Hot

লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে বিপন্ন জনজীবন

না খেয়ে, একবেলা খেয়ে অনেকের দিন যাচ্ছে চাল-ডাল, ডিম, চিনি, মাছ-গোশত, কাঁচামরিচ, শাক-সবজিসহ সব পণ্যের দাম কেবল বাড়ছে

নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চাল-ডাল, ডিম, আটা, চিনি ভোজ্যতেল, মাছ-গোশত, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ, শাক-সবজিসহ এমন কোন পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বলা যায় যে বাজারের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণই নেই। সব পণ্যের দামই এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সংসার চালাতে এখন দিশেহারা অবস্থা। খেয়ে না খেয়ে, একবেলা খেয়ে অনেকের দিন যাচ্ছে। ধার-দেনা করেও অনেকে সংসার চালাতে পারছেন না। অনেকে পণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যিনি আধা কেজি চিনি কিনতেন এখন তিনি কিনছেন ২৫০ গ্রাম। মাছ-গোশত অনেকে কিনতে পারছেন না। একটা ডিম রান্না করে বাচ্চাকে খেতে দেবেন সে অবস্থাও নেই। চলতি মাসে বাংলাদেশের খাদ্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে দরিদ্র মানুষের খাদ্য কেনার ব্যয় বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। এসব দরিদ্র মানুষের আয় তেমন একটা বাড়েনি। ফলে অনেককেই এখন খাবার কম কিনতে হয়। দুবেলার জায়গা এখন এক বেলা খেয়ে দিন পার করতে হয়।

নিম্ন আয়ের অনেকে ঘর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে পারছিলেন না। এ জন্য পরিবারকে অর্থাৎ বউ ছেলে, মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পড়াতে পারছেন না। কারো কারো ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা ছেড়ে সংসারে সহযোগিতার জন্য গার্মেন্টসে অথবা বিভিন্ন কল-কারখানায় কাজ করছে। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন এখন বিপন্ন বলা চলে।

বাজারে চালের দাম সর্বনিম্ন ৬০ টাকা কেজি আর সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। বয়লার মুরগির দামও এখন ২৩০ টাকা কেজি। গরিবের মাছ বলে খ্যাত তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছও এখন ২২০ টাকা কেজি। গরু গোশত আবার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি ১৪০ টাকা আর প্যাকেটজাত ১৪৫ থেকে ১৫০ টকা। আদা ২২০ টাকা, রসুন ২১০ থেকে ২২০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের সবজির দামই গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে বেড়েছে। প্রতিকেজি বেগুন মান ভেদে ৬০ টাকা থেকে ৯০ টাকা কেজি, শসা ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৯০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা ও কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে দাম চড়েছে কাঁচা মরিচের। খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা ও চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়াও এখন কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার কেজিও ৫০ টাকা। আর বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা ও পালংশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে সংসার চালাতে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা।

রাজধানীর শান্তিনগরে একটি অফিসে নৈশ প্রহরীর কাজ করেন আমিনুর রহমান। মাসে বেতন পান ১৬ হাজার টাকা। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে তিনি আর সংসার চালাতে পারছিলেন না। গত তিন মাসে তার ৬ হাজার টাকা দোকান বাকি পড়েছে। দোকানদারও এখন আর বাকি দেয় না। ফলে বাধ্য হয়ে গত মাসে পরিবারকে শেরপুর গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটা ক্লাস নাইনে পড়ত। এখন আর সে স্কুলে যায় না। এলাকার একটি মাছের খামারে কাজ করছে। আমিনুর বলেন, ১৬ হাজার টাকা বেতন পাইয়া ঘর ভাড়াই দেওন লাগে ১১ হাজার টেহা। বাকি ৫ হাজারে ৫ জনের পরিবারের কি কইরা চলে কইনচ্ছেন? প্রতি মাসেই দুই তিন হাজার টেহা দোকান বাকি পড়ে। তার পরও পোলা-মাইয়ার দিকে চাইয়া কষ্ট কইরা অতদিন আছিলাম। কিন্তু অহন আর পারতাছি না। তাই গেল মাসে পরিবারকে বাড়িত পাডাইয়া দিছি।

রামপুরায় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন লিলি আক্তার। থাকেন পূর্ব রামপুরায়। তার সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে প্রথমে তিনি বেশ রেগে যান। তিনি বেশ রাগের সাথে বলেন, আপনেরা সাংবাদিকরা টিভিতে দেখাইয়া আর পত্রিকায় লেখালেখি কইরা জিনিস পত্রের দাম বাড়াইয়া দেন। এভাবে ক্ষোভের সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে। কান্না ভেজা কন্ঠে বলে, আইজ ছয় মাস ধইরা আমি আমার বাচ্চার দুধ কিনতে পারিনা। শুধুমাত্র বুকের দুধ খাইয়া ১ বছরের বাচ্চাটা শুকাইয়া কাড অইয়া গেছে। গার্মেন্টেসে কাজ করি সেই সকালে বাচ্চাডারে বুকের দুধ খাওয়াইয়া রাইখ্যা যাই। এরপর দুপুরে লাঞ্চের সময় আইস্যা খাওয়াই। এই দুধের বাচ্চাডারে একটু দুধ কিইন্যা খাওয়াইতে পারি না।

