শান্তির নামে কী হারাচ্ছেন ট্রাম্প? ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কড়া সতর্কবার্তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান যেকোনো মূল্যে চান কিন্তু সেই ইচ্ছাই যেন বড় ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে তাঁকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কনজারভেটিভ সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রোববার প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করেছে, শান্তির নামে ভুল পথে হাঁটলে তার মূল্য চুকাতে হতে পারে ভয়াবহ কৌশলগত ক্ষতির মাধ্যমে।
“ইউক্রেনে কেমন শান্তি?” শিরোনামের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পরও এখনো পরিষ্কার নয়, আসলে তিনি কীভাবে এই যুদ্ধের ইতি টানতে চান। লেখায় আরও বলা হয়, “এটা শান্তির পথে যাত্রা, নাকি আপসের? বলা অসম্ভব। এমনকি ট্রাম্প নিজেই জানেন কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়।”
শুক্রবারের আলাস্কা সম্মেলন কোনো শান্তিচুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। তবু ট্রাম্প পুতিনকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন এমনভাবে, যেন তিনি রাজপরিবারের সদস্য। পশ্চিমা বিশ্ব যখন ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে পুতিনকে একঘরে করে রেখেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তাঁর জন্য রেড কার্পেট বিছিয়েছেন ট্রাম্প।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস। তাঁদের লক্ষ্য স্পষ্ট ট্রাম্পকে প্রভাবিত করা, যেন কিয়েভকে কোনো প্রতিকূল শান্তিচুক্তির চাপে ফেলা না হয় এবং পুতিনের প্রচারণাকে প্রতিহত করা যায়। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “হয়তো তাঁরা পুতিনের মিথ্যাচার খণ্ডন করতে পারবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী করবেন বা বলবেন, সেটা আসলে কেউ জানে না।”
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অবশ্য ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টাকে “প্রশংসনীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা” হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে একইসঙ্গে কড়া সতর্কবার্তাও দিয়েছে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে শত্রুরা খুব সহজেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে পুতিন কিংবা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতো নেতারা সুযোগ নিতে দ্বিধা করবেন না। সম্পাদকীয়র ভাষায়, “প্রশ্ন সবসময় একই থাকে, শান্তি হলেও তার মূল্য কত? যখন কোনো নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কারের স্বপ্ন দেখেন, চতুর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তখন সেই মুহূর্তকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের কৌশলগত বড়সড় সুবিধা আদায় করে নেয়।”
এই সতর্কবার্তার পর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হলো। এখন সবার দৃষ্টি সোমবারের হোয়াইট হাউস বৈঠকের দিকে, যেখানে ইউক্রেন ও ইউরোপের নেতারা চেষ্টা করবেন শান্তির নামে কোনো অন্যায্য আপস ঠেকাতে।