Hot

লুটেরাদের নির্লজ্জ জীবন

বাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, যার এক কান কাটা সে লজ্জায় কাটা কান ঢেকে হাঁটে। কিন্তু যার দুই কান কাটা সে কোনো কানই ঢাকে না। তার লজ্জাশরমের বালাই থাকে না। পতিত আওয়ামী লীগের কিছু পলাতক, কিছু লুটেরাকে এখন মনে হচ্ছে দুই কান কাটা। তাদের লজ্জা বলে কিছু নেই। তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। অতীত বেহায়াপনার জন্য এরা মোটেও অনুতপ্ত নন। ৫ আগস্টে গণ অভ্যুত্থানের পর এরা প্রায় সবাই বিদেশে পালিয়ে গেছে। বিদেশে পালিয়ে এরা কোনো কষ্টের জীবনে নেই। বরং ১৫ বছর ধরে এরা যে লুটতন্ত্র কায়েম করেছিল, সেই লুটের টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিলাসী জীবনের প্রতিযোগিতাও হচ্ছে। লাজ লজ্জাহীনভাবে তারা উৎসব করছে। এসব পলাতক নেতা শুধু রাজনীতির জন্যই কলঙ্ক নয়, দেশের জন্য ভয়ংকর বিপজ্জনক। এরাই বাংলাদেশকে ধ্বংসের প্রান্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু বানিয়েছেন এই বেহায়া দুর্বৃত্তরা। এরা এখন আইন বিচারের ঊর্ধ্বে। বিদেশে নিরাপদ জীবনে এরা দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লন্ডনে আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে পতিত আওয়ামী লীগের চার মন্ত্রীকে দেখা গেল। ভাবলেসহীন এই লুটেরা বিদেশে যেন অবকাশযাপন করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে এখন সমালোচনার ঝড়। এই ভিডিও তাদের প্রবাস জীবনের একটি অংশ মাত্র। আওয়ামী লীগের লুটেরাদের বিদেশে বিত্তের বৈভব আরও বিশাল ব্যাপ্তির। ১৫ বছর আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এ সময়ে সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ কিছু মন্ত্রী, এমপি সর্বক্ষণ ব্যস্ত ছিল লুটপাটে। এই লুটের টাকা তারা দেশে কোনো কাজে লাগাননি। দেশে বিনিয়োগও করেননি। সব টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছেন। অনুসন্ধানে এসব পলাতক লুটেরার বিদেশে বিলাসী জীবনের এক ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং ভারতে এরা বিত্তের বিকৃত উৎসব করছে। রাজার হালে জীবনযাপন করছেন। তাদের যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হচ্ছে কিংবা সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে তা কিছুই নয়। সাগর থেকে এক বালতি জল তুলে নিলে যেমন হয় এদের সেরকম সম্পত্তি জব্দ করা হচ্ছে। তাই এদের বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বিদেশে যেসব আওয়ামী লুটেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের মধ্যে সবার শীর্ষে আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যেই ২ শতাধিক ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়িঘর রয়েছে। দুবাইতে রয়েছে সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট। এ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি দুটি ফ্ল্যাটের মালিক। এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাজ্যের তদন্ত হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। সাইফুজ্জামান চৌধুরী এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি বা অন্যান্য কোনো কিছুতে তাকে দেখা যায় না। লন্ডনে তার নিজস্ব ব্যবসার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন।

শীর্ষ লুটেরাদের মধ্যে দ্বিতীয় আলোচিত হলো সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। নসরুল হামিদ বিপু এই মুহূর্তে দুবাইতে অবস্থান করছেন। দুবাইতে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদগুলোর মধ্যে বেশ কিছু তার নামে, কিছু তার স্ত্রী পুত্র, কন্যার নামে এবং বাকিগুলো বেনামে। এই বেনামি সম্পদগুলো থেকে তিনি এখন খরচ করছেন। সম্প্রতি বিপুর ঢাকায় কিছু সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। তবে এতে তার বিপুল লুট ভান্ডারের কোনো ক্ষতি হবে না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আলোচিত লুটেরাদের মধ্যে তৃতীয় হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল। লোটাস কামালের বিপুল পরিমাণ দুবাইতে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুবাই ছাড়াও যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই লুটেরার বিপুল সম্পদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে সপরিবারে এই লুটেরা দুবাইতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। যেখানে একাধিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে তার মেয়ে। আ হ ম মোস্তফা কামাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। আওয়ামী লীগের লুটেরাদের সবচেয়ে বড় আড্ডাখানা এখন ভারত। তবে, আওয়ামী লীগের লুটেরারা বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাড়ি ভাড়া নিয়ে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন। কলকাতার যেসব আওয়ামী লুটেরা বিলাসী জীবনযাপন করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আরও অনেকে। এরা প্রত্যেকেই নিউ টাউনে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস করছেন। তারা বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সা পাচার করেছেন। বেশির ভাগই পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে নিরাপদে দিন কাটাচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ভারতেও এসব লুটেরার বেশ কিছু বেনামি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে বিনা ভিসায়, বিনা অনুমতিতে তারা এত দিন ধরে ভারতে অবস্থান করছেন কীভাবে?

লুটেরাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের এই দুর্নীতিবাজ লুটেরা পালিয়ে প্রথমে ভারতে যান এবং রহস্যময়ভাবে ভারত থেকে তারা ভিসার সিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। সেখান থেকে তারা চলে যান যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে তাদের বাড়িঘর সবই আছে। সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান আগে থেকেই লন্ডনে বাড়ি কিনে রেখেছিলেন। তার মেয়ে সেখানে বসবাস করেন। পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি সেখানে তার লুণ্ঠিন বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে রাজার হালে জীবনযাপন করছেন। আরেক সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনিও ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে যান এবং সেখানেই অবস্থান করছেন। শ ম রেজাউল করিমেরও লন্ডনে একাধিক বাড়ি রয়েছে। তার ছেলেমেয়ে সেখানেই থাকেন। সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি লন্ডন, ব্রাসেলস দুই জায়গায় থাকেন। ব্রাসেলসে তিনি একটি কোম্পানিও খুলেছেন। হাছান মাহমুদ তার লুণ্ঠিত টাকা যুক্তরাজ্য ছাড়াও দুবাইতেও রেখেছেন বলে জানা গেছে। লন্ডনে হাছান মাহমুদের তিনটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ব্রাসেলসে তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। হাছান মাহমুদের স্ত্রীর নামে ব্রাসেলসে দুটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও হাছান মাহমুদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে বেলজিয়ামে। দুবাইতেও হাছান মাহমুদের বিপুল বিনিয়োগ আছে।

সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীরও লন্ডনে বাড়ি রয়েছে। তিনিও ৫ আগস্টের পর পালিয়ে ভারতে যান। পরে তিনি সেখান থেকে লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। লন্ডনে তার বেশ কিছু ফ্ল্যাট রয়েছে। টানা ১০ বছর নৌপরিবহন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি করেছিলেন। এই লুটের টাকা সবই তিনি তার ব্রিটিশ নাগরিক স্ত্রীর কাছে পাচার করেছেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি এখন রাজার হালে জীবনযাপন করছেন। লন্ডনে তার বেনামি বিনিয়োগ প্রায় হাজার কোটি টাকা।

লুটেরা আওয়ামী নেতাদের তৃতীয় ঠিকানা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাইতে প্রচুর লুটেরা আওয়ামী লীগার এখন মহা সুখে দিন কাটাচ্ছেন। এদের মধ্যে শীর্ষে আছেন নসরুল হামিদ বিপু। নসরুল হামিদ বিপু সেখানে প্রায় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে। আ হ ম কামালেরও দুবাইতে বিপুল পরিমাণ বিত্ত এবং ব্যবসার সন্ধান পাওয়া গেছে। শামীম ওসমান দুবাইতে ছিলেন। দুবাইতে তার ব্যবসা, বাড়িঘর রয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

লুটেরা আওয়ামী লীগের চতুর্থ আবাসস্থল এখন যুক্তরাষ্ট্র। তবে যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী না তারা এখন সুবিধা করতে পারছেন না। যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বা গ্রিন কার্ড পাননি এমন লুটেরারা এখন আস্তে আস্তে অন্য দেশে পাড়ি জমানো শুরু করেছেন। শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আওয়ামী লীগের বিপ্লব বড়ুয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়াও অন্তত পাঁচজন সাবেক মন্ত্রী এবং এমপি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এরা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল শুধু নিজেদের আখের গোছানোর জন্য। এরা দেশের জন্য তো কিছু করেনইনি, আওয়ামী লীগের জন্যও কিছু করেননি। আওয়ামী লীগের কর্মীদের জন্য কিছু করেননি। এরা বিদেশে কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকলেও এখন তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। অনেকেই বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বটে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তারা কোনো ধরনের সহায়তা করছেন না। এজন্য বাংলাদেশে তৃণমূলের কর্মীরা এখন এসব বেহায়া দুর্বৃত্তদের ‘গণশত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এসব লুটেরার বিদেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে তা উদ্ধারের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটি নিয়ে জনমনে ক্রমশ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই সম্পদগুলো জনগণের। দ্রুত যদি সম্পদগুলো উদ্ধার না করা হয় তাহলে জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশা নষ্ট হবে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বিভিন্ন দেশে চুক্তি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এসব সম্পদ উদ্ধারের জন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক ফোরামে ব্যবস্থা না নিলে এসব লুটের টাকা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto