Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

শিল্প চালুর আগেই ঋণখেলাপি

শুরুতে শিল্প গড়তে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক কথা। নানা প্রণোদনা ও করছাড়ের     আশার বাণী। চাওয়ামাত্রই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসহ সব ইউটিলি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এরপর ভুলিয়েভালিয়ে উদ্যোক্তাদের মাঠে নামিয়ে সেবার বদলে শুধুই হয়রানি-দীর্ঘসূত্রতা।

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের শিল্পগড়ার উচ্ছ্বাসে জল ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা। উচ্চ সুদে ব্যাংকঋণ নিয়ে যখন মাঝপথে আটকা; চালু হচ্ছে না শিল্প, তখন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে চাপ। একপর্যায়ে খেলাপির তকমা। এভাবে অনেক উদ্যোক্তা শিল্প চালু না করেই এখন ঋণখেলাপি হওয়ার খাতায় নাম লিখিয়েছে।

অথচ এতে তার কোনো হাত নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্যোক্তারা এ সমস্যায় লোকসানে জেরবার হওয়ার উপক্রম। সব চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা না পাচ্ছেন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো ইউটিলিটি সুবিধা, না পাচ্ছেন শিল্প চালুর সুযোগ।

এই পরিস্থিতিতে সাত বছর ধরে জমি ইজারা নিয়েও বিনিয়োগে আসেনি বহু কম্পানি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও ভুক্তভোগী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

২০১৭ সালের শুরুতেই দেশের বৃহত্তম শিল্পনগরী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এনএসইজেড) কারখানা করার জন্য জমি চায় দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো। দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা, বিএসআরএম, পিএইচপি, এনার্জিপ্যাক, সামিট, এসিআই, সিটিসহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপগুলো। ওই সময় থেকেই জমি চেয়ে আবেদন করে জাপানে ইস্পাত খাতে সবচেয়ে বড় কম্পানি নিপ্পন স্টিল, বৃহৎ রং কম্পানি এশিয়ান পেইন্টস ও বার্জার, চীনের জিনউয়ান রাসায়নিক কারখানা, ভারতের বিখ্যাত আদানি গ্রুপের মতো বিশ্বের বড় বড় কম্পানি।

এসব কম্পানির মধ্যে বেশির ভাগই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

যদিও তখন থেকেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের নানা সুবিধার আশ্বাসে আকাশচুম্বী দামে জমি ইজারা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তখন তাদের বিনিয়োগে বড় আকর্ষণ দেখানো হয় চার লেনের রাস্তা হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে এসেছে। গ্যাসের লাইন আসছে। পানির জন্য ফেনী ও মহুরী নদীতে বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব মুখরোচক কথা শুনে, ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন উদ্যোক্তারা। অথচ কারখানা স্থাপনের পর বছরের পর বছর চলে যায়; কিন্তু এসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কারখানা চালু করার আগেই তারা এখন খেলাপি হওয়ার পথে।   

দেশের বৃহৎ শিল্পনগরী পরিকল্পনায় ২০১৯ সালে প্রথম কারখানা স্থাপন করে চায়নিজ ঝুঝাউ জিনইয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কম্পানি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জিনইয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। ২০২০ সালে যৌথ বিনিয়োগের এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রথম চালুর কথা ছিল। কিন্তু তা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া কারখানা নির্মাণ শেষ হলেও চালু কাজ পিছিয়ে যায়। এর পর করোনা মহামারি বিপর্যয় আসে। চালুর অপেক্ষায় থাকা ওই কারখানা তিন বছর পরে ২০২২ সালের শেষ দিকে চালু হয়। এরই মধ্যে এনএসইজেডে বেশ কিছু কারখানা চালু হয়েছে। আরো অন্তত পাঁচটি কারখানা চালুর অপেক্ষায় আছে।

সূত্রে জানা যায়, ঋণ নিয়ে বড় বিনিয়োগে কারখানা স্থাপন করে দীর্ঘ দিন ধরে চালুর অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ অটোমোবাইল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কারখানার মূলধনী যন্ত্রপাতি স্থাপন হয়েছে, তা বহু দিন হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ অটোর মতো একই অবস্থা চালুর অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কয়েকটি কম্পানির কারাখানা। কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনে আসতে পারেনি এসকিউ ইলেকট্রনিকস, বসুন্ধরা গ্রুপের একাধিক কারখানা, কিয়াম মেটাল ও ভারতীয় কম্পানি আরএসপিএল। এ কম্পানিগুলোর কারখানা চালু করতে গ্যাস বড় সমস্যা। আবার অনেক বড় কম্পানি ভারী ইস্পাতশিল্প করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও পানি সরবরাহব্যবস্থা পুরোপুরি না হওয়ায় কারখানা স্থাপনকাজ শুরু করতে পারছে না। এমন পানি ও গ্যাসের অভিযোগ আছে গার্মেন্টসপল্লীর বিনিয়োগকারীদেরও।  

