International

লোহিত সাগরে জাহাজ নিরাপত্তায় আসছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ১০ দেশের নৌজোট

লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুতিদের সামাল দিতে মার্কিন নৌবাহিনীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ সামরিক জোট গঠিত হচ্ছে, যদিও সে বিষয়ে জাহাজ কোম্পানিগুলো এখনো তেমন কিছু জানে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক জাহাজ কোম্পানি লোহিত সাগর এড়িয়ে ভিন্ন পথে গন্তব্যে যাচ্ছে, আবার অনেক কোম্পানি চুক্তি বাতিল করে দিচ্ছে।

জাহাজ কোম্পানি ও সমুদ্রপথে যাতায়াতবিষয়ক নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র গত মঙ্গলবার জোট গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে তাঁদের ধারণা খুব সামান্য। এমনকি এই জোট পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো হামলার ক্ষেত্রে সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না, সেটাও তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গত সপ্তাহে বাহরাইন সফরে এসে বলেছেন, বাহরাইন, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সেশেলস ও স্পেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌজোটে অংশ নেবে। এই জোট লোহিত সাগরের দক্ষিণাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এডেন উপসাগরে মহড়া দেবে।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন শুরুর পর গত ১৯ নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা বেড়ে গেছে। হুতিরা হামাসের প্রতি সমর্থন জানাতে এই হামলা করছে, আর এই হুতিদের পেছনে ইরানের সমর্থন আছে।

এদিকে গতকাল বুধবার হুতিদের নেতা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের লক্ষ্য করে হামলা চালালে তাঁরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজে হামলা করবে।

হুতি যোদ্ধারা বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পাশাপাশি দ্রুতগামী নৌকা থেকেও হামলা করছে। যদিও মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো হুতিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করে দিয়েছে।

সমুদ্রপথে নিরাপত্তা দেওয়া কোম্পানি ড্রায়াড গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কোরি রানস্লেম বলেছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত জোট সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, ঠিক কতগুলো যুদ্ধজাহাজ এতে অংশ নেবে এবং কত দিনে তারা এই অঞ্চলে পৌঁছাবে। এ ছাড়া তারা ঠিক কীভাবে এই সংঘাতে জড়াবে এবং তাদের প্রকৃত অর্থে কী ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে, সেটাও আমরা জানি না।’

কোরি রানস্লেম আরও বলেন, লোহিত সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ এই অঞ্চল বেশ ছোট। কিন্তু হুতি বিদ্রোহীদের কৌশল ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধজাহাজের সংখ্যার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

১৯ নভেম্বর হুতি কমান্ডোরা গাড়িবাহী জাহাজ গ্যালাক্সি লিডারে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করেন এবং সেটিকে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের হোদেইদা বন্দরে নিয়ে যান। এই জাহাজ ও এর কর্মীরা এখনো তাঁদের হেফাজতে আছে।

লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের এই হামলার কারণে সুয়েজ খাল হয়ে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজ কোম্পানিগুলো এখন ঝুঁকি এড়াতে ভিন্ন পথে চলাচল করায় পরিবহনের খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে।

গাজায় যত দিন যুদ্ধ চলবে, তত দিন বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি থাকবে।

জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী কোম্পানি মেরিন ট্রাফিকের তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরের ১৫ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে লোহিত সাগরের বাব এল-মান্দেব প্রণালিতে জাহাজ চলাচল ডিসেম্বরের ৮-১২ তারিখের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে।

জার্মানির হাপাগ–লয়েড কোম্পানির মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা ভিন্ন পথে জাহাজ চালাব; এরপর পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।’

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং আশা করছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌজোট সমন্বিতভাবে হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ব্যবস্থা নেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button