Uncategorized

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, হিমশিম মানুষ

https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-06%2F5488c081-c69b-4c19-bc8f-ff5df59c6cb3%2F2.PNG?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0

আমনের ভালো ফলন হবে। মাঠে ফসল হলুদ হয়ে আছে, যা দেখতে চমৎকার লাগছে’—নতুন ধান উঠলে দাম কমার আশার কথা জানিয়ে গত নভেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। 

আমন মৌসুম তো শেষ হয়েছেই, বোরোর চালেও বাজার এখন ভরা। কিন্তু চালের দাম আর কমছে না। বরং গত এক মাসে মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা বেড়েছে।

চালের মতো বাজারে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম এখন স্থিতিশীল, তবে উচ্চমূল্যে। দু-একটি পণ্যের দাম কমছে। তবে সেটা আগের জায়গার কাছাকাছিতেও ফিরছে না। দু-একটি পণ্যের দাম এখনো বাড়ছে। সব মিলিয়ে মানুষের খরচ কমছে না, স্বস্তি ফিরছে না। 

টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

যেমন ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা ছিল। গত জানুয়ারিতে তা ছিল ৪৬ থেকে ৫২ টাকা। এখন তা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে সরু চালের দামও।

রাজধানীর উত্তরা আজমপুর বাজারে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি একটি বিমা কোম্পানির একজন ইউনিট ব্যবস্থাপক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার চেয়েও পরিস্থিতি এখন খারাপ। বরং বলা যায় দেয়ালে পিঠ পিষে গেছে। তিনি বলেন, তাঁর বেতন কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। এ কারণে তিন সদস্যের পরিবার চালাতে তাঁকে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বাজারদর: ২০২০ বনাম ২০২৩

বাজার পরিস্থিতি ও প্রবণতা বুঝতে করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উল্লিখিত দর, একই সংস্থার গত ১ জানুয়ারির দর এবং গতকালের দর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল প্রথম আলোর চারজন প্রতিবেদক মিরপুর-১, উত্তরা আজমপুর, মহাখালী, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, রামপুরা, শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, পশ্চিম আগারগাঁও ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখেছেন।

এসব বাজারে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দুই মাসে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমেছে। যেমন ১১ জুন সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৫ টাকা কমতে দেখা গেছে। ওদিকে চিনির দাম বেড়ে গেছে।

এই সামান্য দাম কমা-বাড়ায় সার্বিকভাবে মানুষের ব্যয়ের ওপর ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ছে না। কারণ করোনা, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে দাম অনেক কম ছিল। ২০২০ সালের শুরুতে এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এখন তা ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। চিনি, আটা, মসুর ডাল, মাছ, ডিম, মাংসের ক্ষেত্রে চিত্রটি মোটামুটি একই। বেড়েছে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টিস্যুসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দামও।

নিয়মিত ক্রেতাদের একাংশ এখন সুপারশপে বাজার করে। একাংশ ব্যয় কুলাতে না পেরে পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে। 

জাকির হোসেন, দোকানমালিক, মিরপুর-১ 

দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে ২০২০ সালের প্রথম ভাগ থেকে। ওই বছর মার্চে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। তখন মূল্যবৃদ্ধির কারণ ছিল আতঙ্কের কেনাকাটা। ২০২০ ও ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি তবু লাগামছাড়া হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে।

২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু বছরখানেকের মধ্যে দেশে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৩ টাকা (আমদানিতে)। আর আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, প্রাণিখাদ্য—সবকিছুর দাম বেড়েছে, যা বাড়িয়ে দিয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেই সব পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে কমানো হয়েছে। সেই হ্রাসকৃত মূল্যে এখন সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য শুধু বিশ্ববাজারকে দায়ী করাটা ঠিক নয়। কারণ বিশ্ববাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম কমেছে। এখনকার মূল্যস্ফীতির কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার-সংকট এবং দেশে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এ মাসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম যে হারে কমেছে, সে হারে বাংলাদেশে কমেনি।

মূল্যস্ফীতির দিক দিয়ে সবচেয়ে সংকটের সময়ে সরকার জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়িয়েছে বারবার, যা সবকিছুর উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বিক্রি কমেছে। মুনাফাও কমেছে। যেমন মিরপুর-১ নম্বর শাহ আলী বাজারের মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোর-১-এর মালিক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত ক্রেতাদের একাংশ এখন সুপারশপে বাজার করে। ক্রেতাদের একাংশ ব্যয় কুলাতে না পেরে পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা মেসে থাকছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।

নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, সন্তানের জন্য এক কৌটা গুঁড়া দুধ কিনতাম ১ হাজার ৭৫০ টাকায়। দাম বাড়তে বাড়তে তা ৩ হাজার ৩০০ টাকা হয়েছে।

বোঝেন না কেমন আছি

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর বাজারে গতকাল ডিম কিনতে গিয়েছিলেন গৃহিণী শাহীনূর। তিনি দুটি ফাটা ডিম কিনলেন ২০ টাকায়। এতে তাঁর সাশ্রয় হয়েছে তিন টাকা।

শাহীনূর বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্যের দুপুরের খাবারের তরকারি হবে এই দুটি ডিমভাজি। তিনি বলেন, করোনার সময় তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। সম্প্রতি এক ছেলেকে কাজে দিয়েছেন। দুই মেয়ে বাসায় থাকে।

‘দুইটা ডিম দিয়া পাঁচজন খামু। বোঝেন না কেমন আছি!’ বলতে বলতে চলে গেলেন শাহীনূর।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d