বেজা জানায়, যেসব কম্পানি কারখানা স্থাপন করেছে, তাদের সব সেবা দিয়ে কারখানা চালুর চেষ্টা অব্যাহত আছে। বর্তমানে যেসব কারখানা চালু আছে, তাদের পর্যাপ্ত পানি আছে। মহুরী নদীর পানি শোধন করে আনার প্রকল্প প্রায় শেষের দিকে। ওই প্রকল্পের পর্যাপ্ত পানি কারখানাগুলোতে আসতে পারে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য গ্যাস নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের ওপর তা নির্ভর করছে। এরই মধ্যে গ্যাস সংযোগ নিয়ে কিছু কারখানা চালু হয়েছে। বসুন্ধরা ও কিয়ামসহ অন্য কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। বাস্তবে গ্যাসসহ অন্যান্য সেবা সরবরাহ নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর।  

শিল্পের যথাযথ সুবিধা নিশ্চিত করে চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এ জন্য এক শ নয়, আপাতত পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এ পাঁচটি অঞ্চলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সড়কব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। একই সঙ্গে এত বৃহৎ কর্মযজ্ঞের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা নেই।

সম্প্রতি বেজার বর্তমান কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর), শ্রীহট্ট ইজেড, জামালপুর ইজেড, মহেশখালীর ইজেড ও জাপানি ইজেডু এই পাঁচটির সড়কব্যবস্থা, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব সেবা নিশ্চিত করা হবে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত কর্নফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আমরা গ্যাস সরবররাহ করছি। জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে  গ্যাসের পাইপলাইনের প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এটি এডিবির সহায়তায় করা হচ্ছে। এটা সম্পন্ন হলে আমরা দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিতে পারব। কিন্তু বেজা কর্তৃক বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্পন্ন না হওয়ায় শিল্পের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু গ্রাহক নিজস্ব অর্থায়নে পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে।’

প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান আরো বলেন, ‘শিল্পনগরীতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য কেজিডিসিএল আড়াই শ কোটি টাকা খরচ করে টিজিএস (সিটি গেট স্টেশন) এবং ডিআরএস (ডিস্ট্রিক রেগুলেটর স্টেশন) নির্মাণ করেছে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত বেজা কর্তৃক বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় গ্যাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

  ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্যোক্তা আবুল কাশেম খান বলেন, বিদ্যমান ব্যবসায় যে সমস্যা আছে, তা সমাধান না হলে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। এসইজেড নীতিতে প্রথমে বলা হয়েছিল, বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করবে। পরে আবার সরকার ইজেড করে কম্পিটিশন বাড়িয়ে দিল। সরকার যে লেভেলে এসইজেড দিতে পারবে, বেসরকারি খাত সেই লেভেলে দিতে পারবে না। কারণ সরকারের সক্ষমতা আছে। আমরা এসইজেডে ইনভেস্ট করে ধরা খেয়ে আছি।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার যখন কমিটমেন্ট করে, তখন এটার দায়িত্ব হয়ে যায় এটাকে সুরক্ষা দেওয়া। সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগগুলো করেছেন। এখন সরকার যদি ফেইল করে, তাহলে এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের কোনো শাস্তি পাওয়ার কোনো কারণ এখানে আমি দেখি না। আমি মনে করি সময়মতো বিনিয়োগ করতে না পারায় তার যে ক্ষতি, তা সরকারকে এখন দেওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের উচিত, কোর্টে চলে যাওয়া। সরকারেরও উচিত এটাকে কিভাবে পুষিয়ে দেবে তার ব্যবস্থা নেওয়া।’

সম্প্রতি খেলাপি ঋণের অঙ্ক হু হু করে বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এসব বিষয়ও খেলাপি বাড়ার একটি কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তিন মাসেই ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে, ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি—সব কিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে ইচ্ছাকৃত খেলাপির বাইরেও এখন বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন অনেক ভালো গ্রাহক।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এবং ঋণ পুনঃ তফসিলের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানে আনার পরামর্শের কারণে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছানোর একটি কারণ আইএমএফের শর্ত পরিপালন। তা ছাড়া এস আলম, বেক্সিমকোর মতো বড়  কম্পানির খেলাপি এখানে যুক্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আরো একটি বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে যাওয়ার একটি প্রভাব ঋণ খেলাপিতেও পড়েছে।

খেলাপি হলে যে সমস্যা : বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ছয় মাস কিস্তি দিতে না পারলে তাঁকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ব্যবসায় মন্দার কারণে ঠিকমতো উৎপাদনে যেতে পারছে না বহু শিল্প। আর যাঁরা নতুন শিল্প করেও তা চালু করতে পারছেন না, তাঁরাও অবাঞ্ছিত লোকসানের মুখে। ঋণ নেওয়ার ফলে ব্যাংকের চাপ আছে। অথচ চালু না করায়, উৎপাদন না হওয়ায় কোনো আয় নেই। অথচ ঋণখেলাপি হতে হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানান, তাঁরা সরকারের প্রলোভনে পড়ে শিল্পে বিনিয়োগ করে এখন রীতিমতো মহাসংকটে আছেন। সরকারের উচিত, অবিলম্বে সব ধরনের সেবা দিয়ে কারখানা চালুর ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ঋণখেলাপি থেকে রক্ষা করতে নীতিমালা জারি করা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
slot demo
bacan4d
bacan4d
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot toto