Bangladesh

শতভাগ নম্বরের প্রতিশ্রুতি ‘অগ্রিম চেকে’ চুক্তি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নিতে দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে কাজ করছিল একটি চক্র। গত বছরও এই চক্রের সদস্যরা একই ধরনের জালিয়াতিতে জড়ায়। টার্গেট করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অগ্রিম ‘ব্ল্যাঙ্ক’ চেক সংগ্রহ করে তারা চুক্তি করে। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ নারী কোটা। এই কারণে বিভিন্ন জেলার নারী পরীক্ষার্থীদের তারা টার্গেট করেছিল।

লিখিত পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে ৭৫ নম্বর পাইয়ে দেওয়া হবে– এই শর্তে জালিয়াত চক্রকে ‘ব্ল্যাঙ্ক’ চেক দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলের পর প্রতিটি চেকে ১০-১৫ লাখ টাকা আদায় করা হতো। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

গত শুক্রবার তিনটি বিভাগের ১৮টি জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরীক্ষার শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রে নিয়োজিত শিক্ষক, কর্মচারী ও পরীক্ষার্থীরা এর সঙ্গে জড়িত।  কেন্দ্রের বাইরে একটি টিম ছিল, যারা দ্রুত প্রশ্নপত্রের সমাধান করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠায়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে টার্গেট করে অনেক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় হয়। সরকারি চাকরিজীবী, কলেজ শিক্ষক ও অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের বাছাই করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ‘চুক্তি’ ছিল লিখিত পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। শতভাগ নম্বর পাওয়ার পর পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার কথা ছিল। 

জানা গেছে, র‍্যাবের হাতে গাইবান্ধায় ৩৭ জনের যে চক্রটি ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে দু’জন দায়িত্ব পালন করেন। তারা হলেন– নজরুল ইসলাম ও সোহাগ মিয়া। নজরুল কলেজশিক্ষক। এ ছাড়া এই চক্রের সঙ্গে বগুড়ায় কাজল নামে একজন ছিলেন। বিভিন্ন জেলায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর কাজল গা-ঢাকা দিয়েছেন। একই গ্রুপের এর আগেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য মিলেছে।

গাইবান্ধায় র‍্যাবে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেটে যুক্ত, তাদের অনেকের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক জব্দ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব নিয়ে রেখেছিল তারা। এ ছাড়া জব্দ করা মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ফরেনসিক পরীক্ষা করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। একই চক্রের আরও কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অর্থ-সম্পদের তথ্য নেওয়া হবে। বৈধ আয়ের সঙ্গে অর্থসম্পদের গরমিল পেলে মানি লন্ডারিং মামলাও হবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জন নারী। তাদের কারও কারও সঙ্গে ছোট সন্তান রয়েছে।

২৮ মামলায় গ্রেপ্তার ১২১

রংপুর অফিস জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রংপুর বিভাগের আট জেলায় ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিতে জড়িত চক্রের ১২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এসব জেলায় মোট ২৮টি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সদস্য এবং বাকিরা পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নারী ৫৮ জন।

শুক্রবারের ওই পরীক্ষায় ‘বিটু এক্স ডিভাইস’ ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের চুক্তি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ ও র‍্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি ডিজিটাল ডিভাইস, ৮০টি ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন সিন্ডিকেট সদস্য। তারা হলেন– কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল হোসেন, লায়ন্স কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. নুরুন্নবী ও কাউনিয়ার টেপামধুপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মো. রেজওয়ান, রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আল মাহাদী খান হৃদয়, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ সাহা, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন দুখু, ছাত্রলীগ নেতা সেতু ও পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সুমন এবং গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, রেলওয়ের কর্মী মারুফ হাসান, মুন্না মিয়া, সোহাগ রহমান ও সোহেল রানা।

রংপুরে গ্রেপ্তার ১৯ জনকে গতকাল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন সিন্ডিকেট সদস্য। বাকি ১০ জন পরীক্ষার্থী। পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র জালিয়াতির মামলা করেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto