Trending

লাগামহীন উৎপাদন খরচ, ডলার দর ও সুদহারে চাপে ভোক্তা-ব্যবসায়ীরা

ডলারের ভয়াবহ সংকটের মধ্যে বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি যোগ হয়েছে। ফলে গত এক মাসের ব্যবধানে পণ্যের উৎপাদন খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সব ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলার দর ১১৭ টাকায় নির্ধারণ হলেও ১২৪ টাকার নিচে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে সব ধরনের পণ্য কিনতে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী ১০০ কোটি টাকা, কেউ আবার ৪০০-৫০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন। এসব হিসাব ব্যাংকগুলোর কাছে আছে। ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এমনকি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) কমিয়ে তিন বিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই সংকটের মধ্যে সুদের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক ভাবে। ঋণের সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে। বাড়তি এ ব্যয়ের চাপ পড়ছে ব্যবসায়ী-ভোক্তা সবার ওপর। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি উসকে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বিনিময় হারের কারণে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিপুল লোকসান হয়েছে। 

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে গত ৮ মে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজার নির্ভর করে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে এই সীমা তুলে দেওয়ায় সুদ হার ৯ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে ঠেকে। বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর গত এক সপ্তাহে অনেক ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশেও উন্নীত করেছে। এরপর ফের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ নীতি চালু করে। এতে এক দিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন করে ১১৭ টাকায় ডলার দর নির্ধারণ করা হয়। টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানিনির্ভর প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

একই সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসার ব্যয়। ডলার সংকটের সঙ্গে বাড়তি ঋণ সুদহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বাড়ছে ব্যাংক খাতে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি সুদের চাপে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। যার কারণে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ অবস্থায় ঋণের সুদহার দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খেলাপি ঋণের চাপ আরও বহু গুণ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।

গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ঋণের সুদহার ব্যাংক আর গ্রাহকের সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়লে দিন শেষে এর প্রভাব পণ্য ও ভোক্তার ওপর পড়বে। আমরা এ পরিস্থিতির সমাধান চাই। তিনি বলেন, ডলারের বিনিময় হার ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা চেয়েছি, এটা যেন আর পরিবর্তন না করা হয়। গভর্নর বলেছেন ১১৭ টাকার ১ টাকা কম বা বেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে ডলারের দাম। ব্যাংকগুলোকে একই রেটে এলসি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা এই রেটে এলসি খোলার নিশ্চয়তা চেয়েছেন গভর্নরের কাছে। তিনি আরও বলেন, সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না বলে জানিয়েছেন গভর্নর। এটা প্রায় নির্ধারিত সুদহার।

যাতে ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ভবিষ্যতে। তিনি বলেন, আমরা একক গ্রাহক ঋণ সীমা ১৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ, উৎপাদন খাত সুরক্ষা দিতে স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদিতে রূপান্তর, নিয়মিত এলসি খোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, সামগ্রিক ব্যাংক খাত বিপদে আছে। সুদহার, বিনিময় হার, বিনিময় হারের কারণে লোকসান নিয়ে ব্যবাসীদের উদ্বেগ গভর্নরকে জানিয়েছি। আমরা বলেছি সুদহার যেন আর না বাড়ে। সুদহার বাড়লে খেলাপি ঋণ বাড়বে। একক গ্রহীতার ঋণসীমা না বাড়লেও খেলাপি ঋণ বাড়বে। কারণ এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা যুক্ত। বিনিময় হারের কারণে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিপুল লোকসান হয়েছে। এটা থেকে বের হওয়ার জন্য একটি রোডম্যাপ থাকতে হবে। সুদহার যে ১৪ শতাংশের ওপরে না যায়, সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি করবে বলে তারা আশ্বস্ত করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d