Bangladesh

লন্ডনের অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশিদের বিলাসবহুল বাড়ি, অর্থের উৎস কী?

‘হারা জীবন লন্ডন তাইক্কা সাদারণ এলাখাত ছুট একখান গর (ঘর) কিন্তা ফারলাম না, আর হেরা দেশ তাইক্কা রাজা-রানীর বাড়ির খানদাত গর কিনে খেমনে? এই টেখা পায় খই, জাননি?’ 
এমনই আফসোস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন প্রায় ৪০ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করা বৃটিশ বাংলাদেশি সিলেটি এক ভদ্রলোক।

গত এক দশক ধরে লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে বিদেশিদের বাড়ি কেনার হিড়িক পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান নেহায়েত কম নয়। বাংলাদেশি নাগরিকরা বৃটিশ বাংলাদেশি আত্মীয়স্বজন অথবা বৃটেনে ইনডেফিনিট লিভ টু রেমেইনে আছেন এমন আত্মীয়স্বজনদের ব্যবহার করে, বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে কিনছেন অভিজাত এলাকার বিলাসবহুল বাড়িগুলো। বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

 

বৃটিশ রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা সংস্থা নাইটস ফ্রাঙ্ক ও বৃটিশ সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০২০ সালে শো হাউস নামের একটি বিজনেস পত্রিকা একটি রিপোর্ট প্রচার করেছিল (২০২০)

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জাপানের চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষে। ২০২০ সালের রিপোর্ট বলেছিল- বিশ্বের মোট দশটি দেশ লন্ডনে বাড়ি কেনার শীর্ষে- ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ ও জাপান। ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ জাপানকেও হার মানিয়েছে বাংলাদেশ। 

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্থান লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার এই তালিকায় যে দেশগুলো রয়েছে- সবগুলো দেশই বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে বহুগুণ এগিয়ে,  তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লন্ডনে বাড়ি কেনা একেবারেই সহজ নয়। শুধু ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসেই বাংলাদেশিরা কিনেছিলেন ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ডের প্রপার্টি যা বাংলাদেশি কারেন্সিতে দাঁড়ায় ৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২০ সালে শো হাউসের এই রিপোর্টের পর পেরিয়ে  গেছে আরও প্রায় তিনটি বছর। এরই মধ্যে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনার হার আরও বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- বর্তমানে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনার অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে আর বাড়ির সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ২৫০টিরও উপরে। 

বৃটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে বাংলাদেশিদের বাড়ির মালিকানা ছিল মোট ১৫টি আর সেটি ২০২১ সালের পরিসংখ্যান পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১০৫টি।

বিজ্ঞাপন তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে প্রকাশিত হলে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৫০টিরও উপরে। 

যারা বিলাসবহুল এই বাড়িগুলো কিনেছেন এরা সবাই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ অফিসার ও ব্যাংকার। তবে এদের মধ্যে শুধু উচ্চপদস্থই নয় মাঝারি ক্যাটাগরির রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ অফিসার ও ব্যাংকারের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক রয়েছে। 

যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করে এই সম্পদ কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘুষ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে অবৈধ লুটপাটের পুঁজি। 
বেশির ভাগ প্রবীণরা বলছেন- সারা জীবন পরিশ্রম করে দেশে অর্থ পাঠিয়ে আমরা গ্লানি টানছি। লন্ডনে তো দূরের কথা দেশেও একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনতে পারি না আর বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে লন্ডন ও কানাডার মতো দেশে বিলাসবহুল অভিজাত এলাকাগুলোতে পট করে বাড়ি কিনে ফেলে, ছোট ছোট অফিসার, ছেঁচড়া রাজনীতি করে তারাও কিনে ফেলে। এই অর্থের উৎস কোথায়?

শুধু বাড়ি নয়, অনেকেরই অভিযোগ বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক রাজনীতিবিদ-আমলার ছেলেমেয়েরা পড়তে এসে ২ লাখ/৩ লাখ পাউন্ডের গাড়ি কিনে দৌড়াচ্ছে কিন্তু স্থানীয় ছেলে মেয়েরা দৌড়াতে পারছে না ২০ হাজার পাউন্ডের গাড়ি। তাহলে এত হাইফাই করে চলাফেরা করে কীভাবে, সেটিও তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। 
এই টাকা কোথায় পান, এর উৎস কী, এর সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চান বৃটেনে বসবাস করা বাংলাদেশিরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button