Hot

শামীম ওসমানের শ্যালক টিটুর বিস্ময়কর উত্থান

১৬ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক * বিদেশে গড়েছেন বিশাল সাম্রাজ্য

নারায়ণগঞ্জের গডফাদারখ্যাত শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর বিস্ময়কর উত্থান রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। বৈধ কোনো ব্যবসা না থাকার পরও শুধু শামীম ওসমানের শ্যালক হওয়ায় অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের সব সেক্টরেই ছিল তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার পরিত্যক্ত কাপড় (ঝুট) ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমি বেচাকেনা, বালু ভরাট, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের মদের বার নিয়ন্ত্রণ, পাগলা মেরিএন্ডারসনে এমভি সোনারগাঁ জাহাজে মদের বার পরিচালনা, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির পদ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের নামে টাকা লোপাটসহ নানা প্রক্রিয়ায় হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন টিটু। সেই টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য।

একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শামীম ওসমানের সঙ্গে টিটুও ভারতে পাড়ি জমান। পরে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। এখন সেখানে পরিবার নিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করছেন। টিটুর বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ, হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে টিটুর বিরুদ্ধে। পুলিশ তাকে খুঁজছে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গত বছর ১৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে শামীম ওসমানের সহযোগীরা। নগরীর চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাব থেকে বের হয়ে দুই নম্বর রেলগেট হয়ে গুলশান সিনেমা হল পর্যন্ত যায় তারা। এ সময় অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায় তানভীর আহমেদ টিটুকে। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। 

শামীম ওসমানের শ্যালক হওয়ায় জেলাজুড়ে টিটুর প্রভাব ছিল। নগরীর পাঠানটুলি পানির কল এলাকায় অবস্থিত নিট কনসার্ন গ্রুপের গার্মেন্টের ঝুট ও থান কাপড়ের ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এতে মাসে তার পকেটে যেত ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বালু ভরাটের কাজ করতেন টিটু। সোনারগাঁয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিভিন্ন ইউনিট, ইউনিক গ্রুপ, রিয়া গোপ স্টেডিয়াম (সাবেক খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম), নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (সাবেক শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট)-সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বালু ভরাটের কাজ এককভাবে করেছেন তিনি। তার ভয়ে দ্বিতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিত না। টিটু যে রেট দিতেন, শিল্পতিষ্ঠানের মালিকরা ওই রেটেই কাজ করাতে বাধ্য হতেন। দুই হাতে টাকা কামানোর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদ দখলের খায়েশ হয় টিটুর। একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ দখলে নেন তিনি। 

২০১৯ সালে প্রথম ইচ্ছা প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি হওয়ার। এ ইচ্ছা পূরণে শামীম ওসমান সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ক্লাবের সদস্য ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে টিটুকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। ২০২১ সালে একইভাবে দ্বিতীয়বার সভাপতি নিবার্চিত হন টিটু। পরপর দুইবারের বেশি সভাপতি হওয়ার সুযোগ না থাকায় ওসামান পরিবারের ঘনিষ্ঠ আসিফ মাহমুদ হাসান মানুকে প্রভাব খাটিয়ে ২০২২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। একইভাবে ২০২৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন আসিফ মাহমুদ হাসান মানু। 

ক্লাবের একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে ক্লাবের নতুন ১৬ তলা ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত এবং ক্লাবের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠান বা ইভেন্ট আয়োজনের নামে কোটি কোটি টাকা বিল-ভাউচার করে তহবিল তছরুপ করেন টিটু ও মানু। 

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি এম সোলায়মান মিয়া বলেন, ক্লাবের তহবিল তছরুপ ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের প্রস্তাব আসে ক্লাবের সদস্যদের মধ্য থেকে। তাদের চাওয়া অনুযায়ী একটি আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত করে আর্থিক অনিয়ম ও তহবলি তছরুপসহ বড় ধরনের ঘাপলা পেয়েছে। 

আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ কমিটিসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর আহমেদ টিটু ও আসিফ হাসান মাহমুদ মানু কমিটির মেয়দকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ তলা ভবন নির্মাণে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু কাজ সম্পন্ন না করেই ৭১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা তুলে নিয়ে যান ক্লাবেব তৎকালীন সভাপতি টিটু। 

সূত্রটি আরও জানায়, ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণে ফান্ড সংগ্রহ করার জন্য ১৫০ নতুন মেম্বার নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইজিএমে পাশ করিয়ে নেয় তৎকালীন ক্লাব পরিচালনা পরিষদ। সেই মোতাবেক মেম্বার নেওয়ার জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়। ১৫০ জন মেম্বারের বিপরীতে ৩৮২ জন সদস্য হওয়ার জন্য টাকা জমা দেন। মেম্বার হতে টাকা নির্ধারণ করা হয় জনপ্রতি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। সেই মোতাবেক বাছাই করে ১৫০ জনকে সিলেক্ট করা হয়। ডোনেশন বাবদ আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এভাবে ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। বাকি ২৩২ জনের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই এখন পর্যন্ত সেই টাকা ফেরত পাননি। এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর আহমেদ টিটু ক্লাবের অ্যাকাউন্ট থেকে এক চেকে মেম্বারদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ২৭ কোটি টাকা তুলে নিয়ে যান। 

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ কমিটির আহ্বায়ক আনিসুল ইসলাম সানী বলেন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, কাগজপত্র, স্টাফদের বক্তব্য এবং কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বড় ধরনের তহবিল তছরুপের তথ্য পেয়েছে কমিটি। 

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, তানভীর আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে হত্যার অভিযোগে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে খুঁজছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto