Hot

লন্ডনে সমঝোতা, ফেব্রুয়ারিতে ভোট

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক, রোজার আগে ভোটে সম্মতি, গণহত্যার বিচার ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ, সংস্কার, দুই পক্ষই বলল ফলপ্রসূ, ইউনূসকে বই-কলম উপহার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে টানা দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাঁরা জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণের বিষয়ে ঐকমত্যে আসেন। যা সমগ্র জাতির জন্য এক স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা অনেকাংশেই দূরীভূত হয়। দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে নির্বাচন ছাড়াও দেশের আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গণহত্যাসহ অপরাধীদের বিচার এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ও সংস্কার কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেওয়ার ওপরও তাঁরা অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরে সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উভয় নেতা। এসব বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি উভয় পক্ষের ঘোষিত সংক্ষিপ্ত যৌথ বিবৃতিতে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একমত পোষণ করে জানান, ‘আমরা উভয় পক্ষই বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট। এমনকি নির্বাচনের পরও আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’ বৈঠকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিগগিরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করবে।

বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজান শুরুর আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি তাঁর মা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।

এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করার প্রয়োজন হবে।

তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের সময় ও তারিখ প্রসঙ্গে কী আলোচনা হলো, জানতে চান সাংবাদিকরা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্যা কোথায়? এর জবাবে উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আমরা আশা করব, শিগগিরই তারা একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’

বৈঠকে শুধু নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে, জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটি করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্য হয়েছি, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকার যে রূপরেখার তালিকা দিয়েছে সেটি নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে? জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, এখানে না বোঝার কোনো কারণ নেই। সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব-সবাই একই কথা বলছেন। যে বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতেই সংস্কার হবে। সংস্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরও কিছু সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। কারণ তারেক রহমান যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। সুতরাং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তিনি সময়মতো নেবেন।’

এপ্রিলের ঘোষিত নির্বাচনি রূপরেখা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে আসছে কি না, জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টা সুস্পষ্ট বলা আছে। যদি সব কাজ আমরা সময়মতো করতে পারি, বিচার এবং সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয় রোজার আগেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ‘নিশ্চয়ই উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট। আমরা তো বলছি, শুধু নির্বাচনের আগেই না, নির্বাচনের পরও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আর সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণা আসত না।’

এ সময় জুলাই সনদ নিয়ে বৈঠকে কোনো আলাপ হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে এবং সংস্কারের বিষয়েও আমাকে একই উত্তর দিতে হয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার এবং জুলাই সনদ দুটোই হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি হবে।’

ড. ইউনূসকে বই ও কলম উপহার দিলেন তারেক রহমান
লন্ডনে বৈঠকে ড. ইউনূসকে তারেক রহমানের দেওয়া উপহার  -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ড. ইউনূসকে বই ও কলম উপহার দিলেন তারেক রহমান : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁকে দুটি বই ও একটি কলম উপহার দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানিয়েছেন। শফিকুল আলমের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, উপহার দেওয়া দুটি বই হলো তরুণ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের লেখা ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক এ ডিফারেন্স’ এবং মোনা আরশি ও ক্যারেন ম্যাকক্যার্থি উফ সম্পাদিত ‘ন্যাচার ম্যাটার্স’। এ ছাড়া ওয়াটারম্যান ব্র্যান্ডের এক্সপার্ট বলপয়েন্টও প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দেন তারেক রহমান।

বৈঠকের আগে যে আলাপ হলো ড. ইউনূস-তারেক রহমানের : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠকের শুরুতেই উভয়ের মাঝে এক উষ্ণ সৌজন্য কুশল বিনিময় হয়। বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডরচেস্টারের বৈঠক রুমে প্রবেশ করেন তারেক রহমান। তখনই সামনের দিকে হেঁটে এগিয়ে এসে তাঁকে স্বাগত জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে দুজনের মধ্যে হয় একটি আন্তরিক হালকা আলাপচারিতা। হোটেলে প্রবেশ করে তারেক রহমান এগিয়ে এসে প্রথমেই বলেন, ‘কেমন আছেন?’ ড. ইউনূস উত্তরে হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ, ভালো আছি।’ এরপর তিনি বলেন, ‘খুব ভালো লাগল।’ তারেক রহমানও সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমারও ভীষণ ভালো লাগছে, আই ফিল অনার্ড। আপনার শরীর ভালো আছে?’ উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘চলছে, টেনেটুনে চলছে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘আম্মা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন।’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘ওনাকেও আমার সালাম জানাবেন।’

