লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলের সেনা সমাবেশ শুরু, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত
ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে এবার লেবানন সীমান্তে সেনা সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে ইসরায়েল। পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দেশটির সেনাবাহিনী এরই মধ্যে তাদের সামরিক মহড়ার ভিডিও প্রকাশ করেছে। আজ শুক্রবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম আই২৪নিউজ এ খবর দিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিবৃতিতে বলেছে, গোলানি ব্রিগেডের ১২তম ব্রিগেড যুদ্ধ পরিস্থিতিতে লড়াইয়ের অনুকরণে একটি মহড়া চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর ৫৫তম রিজার্ভ প্যারাট্রুপারস ব্রিগেডও সামরিক মহড়া চালিয়েছে। সেখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ছিল জটিল ভূখণ্ডে চলাচল ও পার্বত্য পথে অগ্রসর হওয়া।
মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জেরুজালেম ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে লেবাননের সীমান্তের কাছে উত্তর দিকে তাদের বাহিনী নিয়ে যেতে শুরু করেছে। তবে তেল আবিব এখনও বৈরুতের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যাতে হিজবুল্লাহ হামলা বন্ধ করে। আর ইসরায়েলের বাসিন্দাদের উত্তর ইসরায়েলে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বর্বর হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ৯ মাস ধরে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে। সম্প্রতি এ উত্তেজনা যুদ্ধ পরিস্থিতির শঙ্কা বাড়িয়েছে। এর জেরেই গাজা থেকে লেবানন সীমান্তে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। বিপরীতে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ইসরায়েলে বড় হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিজবুল্লাহ। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করলে তারাও হামলা বন্ধ করবে।
এদিকে, গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের কাছে আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া হামলা হয়েছে দেইর আল-বালাহ শহরের দুটি বাড়িতে। সেখানে এক নারীসহ অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে অন্যান্য এলাকায়ও। এই নিয়ে গতকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬৫ জনে।
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধেও হামাসকে নির্মূল করা যায়নি, তাদের নির্মূল করা যাবে না বলে মনে করেন ইসরায়েলের এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। দেশটির সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরনোথ ইসরায়েলি বাহিনীর ওই জেনারেলকে উদ্ধৃত করে বলেছে, হামাসের শাসনক্ষমতা ধ্বংস করতে সময় লাগবে, হামাস থাকবে। তিনি আরও বলেন, হামাসের টানেল ধ্বংস করা একটি জটিল অপারেশন।
জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৬ লাখ ২৫ হাজার শিশু আট মাস ধরে স্কুলে যেতে পারছে না। যুদ্ধ শুরুর আগে এসব শিশুর মধ্যে তিন লাখ ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করত। গতকাল জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এ তথ্য জানায়। সংস্থাটি বলছে, শিশুদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি ও তাদের শিক্ষার অধিকার ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইউএনআরডব্লিউএ সদস্যদের পরিচালিত খেলা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেলের পর্যবেক্ষণ, ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় যে সংখ্যক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, বিশ্বের আর কোনো সংঘাতে তা দেখা যায়নি। আর যারা বেঁচে আছে, তারা ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকালও সেখান থেকে আটজনকে আটক করে। গত রাতে তুলকারেম, হেবরন ও নাবলুসে বেশ কয়েকটি অভিযানে চার ভাইসহ অন্তত আট ফিলিস্তিনিকে আটক করে নিয়ে যায় তারা।