শপথ আজ রাত আটটায়, সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু
শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় বঙ্গভবনে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। মুহাম্মদ ইউনূস আজ দুপুরে প্যারিস থেকে দেশে ফেরার পরই দ্রুততম সময়ের মধ্য এই সরকার গঠিত হবে। অলিম্পিকে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি দেশটিতে অবস্থান করছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানাবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি দেশে ফেরার পর রাত আটটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টাকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা ১৫-এর বেশি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এর পরই সরকারের দপ্তর বণ্টন করা হবে। শপথ অনুষ্ঠানে চারশ’ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বঙ্গভবনে বিশেষ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বুধবার ইউনূস সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে দেশে ফিরবেন ড. ইউনূস। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুপুরে তাঁর ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যকার বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এই প্রস্তাবে রাজি হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের মতামতের ভিত্তিতে তাঁকে প্রধান করেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়।
বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। রাষ্ট্রপতি সরকারে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু এবং ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন করে রাখার পরামর্শ দেন।
বৈঠক শেষে রাত সোয়া ১২টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষে সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের বাকি সদস্য কারা হবেন, সে বিষয়ে ১৫ জনের নামের একটি তালিকা তাঁরা দিয়েছেন। যেখানে নাগরিক সমাজসহ ছাত্র প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই তালিকা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত হবে।
সূত্র জানায়, অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যারিসে গেছেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁর একটি ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেই কারণে মুহাম্মদ ইউনূসের ফিরতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
বিএনপির নির্ভরশীল একটি সূত্র দাবি করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান নিয়ে খুব বেশি চাপাচাপিতে যাবে না বিএনপি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে সরকার গঠনের বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। কারণ বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটি খুব দ্রুত পূরণ হোক।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক পর্যায়ে এক দফায় রূপ নেয় এবং গত সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদাহরণ বাংলাদেশে আগেও রয়েছে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছিল। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছিল। এবারও তেমনি একটি সরকার হবে, যারা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ কায়েম করে জাতীয় নির্বাচন দেবে। সেনাবাহিনী এই সরকারকে পেছন থেকে সহযোগিতা করবে।