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদন্ড স্থগিত করার পর তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নেই। আমি আইন অনুযায়ী যা করতে পারি তাই করেছি। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি। তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরো সহানুভূতি আশা করে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে আগে তাকে কারাগারে যেতে হবে। সেখান থেকে আদালতে আবেদন করতে হবে। তারপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। এটাকে ইস্যু করে আন্দোলন করা কেন। মায়ের প্রতি ছেলের (তারেক রহমান) এতো দরদ থাকলে মাকে দেখতে যেতো। তাতো যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই তো এই ক্যান্টনমেন্ট। আমি এই ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেদিন সুযোগ পাবো এই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেবো। তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) ছেলে কোকো মারা গেছে। সে (খালেদা জিয়া) যখন আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের মৃত্যু দিবসে উৎসব করে, কিন্তু আমিতো মানুষ, আমিতো একজন মা। আমি ভাবলাম আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সব মানুষের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যাবো খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাবো। আমার তরফ থেকে মিলিটারি সেক্রেটারি যোগাযোগ করলো। সময় ঠিক হলো। যেই গুলশানে যেখানে ছিলো, সেখানে গেছি। আমাকে মুখের সামনে তালা মেরে দিলো, আমাকে ঢুকতে দিলো না। কতো বড় অপমান আপনারা চিন্তা করেন। আজকে অন্যকোনো প্রধানমন্ত্রী হলে কী করতো? কী করতো আপনারা চিন্তা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে বাসায় ঢুকতে দিলো না। আমি শুধু বললাম, আজকে আমাকে ঢুকতে দাও না, যখন জিয়াউর রহমান ঘরে তুলতে চায়নি প্রতিদিন আমাদের বাসায় গিয়ে কান্নাকাটি করতা। আমার বাবার বদৌলতে তুমি (খালেদা জিয়া) জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছো। না হলে বহু আগেই জিয়া ছেড়ে দিয়েছিল। জিয়ার আবার নতুন গার্লফ্রেন্ডও ছিল। তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার সংসারটা রক্ষা করে দিয়েছিলো আমার বাবা। আমাদের বাসায় গিয়ে তো মোড়া পেতে বসে থাকতো। সেখানে আমাকে ঢুকতে (গুলশানের বাসায়) না দিয়ে কতোবড় অপমান করেছো। আমি কিচ্ছু বলি নাই। আমার বলার কিছু নাই। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসার ভিতরে তাদের সব নেতা। আমি দেখতে পাচ্ছি গেটে তালা, কিছু করার নেই তাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে নিরাপত্তার একটা আইন করা হয়েছিল। সেই আইনের বলে শেখ রেহানাকে ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে ছোট্ট একটা বাড়ি দেয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই সেই বাড়িটা দখল করলো। আমাদের যারা ছিলো ওদের বের করে দিলো। বের করে দিয়ে ওটাকে পুলিশের ফাঁড়ি করা হলো। একটা প্রধানমন্ত্রী গেলো সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করতে, লাল টুকটুকে শাড়ি পরে। সে এই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করলো যখন, তখনও সেই বাড়ি রেহানার নামে রেজিস্ট্রি করা। রেহানা, আপনারা জানেন সে একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলে, পুলিশ ফাঁড়ি যখন করেছে সে বলে ঠিক আছে ওটা পুলিশকেই দিয়ে দিলাম। সে আর ওই বাড়ি নেয় নাই। তিনি আরো বলেন, ক্যান্টনমেন্টে আমি ঢুকবো, সেসময় কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। আমাকে ঢুকতে দেবে না। গেটে আটকালো। তখন আমি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। আমার পতাকাবাহী গাড়ি আটকালো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম, নেমেই ওখান থেকেই হাঁটা শুরু করলাম। আমি যখন হাঁটতে শুরু করেছি তখন অনেক লোক জমা হয়ে গেছে। চার কিলোমিটার পথ হেঁটে আমি সিএমএইচ’এ গেলাম। সিএমএইচ’র গেট বন্ধ আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমাকে ঢুকতে দেয়নি। ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় হাঁটলাম কেন! আমার সঙ্গে যারা ছিলো সবার বিরুদ্ধে মামলা দিলো। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই না এই ক্যান্টনমেন্ট, আর মেজর জিয়া। আরে এই মেজর পদোন্নতিটা তো আমার বাপেরই দেয়া ছিল। আর আমি ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। যেদিন সুযোগ পাবো বের করে দেবো। বের করে দিছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে এবার নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ সালে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বহু ধরনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে সারাদেশে তান্ডব চালিয়েছিল তথাকথিত আন্দোলনের নামে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারীসহ অনেক লোক গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছিলো এবং তারা তাদের আঘাত নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে। তিনি বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না। কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না। বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সমস্ত সংস্কার করেছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স চালু করেছে এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পটভূমিতে, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চিত্র তুলে ধরেন। বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল ও ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে এটিকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক। অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d