Bangladesh

শহীদুল বেনজীর হাবিবের হাতেই পুলিশে সর্বনাশ: ফাউন্ডেশনের নামে নজরানা বাণিজ্য

সিনিয়র তিন কর্মকর্তার ‘ফাউন্ডেশন’-এর নামে নজরানা আদায়ের চাঁদাবাজির ব্যবসায় পুলিশের চেইন অব কমান্ড ধ্বংস হয়েছে। সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের যোগদানের পর তার মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনে নজরানার নামে ঘুস নেওয়ার প্রথা চালু হয়।

সাবেক এই আইজিপি মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে শতকোটি টাকা আদায় করেন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই। সেই টাকায় বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হন তিনি। শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার নরকলিকাতা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বেনজীর আহমেদ আধুনিক পুলিশবাহিনী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ঘুস বাণিজ্যের অর্থ গলা পর্যন্ত গিলে সৎ অফিসারের তকমা পরেন। আর পদ্মার এপার-ওপার পৃথক্করণের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে গোটা পুলিশবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙেছেন সদ্য বিদায়ি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ মেরূকরণের সদস্য শতাধিক কর্মকর্তা আঙুল ফুলে গলাগাছ বনে গেছেন। তাদের কপাল পুড়ছে শেখ হাসিনার পতনের পর। যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। আইজিপি থাকাবস্থায় তিনি মিরপুর শহিদ স্মৃতি পুলিশ কলেজ থেকেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। পুলিশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত সিনিয়র একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পুলিশে যে বৈষম্য ও লাগামহীন দুর্নীতির যাত্রা শুরু হয় যাদের কারণে, তারা আজ বাহিনীতে নেই। কিন্তু প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসের সুশৃঙ্খল কাঠামোকে ধ্বংস করে তারা বিদায় নিয়েছেন। পুলিশের পদ-পদবি ব্যবহার করে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা, যা আজ তাদের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিন পুলিশ কর্মকর্তা ভিন্ন পরিচয়ে নজরানা আদায়ে ফাউন্ডেশন করেন। তাদের দুর্নীতি ও ব্যক্তি দায় গোটা পুলিশবাহিনীর ওপর পড়েছে। বিরোধী রাজনীতিকদের দমন করতে এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পদায়ন করে রাখা হয়েছিল, তারাও এখন সামনে নেই। পদোন্নতি আর পদায়নকে কেন্দ্র করে পুলিশবাহিনীর যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা কেটে উঠতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে বিগত সরকারের প্রভাবশালীরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েও এ বাহিনীর সর্বনাশ করেছেন।

ঘুরেফিরে যে তিন সুপারম্যানখ্যাত কর্মকর্তার নাম সামনে আসে, তারা হলেন-সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, বেনজীর আহমেদ ও সদ্যবিদায়ি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনজনই পদ্মার ওই পারের মানুষ। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল পতনের পর পুলিশে সর্বনাম আলোচিত তিন কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের তকমা লাগানো পুলিশ কর্মকর্তাদের মিছিলে অংশ নিতে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে অনেক মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তারও। বৈষম্যের শিকার এসব কর্মকর্তার মনেপ্রাণে যারা এই দলকে পছন্দ করেননি, তারাও নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার সুযোগে ছিলেন।

সিন্ডিকেটের যাত্রা যেভাবে : তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ সিন্ডিকেটের শুরু ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএসের মাধ্যমে। ওই সময় সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে যোগ দেন সদ্য চাকরিচ্যুত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এর আগে তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অফিস সহকারী হিসাবে চাকরি করতেন। সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে চাকরিকালে ভোলার লালমোহনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণের দায়ে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। পরবর্তী সময়ে চাকরি ফিরে পাওয়ার পর শুরু হয় তার সিন্ডিকেট বাণিজ্য। ডিএমপিতে এডিসি (সদর) হিসাবে প্রথমে বেছে নেন ২০তম ব্যাচের জেসমিন বেগমকে। পদায়ন ও পদোন্নতিতে অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব নিলেন জেসমিন বেগম।

১২শ এএসআই পদোন্নতির সময় হাবিব ডিসি হেডকোয়ার্টার হিসাবে ৫০ কোটি টাকার অধিক অর্থ সংগ্রহ করে লাইমলাইটে আসেন। এরপর এডিসি হেডকোয়ার্টার হিসাবে দায়িত্ব নেন ২২তম বিসিএসের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। জায়েদুলকে ব্যবহার করে হাবিব পদ্মার দুই পারের লোকজনকে আলাদা করতে থাকেন। বাংলাদেশ পুলিশে আঞ্চলিকতার শুরু করেন হাবিব। ঢাকার পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদানের পর তিনি আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জেসমিনকে সেট করেন। ডিএমপিতে অ্যাডিশনাল এসপি আরএম ফয়েজুর রহমানকে। বিভিন্ন জেলায় তার নিজের লোক বসান। ২৭তম ব্যাচের মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন (ডিসি, ওয়ারী), রাসেল শেখ (এসপি, কিশোরগঞ্জ), ২২তম ব্যাচের আবিদা সুলতানাকে নিয়োগ করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পুলিশের ভূমিকাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজে। এরই মধ্যে তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠনের যাত্রা শুরু করেন। পুলিশের পদায়ন, পদোন্নতির বিনিময়ে সংগৃহীত অর্থ উত্তরণ ফাউন্ডেশনে জমা হতে শুরু হলো। বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপাররা পদায়নের জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশনে নজরানা দিয়ে জেলায় গিয়েছেন। যতদিন পুলিশ সুপার জেলায় থাকবেন, ততদিন নিয়মিত অর্থ দিয়ে যেতে হয়েছে উত্তরণ ফাউন্ডেশনে।

