শিশুদের ‘ইন্টারনেট আসক্তি’ ঠেকাতে চীনে নতুন গাইডলাইন
মোবাইল ফোন ও অ্যাপ ব্যবহারে শিশুরা যেন আসক্ত হয়ে না পড়ে সে জন্য স্মার্টফোন ও মোবাইল অ্যাপে নতুন ফিচার যুক্ত করার লক্ষ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে চীন সরকার। প্রস্তাবিত গাইডলাইনটি বাস্তবায়িত হলে, স্মার্টফোন ও অ্যাপে একটি বিল্টইন মাইনর মোড থাকবে। এর ফলে প্রতিদিন শিশুরা দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ইন্টারনেট চালাতে পারবে না।
মা-বাবাদের অনুমতি নিয়ে গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সমালোচকরা বলেছেন, এমন গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে দেশটিতে প্রযুক্তির মাঝে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি সীমিত হয়ে পড়বে।
২ সেপ্টেম্বর এসংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা চীন সরকারের। গাইডলাইনটি বলছে, ব্যবহারকারীর বয়স অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় মাইনর মোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আট বছরের কম বয়সীদের বেলায় দিনে ৪০ মিনিট ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তা ছাড়া ১৮ বছরের কম বয়স্করা রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার করতে পারবে না।
নতুন এ গাইডলাইন বাস্তবায়ন করা হবে কি না বা বাস্তবায়ন করা হলে শিশুদের তা ব্যবহারের সময়সীমা কতটুকু হবে সে বিষয়ে মা-বাবাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
খসড়া এই গাইডলাইনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কনটেন্ট সিকিউরিটি’। অর্থাৎ অনলাইনের ইনফরমেশন সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে, যা চীন সরকার মনে করছে শিশুদের নৈতিকতার বিকাশে সহায়ক হবে। দেশটির সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্প্রতি এ গাইডলাইনটি প্রকাশ করে।
মা-বাবাদের সম্মতি
চীন সরকারের এই গাইডলাইনে সম্মতি প্রকাশ করেছেন মা-বাবারা। প্রস্তাবনা শিশুদের বিকাশের জন্য বেশ ভালো বলে মন্তব্য অনেকের।
কং লিংমান নামে এক বাবা বলেন, ‘আমার হয় মনে প্রস্তাবনাটি সত্যিই ভালো।’ সাংহাইয়ে কর্মরত এই অভিভাবক বলেন, ‘মোবাইল ফোনে শিশুদের অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যে সময়টি কাটানোর কথা সেটি হারিয়ে যায়।
সরকারের প্রস্তাবের সমর্থকদের অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়াইবোতে এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। সরকারের বিভিন্ন পোস্টের নিচে অনেকেই এটিকে ‘ভালো উদ্যোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনাও কম নয়।
এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর মন্তব্য ছিল এ রকম—সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ হলো কোনো কিছুই ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করা। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার ওয়াইবো অ্যাকাউন্টের পোস্টের নিচে করা এই মন্তব্যে হাজার হাজার লাইক পড়তে দেখা গেছে।
যদিও এই নিয়মটি বাস্তবায়ন করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মা-বাবারা। তবে গবেষকরা বলছেন, এই নিয়ন্ত্রণ শিশুদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে এ প্রস্তাবনার প্রভাব ইতিমধ্যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়তে শুরু করেছে। গাইডলাইনটি প্রকাশের দিনে হংকংয়ের শেয়ার মার্কেটে দেশটির বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট কম্পানির শেয়ারের দাম কমে গেছে। এর মধ্যে আছে ওয়াইবো, ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বিলিবিলি, ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ কাউশো ইত্যাদি।
নতুন প্রস্তাবনার ফলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ম মানতে ইউজার সেটিংয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এ বিষয়ে তাইওয়ানের ইয়াং-মিং চিয়াও-টুং বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাই ইউ-হুই বলেন, ‘এটি চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরেকটি প্রতিবন্ধকতা।’
তিনি বলেন, “যেহেতু গাইডলাইনটি কোনো ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া ছাড়া ‘অবৈধ ওবং মানসিকভাবে ক্ষতিকর’ ইনফরমেশনের কথা বলছে, সরকারের এই গাইডলাইন মেনে নিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নিতে পারে।”