শিল্পাঞ্চলে ৫১ শতাংশের বেশি কারখানায় মার্চের বেতন হয়নি
ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবস আজ। অথচ শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ৫১ শতাংশের বেশি কারখানা গতকাল সোমবার পর্যন্ত তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।
ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।
যেকোনো মিষ্টি খাবারের রেসিপিতে থাক, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ
দেশের আট শিল্প ও শ্রমঘন এলাকায় মার্চের বেতন পেয়েছে কেবল ৪৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেট—এ আট শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৪৬৯টি। শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসব এলাকার ৫১ দশমিক ২১ শতাংশ কারখানার শ্রমিক মার্চের বেতন পাননি। তবে ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কারখানা।
শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় শ্রমঘন কারখানাগুলো মূলত পোশাক ও বস্ত্র খাতের। আট শিল্প এলাকায় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা সংখ্যা ১ হাজার ৫৬১। এর মধ্যে কেবল ৪১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কারখানার বেতন পরিশোধ হয়েছে।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৫৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ কারখানার বেতন। বোনাস পরিশোধ করা হয়ে ৮৮ দশমিক ৪০ শতাংশ কারখানায়। শিল্প মালিকরা বলছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের ঈদকে সামনে রেখে বেতন পরিশোধে মালিকদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কেননা পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ কিছুটা বাড়তে শুরু করলেও দাম অনেক কমিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা। সার্বিক পরিস্থিতিতে নগদ অর্থের সংকটের প্রভাব পড়েছে বেতন-বোনাস পরিশোধ চিত্রে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, আমাদের সদস্য কারখানাগুলোর অধিকাংশেরই বোনাস পরিশোধ হয়ে গেছে। দুই-চার-পাঁচটা কারখানা সবসময়ই শ্রমিকের সঙ্গে সমঝোতা করে। কিন্তু মোটামুটিভাবে দেয়া হয়ে গেছে। বেতনও এখন পর্যন্ত মোটামুটি ৮৮-৮৯ শতাংশ কারখানার পরিশোধ হয়ে গেছে। যে কারখানাগুলোর সমস্যা আমাদের নজরদারিতে এসেছে সেগুলোর সমাধান করেছি। নতুন করে দুটি কারখানায় (একটা আশুলিয়া ও একটা মিরপুরে) সমস্যা জানা গেছে। এর আগে মিরপুরের একটি কারখানার মেশিন বিক্রি করে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ব্যাংক খোলা আছে, বেতন-বোনাস পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। আশা করি সব কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ হয়ে যাবে।’ দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোয় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৬২৬টি। এর মধ্যে বোনাস দিয়েছে ৭৭ শতাংশ কারখানা। বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ কারখানায়। বাকি ৬৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ কারখানার শ্রমিকই বেতন পাননি।
আট শিল্প এলাকায় বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য কারখানা ৩৪৭টি। এর মধ্যে ৫১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৪৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ কারখানার বেতন। বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৯২ দশমিক ৫১ শতাংশ কারখানায়। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজার) আওতাধীর মোট কারখানা সংখ্যা ৪২৩। এর মধ্যে ৮২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। বোনাস দেয়া হয়েছে ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ কারখানায়। শিল্প এলাকাগুলোয় পাটকল রয়েছে ৯২টি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। বোনাস দেয়া হয়েছে ৮৯ শতাংশ কারখানার শ্রমিকদের।
কোনো সংগঠনের আওতায় নেই এমন কারখানা সংখ্যা ৬ হাজার ৪২০। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ তাদের বেতন পরিশোধ করেছে। বোনাস দেয়া হয়েছে ৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ কারখানায়। ঈদের আগে প্রায় প্রতি বছরই অস্থিরতা দেখা দেয় দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার কারখানাগুলোয়।
এবারো বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যা হতে পারে, এমন ৪১৬টি কারখানা চিহ্নিত করে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারক ও শিল্প মালিকদের আগেই সতর্ক করেছিল শিল্প পুলিশ। এ-সংক্রান্ত এক সভায় বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। যদিও বেতন-বোনাস পরিশোধকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গোলযোগের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।