২৪তম বিসিএস কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল হাসানকে পটুয়াখালীর এসপি হিসাবে পদায়ন করে তিনি ২০১৬ সালে নতুন প্রকল্প হাতে নেন। একই ব্যাচের সরকার মোহাম্মদ কায়সারকে প্রথমে ভোলা জেলা ও পরে টাঙ্গাইল জেলায় পাদায়ন করেন। ২২তম ব্যাচের জায়দুলকে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ ও পরে নারায়ণগঞ্জে পদায়ন করেন। এদিকে ঢাকার এসপি থেকে পদোন্নতি পেয়ে হাবিব অ্যাডিশনাল ডিআইজি পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখার দায়িত্ব নেন। তিনি ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা আ ফ ম নিজাম উদ্দিনকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখায় এনে ভিন্নমতাবলম্বী, পেশাদার কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কর্মকর্তাদের বাছাই শুরু করে দেন। একই ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উজ-জামানকেও তিনি পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট সেকশনে নিয়ে বাছাইকর্মে নিয়োজিত করেন।

দাড়িওয়ালা, টুপি পরা কোনো কর্মকর্তা হাবিবের সামনে যেতে পারেন না। হাবিবের এ কাজে উপযাজক হিসাবে যোগ দেন ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান (রংপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার হিসাবে চাকরিচ্যুত)। তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি (গোপনীয়) থাকাকালে সারা দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দেওয়ার কাজটি তিনি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন। সারা দিনের এসব কাজের ফিরিস্তি তিনি হাবিবকে সশরীরে জানিয়ে আসতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদকে তার নির্দেশে গুলি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফাউন্ডেশন বাণিজ্য : তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার এসপি হিসাবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা জেলায় প্রয়োজনীয় পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থী পাওয়া না গেলে গোপালগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের ধামরাই এলাকায় ১/২ শতক জায়গা কিনে তাদের ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দিয়ে গেছেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা জেলায় এ অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন তৎকালীন এসপি মিজানুর রহমান (ডিআইজি মিজান)। মিজানুর বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাভোগ করছেন। ১৫ বছরে ঢাকা জেলায় চাকরি পাওয়া অধিকাংশ কনস্টেবল গোপালগঞ্জ বা ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। ঢাকা জেলার এসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসাবে হাবিবুর রহমান যোগ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে।

হাবিবুর রহমানকে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক সংস্থাপন শাখায় বসিয়ে সারা দেশের বদলি বাণিজ্য শুরু করেন। বদলি বাণিজ্যের আয়ের একটি অংশ একেএম শহীদুল হক প্রতিষ্ঠিত ‘মজিদ-জরিনা’ ফাউন্ডেশনে জমা দিতেন। শহীদুল হক থেকে ফাউন্ডেশনের দীক্ষা নিয়ে হাবিবুর ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের যাত্রা সামাজিক সংগঠন হিসাবে হলেও এটি মূলত পুলিশের বদলি বাণিজ্যের টাকা সংগ্রহ করত। বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের নামে সংগঠন চালু করে মানুষের আবেগে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন হাবিবুর রহমান। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশের বরখাস্তকৃত কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। হাবিবুর রহমানের কাছের লোক হিসাবে মনিরুজ্জামান নিজেকে পুলিশের নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। হাবিবুর রহমানের দেখানো মতে মনিরুজ্জামান ‘সালেহা কবীর জীবন ফাউন্ডেশন’ শুরু করেন। শহীদুল হক-হাবিবুর রহমান-মনিরুজ্জামান চক্রের আবিষ্কার ফাউন্ডেশন পদ্ধতিতে চাঁদা সংগ্রহ।

প্রমোশন ও পদায়নের জন্য মনিরুজ্জামানের অফিস উত্তরণ ফাউন্ডেশনের অফিস হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। উত্তরণ ফাউন্ডেশনে ১৮তম ব্যাচের মো. আজাদ মিয়া, মো. মোজাম্মেল হক, মো. রেজাউল হক, মো. ইকবাল হোসেন, মো. আসাদুজ্জামান, মো. মাহবুব আলম, শেখ মো. রেজাউল হায়দার যোগ দেন। বিভিন্ন জেলা থেকে উত্তোলিত চাঁদা উত্তরণ ফাউন্ডেশনে জমা হতো। ২০তম বিসিএসের মিরাজ উদ্দিন, জিহাদুল কবির, মো. ইলিয়াস শরীফ, শ্যামল কুমার নাথ, নুরে আলম মিনা, মো. জামিল হাসান, মো. আলতাফ হোসেন (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) মো. সাইফুল ইসলাম, মো. হামিদুল আলম, জেসমিন বেগম, মো. আনিসুর রহমান, সাইফুল্লাহ আল মামুন, শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল, ড. একেএম ইকবাল হোসেন ও মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ।

