Trending

ল্যাবে তৈরি হীরার বিক্রি বাড়ছে কেন, দাম কেমন

জুটিরা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাই বাড়ছে বাগদানের সংখ্যা। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হীরার বিক্রি।

কৃত্রিম এই হীরা দেখে আপনি হয়তো বুঝতেই পারবেন না যে এগুলো কারখানায় তৈরি। মানুষের বানানো এসব হীরা দেখতে একেবারে খনিতে পাওয়া হীরার মতোই। যা দেখে আপনি এই দুই ধরনের হীরার পার্থক্য বুঝতে পারবেন, তা হলো এর মূল্যতালিকা।

হীরাশিল্পে নজর রাখেন, এমন একজন স্বাধীন বিশ্লেষক এদান গোলান। সিএনএনকে তিনি জানান, গত বছরের মার্চ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ল্যাবে বানানো হীরার বিক্রি ৬৩ শতাংশ বেড়েছিল। ওই একই সময়ে প্রাকৃতিক হীরায় বানানো এনগেজমেন্ট আংটির বিক্রি ২৫ শতাংশ পড়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘ফলাফল সত্যিই আশ্চর্যজনক।’

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ল্যাবে তৈরি করা হীরার বাগদানের আংটির বিক্রির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮০ শতাংশ। ওই মাসে প্রাকৃতিক হীরার বাগদানের আংটির বিক্রি কমে ১৩ শতাংশ। এদান গোলান বলেন, প্রাকৃতিক হীরাশিল্পে একটা ভয় ছিল যে মানুষ একসময় বাগদানের আংটির জন্য ল্যাবে তৈরি হীরা গ্রহণ করা শুরু করবেন। তাঁর মতে, ‘এটা ঘটতে শুরু হয়েছে।’

স্রোতের পরিবর্তন

প্রশ্ন হলো, ভোক্তারা কেন ল্যাবে তৈরি হীরার দিকে ঝুঁকছেন। সহজ উত্তর হলো, দাম।
এদান গোলান জানান, বাগদানের আংটির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এক ক্যারেটের গোলাকার হীরা, যার গড় খুচরা মূল্য গত বছরের মার্চে ছিল ২ হাজার ৩০০ ডলারের মতো। প্রাকৃতিক হীরার তুলনায় তা প্রায় ৭৩ শতাংশ সস্তা। একই আকার, কাট ও উজ্জ্বলতার প্রাকৃতিক হীরার দাম পড়ে ৮ হাজার ৭০০ ডলার। আর দাম কম হওয়ার কারণে দম্পতিরা বড় আকারের হীরা কিনতে পারেন।

ল্যাবে তৈরি হীরাও সত্যিকার হীরা, বলছেন এদান গোলান। তিনি জানান, প্রাকৃতিক হীরা তৈরি হতে যেখানে ৮০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি বছর সময় লাগে, সেখানে ল্যাবে হীরা তৈরি করা হয় মাত্র কয়েক সপ্তাহে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক হীরার অফুরন্ত সরবরাহ নেই।

এসব কারণেই প্রাকৃতিক হীরার দাম এত বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ ধরনের হীরার দাম আরও বাড়তে পারে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু আলরোসা। রাশিয়ার সরকার এই কোম্পানির আংশিক মালিক। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা উত্তোলনকারী কোম্পানি, যা বিশ্বের মোট হীরার ২৮ শতাংশ সরবরাহ করে।

লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান কনসিয়ার্জ ডায়মন্ডসের মালিক এবং তৃতীয় প্রজন্মের হীরাবিশেষজ্ঞ ড্যান মোরান বলেন, মানুষের তৈরি হীরা জনপ্রিয় হচ্ছে কারণ, ভোক্তারা আরও সচেতন হচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে জানতে পারছেন। তিনি জানান, যাঁদের বয়স ৪০ বছরের কম এবং বাজেট নিয়ে সচেতন, তাঁরাই ল্যাবে তৈরি হীরার মূল ক্রেতা।

খনি থেকে যেসব হীরা উত্তোলন করা হয়, তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুশ্রম জড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে পাওয়া হীরার ক্ষেত্রে এই অভিযোগ বেশি। এ ছাড়া যুদ্ধরত দেশগুলো থেকেও আসে হীরার চালান, যেগুলো পরিচিত ‘কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড’ হিসেবে। এসব হীরার বেচাবিক্রি নিষিদ্ধ হলেও তা বাজারে চলে আসে।

বাজার বাড়ছে

হীরার বাজারে ল্যাবে তৈরি হীরার অংশীদারত্ব এখনো খুব কম। তবে এই বাজার বাড়ছে। এদান গোলান জানান, ২০২০ সালে হীরার বাজারের ৩ শতাংশ ছিল মানুষের তৈরি হীরার দখলে। বর্তমানে এই অংশীদারত্ব ৭ শতাংশ।

জুয়েলারির ব্যবসা করে এমন বড় কিছু প্রতিষ্ঠান চাইছে ল্যাবে তৈরি হীরা মূল স্রোতে নিয়ে আসতে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুয়েলারি কোম্পানি প্যানডোরা ২০২১ সালে ঘোষণা করে যে তারা আর খনিতে পাওয়া হীরা ব্যবহার করবে না। বরং তারা তাদের অলংকারে ল্যাবে বানানো হীরা ব্যবহার করবে। এটা ছিল বড় একটি পরিবর্তন।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জুয়েলারি কোম্পানি সিগনেট। তারা জেলস, কে জুয়েলার্স এবং জ্যারেড চেইন শপের মালিক। তারাও ল্যাবে তৈরি হীরার জনপ্রিয়তার বিষয়টি স্বীকার করছে। এটিকে ‘দ্রুত বর্ধনশীল খাত’ হিসেবে বর্ণনা করে সিগনেটের প্রধান নির্বাহী ভার্জিনিয়া ড্রোসোস বলেন, ল্যাবে তৈরি হীরা বড় ধরনের জুয়েলারি ট্রেন্ড হবে বলে তিনি মনে করছেন।

জুয়েলারি ব্র্যান্ড চার্লস অ্যান্ড কোলভার্ড নিজেরাই ল্যাবে হীরা বানায়। তাদের মতে, দেখতে কেমন লাগে, সেটা ভোক্তাদের কাছে এখন আর একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। তাঁরা এখন অলংকার অনুভবও করতে চান।

ল্যাবে তৈরি হীরার একটা বড় ঘাটতি রয়েছে। পুনরায় বিক্রি করতে গেলে খুব ভালো দাম পাওয়া যায় না। এদান গোলান বলেন, কোনটি ল্যাবে তৈরি আর কোনটি প্রাকৃতিক হীরা, তা আপনি বলতে না পারলেও প্রশিক্ষণ পাওয়া একজন বিশেষজ্ঞ কিন্তু তা ঠিকই ধরতে পারেন। সুতরাং যে দামেই আপনি হীরা কিনুন না কেন, বিক্রির সময় দাম পাবেন আরও কম।

একটি আংটির দাম কেবল টাকার মূল্যে বিচার করা যায় না।

এদান গোলানের কথায়, ‘লোকজন আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করেন, তাঁদের কাছে থাকা আংটির দামের ব্যাপারে আমি কী মনে করি। আমি সব সময় একটি কথাই বলি, আপনি যদি এটিকে ভালোবাসেন, তাহলে এটি নিয়ে খুশি থাকুন। একটি বাগদানের আংটি সাধারণ কোনো বিষয় নয়, এটি প্রতিশ্রুতি ও স্থায়ী ভালোবাসার প্রতীক।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor