Trending

লুটপাটে দুর্বল ব্যাংক সবল করার উদ্যোগ: তারল্যের জোগান বাড়াতে বিকল্প পথের সন্ধান

লুটপাটের কারণে দুর্বল হওয়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়ে সবল করতে বিকল্প পথের সন্ধান করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে আমানত সংগ্রহ করা। এ লক্ষ্যে কয়েকটি ব্যাংক চড়া সুদে আমানত গ্রহণ করছে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ নিয়েও চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে আমানত বাড়ানো, ব্যাংকগুলো করপোরেট গ্রাহক ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি আমানত সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। বিশেষ গ্যারান্টিতে বন্ড ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করারও জোর তৎপরতা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া বকেয়া বা খেলাপি ঋণ আদায়েও জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, কোনো ব্যাংক বন্ধ করা হবে না। সংস্কার করে ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেমন নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তেমনই ব্যাংকগুলোকেও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোয় পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক সংকটে আছে। এগুলোকে সহায়তা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে ব্যাপক লুটপাট করায় দুর্বল হয়ে পড়ে নয়টি বেসরকারি ব্যাংক। সরকার পতনের আগে এসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হতো। তা দিয়ে ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করত। ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাড়িয়ে বা বিশেষ ছাড়ে সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোয় সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে ৫ ব্যাংককে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এতে সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশ। ব্যাংকগুলো নিজস্ব উদ্যোগে অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে গেলে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দাবি করছে। এত সুদ দিয়ে আমানত নিয়ে ব্যাংক চালানো কঠিন বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এ কারণে অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো তারল্যের জোগান বাড়াতে বিকল্প পথের সন্ধান করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিকে যেসব অর্থ দেওয়ার কথা, সেগুলো এখনো সব ব্যাংক পায়নি। বাকি টাকা দ্রুত ছাড় করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ধারদাতা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

তারল্য সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আমানত সংগ্রহ করার ওপর জোর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এর আলোকে ইতোমধ্যে চড়া সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। চালু করেছে আকর্ষণীয় মুনাফার সঞ্চয় প্রকল্প। আল-আরাফাহ্ ব্যাংক ডাবল বেনিফিট ডিপোজিট স্কিম চালু করেছে। এতে সাড়ে ৫ বছরে জমা টাকা দ্বিগুণ হচ্ছে। মুনাফার হার ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। শরিয়াভিত্তিক সঞ্চয়ী প্রকল্পে লাখ টাকা জমায় প্রতিমাসে মুনাফা দিচ্ছে এক হাজার টাকা। ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাবে মুনাফা দিচ্ছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংক ৫ বছর ৪ মাসে দ্বিগুণ মুনাফা দিচ্ছে। লাখ টাকা আমানতে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা মুনাফা দিচ্ছে। এনআরবি ব্যাংক আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪৬, মেঘনা ব্যাংক সাড়ে ১১, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক সাড়ে ১১, এনআরবিসি ব্যাংক ১০ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ১১ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে। বেসিক ব্যাংক ১০ দশমিক ৬৭ এবং ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ১০ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে।

এভাবে প্রায় সব দুর্বল ব্যাংক বাড়তি মুনাফা দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে আমানত সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। ব্যাংকাররা আমানত সংগ্রহে করপোরেট কোম্পানি ও গ্রাহকদের কাছেও যাচ্ছেন।

ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল্-আরাফাহ ব্যাংক ঋণ আদায়ে জোর দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা ইতোমধ্যে বেশকিছু সাফল্য পেয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংক যুক্তরাজ্যের আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যান থেকে ২০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। ১০ বছর মেয়াদে ৫ শতাংশে সুদে এ ঋণ নিতে ব্যাংকটি জেপি মরগ্যানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সব ব্যাংকই প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এতে ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। যে কারণে ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের কিছু বাড়তি সুবিধাও দিচ্ছে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টে বাড়তি সুদ দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আমানত নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় সঞ্চয়ী প্রকল্প চালু করেছে। ফলে এসব হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা হচ্ছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোয় তারল্যের জোগান বাড়ছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর জরুরি ধারের অন্যতম একটি ক্ষেত্র জচ্ছে কলমানি মার্কেট। এখানে সর্বোচ্চ সুদের হার বেড়ে ১১ শতাংশে উঠেছে। স্বল্পমেয়াদি ধারের সুদহার বেড়ে ১৩ শতাংশে উঠেছে। এছাড়া কলমানি মার্কেট থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলো কোনো ধারই পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর আহ্বান-কলমানি মার্কেট থেকে যেন সবল ব্যাংকগুলো ধার দেয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করা জরুরি। কিন্তু এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। কারণ, এটি করলে বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে উল্লিখিত উদ্যোগে ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোয় তারল্য বাড়তে শুরু করেছে। কোনো কোনো ব্যাংকে গ্রাহকদের তুলে নেওয়া টাকাও ফিরছে। বাড়ছে আমানত প্রবাহও। তবে যে হারে বাড়ছে, সে তুলনায় আমানত তোলা হচ্ছে বেশি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor