Bangladesh

লক্ষ্য কম প্রাপ্তি আরও কম, বিদেশি মুদ্রার সংকট বাড়ছে, বাড়ছে সরকারের ঋণ পরিশোধের চাপও।

বিদেশি মুদ্রার সংকট বাড়ছে, বাড়ছে সরকারের ঋণ পরিশোধের চাপও। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমায় রিজার্ভ ৯ বছরের সর্বনিম্ন অবস্থায়। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে সরকার যে ঋণ পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে, সেখানেও প্রাপ্তি কম। সরকার ১১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে অর্থবছরের প্রথম মাসে পেয়েছে ৪০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কম। ঋণের অর্থছাড়ের এ গতি চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে যাবে।

আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদেশি ঋণের অর্থ পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু বছর শেষে পাওয়া গেছে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম।

বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিদেশি চাপ অব্যাহত আছে। ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও সাড়া মিলছে না। সরকার রিজার্ভ বাড়াতে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে চলতি অর্থবছর বিভিন্ন প্রকল্পে নতুন করে আরও ৬২২ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সরকার এটাকে পাইপলাইনে থাকা অর্থ হিসেবে বিবেচনা করছে। ঋণের অর্থছাড় হয় চুক্তি হওয়ার মধ্য থেকে।

গত অর্থবছরের শুরুতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সরকারের পাইপলাইনে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ আটকে আছে। অর্থাৎ এ পরিমাণ অর্থ পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতার ওপর। এ মুহূর্তে সরকারি ঋণের প্রকল্পে আমলাদের মনোযোগ বেশি থাকবে, কারণ বিদেশি ঋণের প্রকল্পে নয়-ছয় করা কঠিন।

বিদেশি ঋণ কম পাওয়ায় সরকারকে উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতে হয়েছে। আর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে প্রচুর ঋণ নিতে হয়েছে। গত অর্থবছর অর্থছাড় কম হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রাও কম ধরা হয়েছে।

পাইপলাইনে থাকা অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে ঋণচুক্তি না হলেও অর্থবছরে ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে ৩২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। আগের অর্থবছরে শোধ করতে হয়েছে ২৭৪ কোটি ডলার। আর এখন পর্যন্ত বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই মাসে ঋণ ও সুদ মিলিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় তা ২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই মাসে শোধ করতে হয়েছিল ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সুদ ও আসল মিলিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।

ইআরডির জুলাই মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর সম্ভাব্য চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ৬২২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। তবে জুলাই শেষে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও জাতিসংঘের সাতটি অনুদানের ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের চুক্তি হয়েছে। তবে এ সময়ে কোনো ঋণচুক্তি হয়নি।

অর্থছাড় কমে যাওয়ার পেছনে নির্বাচনের প্রভাব আছে কি না জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনের প্রভাবটা তখন পড়বে যদি সরকারি কর্মকর্তাদের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলো থেকে অর্থছাড় পেতে হলে দুদিকেই সমান নিয়ম মানতে হয়। প্রথমত সরকারের নিয়ম, দ্বিতীয়ত যার কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন তাদের নিয়ম। দাতাদের নিয়ম মানতে গিয়ে যদি আমি যা খুশি তা করতে না পারি তবে তো মনোযোগ যাবে সহজ যেটা, সেটির দিকে।

তিনি বলেন, সরকারি অর্থায়নের প্রকল্প থেকে যেভাবে সহজে এদিক-সেদিক করা যায়, প্রকল্প ঋণের অর্থ থেকে সহজে তা করা যায় না। অর্থাৎ এখানে নয়-ছয়ের বিষয়টি একটু কঠিন। সেদিক থেকে নির্বাচনের একটা প্রভাব থাকতে পারে।

বিভিন্ন প্রকল্প বা কর্মসূচিতে অর্থায়নের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকে ইআরডি। আলোচনায় ঠিক হয় কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় বা কী ধরনের অর্থায়ন হবে। নীতিগতভাবে সম্মত হওয়ার পর উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃপক্ষ অর্থায়নের বিষয়টি অনুমোদন করে। এরপর তাদের সঙ্গে ঋণ বা অনুদান চুক্তি সই করে ইআরডি। এটিই মূলত অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি। আর চুক্তির পর ছাড় না হওয়া মোট অর্থকে পাইপলাইনে থাকা অর্থ বলে বিবেচনা করা হয়।

চুক্তি অনুসারে উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে থাকে। সেজন্য পাইপলাইনে অর্থ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ঝুলে গেলে অর্থছাড়ও কমে যায়। আবার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও অর্থছাড় করে না উন্নয়ন সহযোগীরা। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের নানা শর্তের কারণেও বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। এভাবে পাইপলাইনে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলো পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক করেছে। বিশ্বব্যাংকের কৌশলপত্রে বাংলাদেশের জন্য বাজেট আছে, সেখানে কোনো টান পড়েনি। জি-২০ সম্মেলন শেষেও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ঋণের ভলিউম দ্বিগুণ করার কথা বলেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোর অর্থ সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণাই আসবে।

পাইপলাইনে থাকা কোন সংস্থার কত : চলতি অর্থবছর পাইপলাইনে থাকা ৬২২ কোটি ডলারের মধ্যে একক সংস্থা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি)। এ সংস্থাটির সঙ্গে এ অর্থবছর ২১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। একক সংস্থা হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বছর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১৫৬ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এ বছর ঋণচুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলো অর্থছাড় কমিয়েছে। জুলাই মাসে অর্থছাড় ৪০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের মতো, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। যার প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করেছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার, এডিবির কাছে ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার, জাপান ৯২৩ কোটি ডলার, রাশিয়া ৫০৯ কোটি ডলার এবং চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসে তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৬ দশমিক ১৪ লাখ কোটি টাকা। দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ মোট জিডিপির ১৭ শতাংশ। আর সরকারের মোট ঋণের মধ্যে বৈদেশি ঋণ ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০১৪ সালে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এখন ৪২ দশমিক ১ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor