Hot

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া, ৭ বছর পর মা-ছেলের আবেগঘন পুনর্মিলন

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মায়ের দেখা পেয়ে এগিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে তারেক ও পুত্রবধূ জুবাইদা। একে অপরের দেখা পেয়ে মা-ছেলে দুজনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ছেলে তারেক রহমান। সেবার ছেলের সঙ্গে কোলাকুলিও করেছিলেন খালেদা জিয়া। ঠিক সাত বছর পর আবারও সেই হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি দেখা হয় মা-ছেলের। তবে সেই মা আর আগের মতো সুস্থ নেই। মাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে। এরপর নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপে মা-ছেলের এমন পুনর্মিলনের দৃশ্য দেখা যায়। 

উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মায়ের দেখা পেয়ে এগিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন তারেক ও পুত্রবধূ জুবাইদা। একে অপরের দেখা পেয়ে মা-ছেলে দুজনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

এ সময় তারেক রহমান তার মায়ের সফরসঙ্গীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারপর অসুস্থ মাকে নিয়ে স্ত্রীসহ লন্ডনের ক্লিনিকের উদ্দেশে রওনা হন।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার ছড়ায় তার মৃত্যুর গুজবও।

এ অবস্থায় বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য একাধিকবার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আইনি বাধার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।

মুক্তির পর থেকে নিজ বাসাতেই অবস্থান করছিলেন খালেদা জিয়া। এই সময়ে অবশ্য বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়। লন্ডনের ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর পর গতকাল মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনে ও মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে ছয় বছর আটক করে রাখা হয়েছিল। এই সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আমরা বার বার আওয়ামী লীগ সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম চিকিৎসার জন্য তাকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি।’

হিথ্রো বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ হযরত আলী খানসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মী।

হাইকমিশনারের পাশাপাশি তারাও বিএনপির খালেদা জিয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

এর আগে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের রয়্যাল ফ্যামিলির এয়ারবাস এ৩১৯ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান তিনি।

বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্সও ছিলেন।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বোর্ডের ছয় সদস্য—প্রফেসর শাহাবুদ্দিন তালুকদার, প্রফেসর এফ এম সিদ্দিক, প্রফেসর নুরুদ্দিন আহমেদ, ড. জাফর ইকবাল, প্রফেসর এ. জে. এম. জাহিদ হোসেন, এবং ড. মোহাম্মদ আল মামুনও তার সঙ্গে বিমানে ছিলেন।

ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খালেদা জিয়ার যাত্রার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ, র‌্যাব, ডিএমপি, ডিবি ও সোয়াট টিম থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনসহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

২০২১ সালের শেষ দিকে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকেই তার চিকিৎসকরা বিদেশে তার চিকিৎসার পক্ষে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আইনি বাধার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একদিন পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের আদেশে খালেদা জিয়া পুরোপুরি মুক্তি পান।

২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন তারেক রহমান।

কারাবন্দি হওয়ার আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন। তখনই শেষবার সরাসরি দেখা হয়েছিল মা-ছেলের। সেসময় তিনি তিনমাস লন্ডনে অবস্থানকালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান এবং তাদের সঙ্গে ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d