এছাড়া জেসমিন বেগম হাবিবুর রহমানের একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১তম বিসিএসের মো. মারুফ হোসেন সরদার, প্রবীর কুমার রায়, আসম মাহতাব উদ্দিন, মোহা. আহমার উজ্জামান, মো. মিজানুর রহমান, হামিদা পারভীন, পংকজ চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মোক্তার হোসেন। ২২তম বিসিএসের খন্দকার নুরুন্নবী, আবদুল মান্নান মিয়া, মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, এসএম মেহেদী হাসান, লিটন কুমার সাহা, আবিদা সুলতানা। আগে আবিদা সুলতানা হাবিবুর রহমানের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করতেন। ২৪তম ব্যাচের আসাদুজ্জামান হাবিব নারায়ণগঞ্জ ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকা থেকে নগদ টাকা, কাপড়, বেডশিট সংগ্রহ করে হাবিবের উত্তরণ ফাউন্ডেশনে নিয়মিত জমা দিয়ে হাবিবের কাছাকাছি আসেন।

যাত্রাবাড়ীর গণহত্যার নায়ক : ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। বর্তমানে পুলিশ সুপার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। সেই ঘটনাকে পুঁজি করে তিনি কক্সবাজারের অ্যাডিশনাল এসপি হিসাবে পদায়ন বাগিয়ে নেন। এর আগে কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত থাকাবস্থায় মেজর সিনহা খুন হন। মেজর সিনহার ঘটনায় ইকবাল ব্যতীত সবাই দুর্গম জায়গায় পদায়ন পেয়েছিলেন। এরপরও তিনি ডিএমপির এডিসি লজিস্টিকস হিসাবে পদায়ন পান। পুলিশ সুপার হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সাইবার ক্রাইমে এবং পরে ডিসি ওয়ারী হিসাবে তাকে নিয়োগ দেন হাবিব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইকবালকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে হাবিবের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় মশিউর রহমান নামের এনআরবিসি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ অপহরণ করে। মশিউর রহমানকে অস্ত্রের মুখে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা এটিএম থেকে তোলার সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনো ধরনের মামলা গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত এবং আরেকজনকে পদাবনতি করে অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৫ জন পুলিশ এবং ৩ জন সোর্স জড়িত ছিলেন। সাম্প্রতিক আন্দোলনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাকে উত্তেজিত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও বিদায়ি আইজিপি আব্দুল্লাহ-আল-মামুনসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলছিলেন, ‘একজনের ওপর গুলি লাগলে একজনই সরেন। এরা আবার ফিরে আসেন, এটাই বিপজ্জনক।’ আ ফ ম নিহাম উদ্দিন, ইকবাল হোসাইন, মো. মশিউদ্দৌলা রেজা হাবিবের অর্থ সংগ্রাহক ও বিরোধী রাজনীতি দমনের কাজে ব্যবহার করছিলেন।

সেই আয়েশা যেভাবে গোপালগঞ্জের এসপি : ২০১৬ সালে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে বালির ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আলোচনায় আসেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার ও আইজিপি বেনজীর আহমেদ। কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন ডিএমপির তৎকালীন এডিসি আয়েশা সিদ্দিকা ও আসমা সিদ্দিকা মিলি। প্রতিবন্ধকতা সরাতে খালেদা জিয়া একজন নারী অফিসারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘দেশ কোথায়, গোপালি?’ কাকে গোপালি ডাকলেন খালেদা জিয়া, তা নিয়ে চলে হুলুস্থুল কাণ্ড। সরকারের গুডবুকে নিজের নাম যুক্ত করার দৌড়ে জয়ী হন আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক র‌্যাবের ডিজি এম খুরশীদ হোসেনকে বোঝাতে সক্ষম হন খালেদা জিয়া তাকে গোপালি ডেকে হেয় করেছেন। ফলে তিনিই গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার হওয়ার উপযুক্ত কর্মকর্তা।

আয়েশা সিদ্দিকা পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন ডিআইজি (অ্যাডমিন) আমিনুল ইসলামকে নিয়ে বেনজীর আহমেদকে বুঝিয়ে গোপালগঞ্জের এসপি হন। এরপর থেকে আয়েশা সিদ্দিকাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। শেখ হেলাল, শেখ সেলিম, শেখ তন্ময়, শেখ জুয়েল, শেখ সালাউদ্দিন, এসএসএফের সাবেক প্রধান মুজিবুর রহমানের নাম ভাঙিয়েও বাণিজ্য করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২৪তম বিসিএসের আয়েশা সিদ্দিকা একজন ধূর্ত প্রকৃতির হিসাবে পরিচিত। গোপালগঞ্জের এসপি থাকাবস্থায় পুলিশ বিভাগে ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। গত বছর তিনি এসবিতে যোগ দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব পান তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d