লোহিত সাগরে ‘সংঘাত’ ঠেকাতে আসরে নামছে চীন?
বিভিন্ন দেশের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের হাউথিরা। মিসাইল ছুড়ছে পণ্যবাহী জাহাজে। প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পথে। ইরানের মদতপুষ্ট এই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ চালাচ্ছে আমেরিকা ও ব্রিটেনও। যেকোনও সময় বাজতে পারে যুদ্ধের দামামা। এবার লোহিত সাগরের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল চীন। উত্তেজনা কমাতে প্রয়োজনে সবপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস বেইজিংয়ের।
গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে বাণিজ্যতরী লক্ষ্য করে লোহিত সাগরে অন্তত ২৬টি হামলা চালিয়েছে হাউথিরা। জাহাজগুলোর ক্ষতির পাশাপাশি বিপন্ন হচ্ছে নিরীহ নাবিকদের জীবন। যে কারণে বহু বাণিজ্যতরী সুয়েজ খাল এড়িয়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীনের পররাষ্ট্রন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, ‘লোহিত সাগরে জাহাজগুলোর হয়রানি ও আক্রমণ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে চীন। ওই অঞ্চলে উত্তেজনা কম করার জন্য জড়িত সকল পক্ষের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে। সকলের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে পদক্ষেপ করতে হবে। ওই অঞ্চলে যেন সংঘাতের আগুন জ্বলে না ওঠে। লোহিত সাগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এই মুহূর্তে প্রয়োজন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। যাতে পরিবর্তীকালে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায়। লোহিত সাগরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চীন সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করতে ইচ্ছুক।’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার কয়েকটি রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, লোহিত সাগরে হাউথিদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নয়টি বাণিজ্যতরী নিজেদের চীনা জাহাজ বলে পরিচয় দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, নাবিকেরাও সকলে চীনের। বিশেষজ্ঞদের মতে, হামাস বনাম ইসরাইল সংঘাতে ফিলিস্তিনের হামাসের পক্ষে রয়েছে হাউথিরা। অন্যদিকে চীনও পাশে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের। গাজায় অভিযান নিয়ে ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি হাউথিদের উপর ব্রিটেন ও আমেরিকার যৌথ বাহিনীর হামলার বিরোধিতাও করেছে। তাই মনে করা হচ্ছে, নিজেদের যদি চীনা জাহাজ হিসাবে দেখানো হয় তাহলে হয়তো হাউথিরা সেগুলোকে নিশানা করবে না। কারণ বেছে বেছে ইসরাইলপন্থী দেশগুলোতেই মিসাইল ছুড়ছে তারা। তাই হামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, তাহলে কি হাউথিদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসতে পারে বেইজিং?
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের পর থেকেই লোহিত সাগরে হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরানের মদতপুষ্ট হাউথিদের তরফে জানানো হয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এই হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হামাসের পক্ষে রয়েছে তারা। যতদিন না গাজায় ইসরাইলি ফৌজ হামলা বন্ধ করছে ততদিন এই আক্রমণ চলবে। কয়েকদিন আগেই ভারতীয় বাণিজ্যতরীতেও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হাউথিরা। ইয়েমেনের এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ লোহিত সাগরে হাউথিদের মিসাইল ও ড্রোন ধ্বংস করে দেয় দুই দেশ।