মৌচাক মার্কেটের এক দোকানের কর্মচারী হাফিজুর রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজি এমন কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই যার দাম বাড়েনি। আলু ৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। ডিম ৫৫ টাকা হালি। গরু গোশত ৮০০ টাকা কেজি। বয়লার মুরগির দাম ২৩০ টাকা কেজি। সবকিছুর দাম কেবল বাড়ছেই। আমাদের দোকানে আগের চেয়ে বেচাকেনা অনেক কম। দোকানে আগে কর্মচারী ছিলাম তিন জন এখন আছি ২ জন। জিনিস পত্রের দাম লাফিয়ে বাড়লেও আমাদের বেতন বাড়ছে না। যা পাই তা দিয়ে বাসাভাড়া, বাজার খরচ, দোকান বাকি দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মাস চলা খুবই কষ্টকর।

উত্তরা থেকে মাসুদ পারভেজ জানান, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম। একদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ অন্যদিকে চাল, ডাল, আটাসহ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। গতকাল সপ্তাহের শুরুতে উত্তরার বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ, টমেটু, লাউসহ হরেক প্রকার সবজির দাম বেড়েছে। উত্তরা বিডিআর কাঁচা বাজার মার্কেটের দোকানদার আউয়াল জানায়, গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ছিলো ১২০ টাকা কেজি আর এখন তারা বিক্রি করছে ১৮০ টাকা। টমেটো ছিলো ৫০ টাকা কেজি এখন ৭০ টাকা করে বিক্রি করছে। ডিম দোকানদার আল আমিন জানান, গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করেছে এখন ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি করছেন। আদা পেঁয়াজ আলুর দাম না বাড়লেও রসুনের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ টাকা।

প্রতিদিন এ ভাবে কাঁচামাল ও বিভিন্ন সবজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানদারগণ বলেন মালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। ডিম দোকানদারগণ বলেন, প্রচণ্ড গরমে লাখ লাখ ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গিয়ে এমনটা হয়েছে। উত্তরখান ফালুর কাঁচা বাজার নামে পরিচিত মার্কেটের মুরগি দোকানদার ওসমান বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত বয়লার মুরগির দাম উঠানামা করছে। গত সপ্তাহে তারা বয়লার মুরগি প্রতিকেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। কিন্তু এখন কেনা মূল্য বেশি হওয়ায় ২২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও মুরগি দোকানদার সোহাগ এবং কাশেম একই কথা বলেন। সবজি দোকানদার মামুন বলেন প্রতিদিন কোন না কোন সবজির দাম বেশি দিয়ে কিনতে হয়। যেদিন কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়, সেই দিন কাস্টমারের সাথে আমাদের দামদর নিয়ে ঝগড়া হয়। এ সময় বাজারে আসা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বলেন মাস শেষে যেই টাকা বেতন পাই বাসা ভাড়া দেওয়ার পর ভালো কিছু কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না।

দীর্ঘদিন এলাকায় গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিমাসে বাড়তি ঝামেলা মাথার উপর চাপে, কখনো কখনো সিলিন্ডার গ্যাস ছাড়া বাসার চুলা জ্বলে না। তারা আরো বলেন, বাসা ভাড়া ও স্কুলের বেতন বাড়ার কারণে মানবতার জীবনযাপন করছে তারা। ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা মধ্যবিত্তরা মাইনক্কা চিপায় আছি। যেভাবে প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে এসব বিষয় মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কি আর করার আছে। এসময় তিনি আরো বলেন, এখন আর কোন জিনিস এক কেজি কিনার চিন্তাও করে না। দাম বেশি হওয়ায় মাঝে মাঝে এক পোয়া কিনাও শিখে গেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে যুদ্ধ করে চলছে তাদের সংসার জীবন। উত্তরার কয়েকটি মসলার দোকানে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে এলাচের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৭০০ টাকা, জিরা কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫০০ টাকা। এ বিষয়ে উত্তরখান রোজা সুপার মার্কেটের মুদি দোকানদার মিন্টু বলেন, বর্তমানে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে যেভাবে জিরা, এলাচসহ মসলার দাম বেড়ে চলছে প্রতিদিন কাস্টমারের সাথে দাম দর নিয়ে ঝগড়া করে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে উঠেছে।

সাভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, সাভারের বাজারগুলোতে দফায় দফায় বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কিন্তু দাম বাড়লেও আয় বাড়ছে না সাধারণ মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি চাপে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। রোজকার চাহিদা পূরণে তাদের গুনতে হচ্ছে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম। অধিক দামে পণ্য কেনার ক্ষমতা বেশির ভাগ মানুষেরই নেই। তাই বাধ্য হয়ে অনেককেই কমাতে হচ্ছে দৈনন্দিন বাজার খরচ। গতকাল বিকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশা চালক আল আমিনের সাথে। তিনি বলেন, আয় রোজগার তেমন একটা নেই। এরমধ্যে সব জিনিসের দাম বাড়ছেই। যে কারণে পোলাপানরেও ভালো খাবার দিতে পারি না।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি পিষ্ট হচ্ছেন মেস বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাও। পোশাক শ্রমিক আয়শা আক্তার বলেন, নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজি এমন কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই যার দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না। আলু ৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। ডিম সাদা ৪৮টাকা হালি, লাল ৫০টাকা হালি কিনতে হচ্ছে। চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু আমাদের বেতন বাড়ছে না। যা পাই তা দিয়ে বাসাভাড়া, বাজার খরচ, দোকান বাকি দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মাস চলতে খুবই কষ্ট হয়। খেটে খাওয়া অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ। আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার পোশাক শ্রমিক লাইলি বেগম বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনবেলা ঠিকমতো খাবারও মুখে জুটছে না। নিত্যপণ্যের সাথে বাড়ছে সিলিন্ডার গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও। এক হালি ডিম কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা দিয়ে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামতো লাগামহীন। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। এভাবে জীবন আর চলছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d