এ সময় লন্ডনের আবহাওয়া নিয়ে কথা বলেন তাঁরা। ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকের আবহাওয়াটা খুব ভালো। একটানা এরকম পাওয়াটা দুর্লভ।’ তারেক রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, দুপুর নাগাদ সম্ভবত আরেকটু গরম পড়বে।’ ড. ইউনূস বলেন, ‘এনজয় করেছি। সামনে পার্ক আছে।’ তারেক রহমান জানতে চান, ‘আপনি গিয়েছিলেন?’ ড. ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ, গিয়েছিলাম।’ তারেক রহমান বলেন, ‘একটা জিনিস এখানে খুব ভালো, হাঁটার অনেক জায়গা আছে।’ এরপর আরও কিছুক্ষণ সবার সামনে হালকা আলাপচারিতা হয় দুজনের মধ্যে। এর মধ্যে শেষ হয় বৈঠকের ফটোশেসন। তারপরই শুরু হয় দুই শীর্ষনেতার একান্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার, সংস্কার কার্যক্রম, জুলাই সনদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি, ভূমিকা, কার্যক্রমসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়েই দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা একমত পোষণ করে হাস্যোজ্জ্বল অবয়বে সন্তুষ্টচিত্তে বেরিয়ে আসেন আলোচনার কক্ষ থেকে।

ভোর ৬টা থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারের সামনে ছিল অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীর অবস্থান। তাঁদের চোখমুখে ছিল একটি সফল বৈঠকের দৃঢ় প্রত্যাশা। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫০ মিনিট। ঝলমলে রোদের ভিতরে ধীরগতিতে সেন্ট্রাল লন্ডনের পার্ক লেনের ডরচেস্টার হোটেল চত্বরে প্রবেশ করে তারেক রহমানকে বহনকারী গাড়িটি। চালকের আসনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ইউরোপ সমন্বয়কারী কামাল উদ্দিন। পাশে তারেক রহমান। পেছনের সিটে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুর রহমান সানি। মুহুর্মুহু করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের গাড়ি এসে দাঁড়ায় হোটেলের সামনে। হাত নাড়ছিলেন নেতাকর্মীদের দিকে। তারেক রহমান নেতাকর্মীদের প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়ে গাড়ি থেকে নামেন। হোটেলের লবির দিকে না গিয়ে ফিরে এলেন আবারও রাস্তার দিকে। রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দিকে আবারও হাত নেড়ে তারপর ভিতরে গেলেন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও তার জবাব দেন স্লোগানে স্লোগানে। হোটেলের প্রবেশমুখে সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসে বিএনপির কান্ডারি তারেক রহমান এবং তাঁর সঙ্গী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অভ্যর্থনা জানান। সভাকক্ষের ভিতরে তারেক রহমানকে নিজের আসন থেকে উঠে এসে অভ্যর্থনা জানান স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথমে কুশলবিনিময়, তারপর বৈঠকের সঙ্গী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ইউরোপ সমন্বয়কারী কামাল উদ্দিন, তারেক রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুর রহমান সানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় করানো হয়। এরপরই শুরু হয় দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির মধ্যে রুদ্ধদ্বার একান্ত বৈঠক। প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয় সেই বৈঠক। তারেক রহমান বের হয়ে আসেন লন্ডন সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে। হাস্যোজ্জ্বল তারেক রহমান হাত নাড়লেন বাইরে উপস্থিত সবার দিকে! তাঁর হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির পক্ষ থেকে। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় উভয় পক্ষ থেকে দেওয়া একটি যৌথ (লিখিত) বিবৃতি পাঠ করে শোনান উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা : যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা তিনি আগেই দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। তিনি গণহত্যার বিচার ও সংস্কারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের ওপর জোর দেন। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান।

সংস্কার ও জুলাই সনদ : এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কার ও জুলাই সনদ দুটোই ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, যেখানে ঐকমত্য হবে, সেখানে সিদ্ধান্ত হবে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে-এটা স্পষ্ট। তিনি আরও বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে কিছু হবে, কিছু পরেও হবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে : তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘এটি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তিনি যখন ইচ্ছা ফিরতে পারেন। আলোচনার এমন কোনো প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করিনি।’

বিচার ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করতে চান, এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার ও বিচার-দুই ক্ষেত্রেই নির্বাচনের আগে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হবে বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

এনসিপি ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার : নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির নির্বাচন কমিশন সংস্কার না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘এটি আলোচনার প্রসঙ্গ নয়।’ খলিলুর রহমান যোগ করেন, ‘প্রত্যেক দলের নিজস্ব মতামত আছে, তবে আমরা সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই।’

শেষে একসঙ্গে সন্তুষ্টির ঘোষণা : আপনারা কি এই বৈঠকে সন্তুষ্ট? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একসঙ্গে উত্তর দেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ আমীর খসরু আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরও আমরা একসঙ্গে কাজ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ব।’ খলিলুর রহমানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ছিল, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার প্রশ্নই ওঠে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles