Trending

শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বেই সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই দেশটির ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে এই তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। অথচ কয়েকটি দেশি ও ভারতীয় মিডিয়াতে প্রচার করা হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৫ জানুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপরই এই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া এই নথি অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যে সব বৈদেশিক সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা খতিয়েও দেখা হচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটিশে উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে এই স্থগিতাদেশ জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ওই নথি অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন তহবিল অনুমোদিত হবে না বা বিদ্যমান কোনো চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না। একই সাথে চলমান প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না পর্যালোচনা শেষ হয়। কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যালোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্তানুযায়ী কর্মকর্তারা যেন অনতিবিলম্বে কাজ বন্ধের নির্দেশনা জারি করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিত করতে সব বিদেশি সাহায্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন, বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই নোটিশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কথাটি একবার ভাবুন। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। ওই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সরবরাহে কংগ্রেসের সম্পর্ক দেখভাল করতেন। এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএইড মিশনের সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন বিবিসিকে বলেছেন, এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মানবিক এবং উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে। তিনি জানান, বিদেশি সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এটি শুধু সাহায্য স্থগিতই নয়, বরং ইতোমধ্যে দেশটির অর্থায়নে চলমান চুক্তিগুলোর কাজ বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করে।

অন্যদিকে, সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রভাব ইউক্রেনেও পড়তে পারে। যেখানে আগে থেকে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হয়েছিল। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়ে ইউক্রেন অস্ত্র সহায়তায় বড় অংকের সহযোগিতা পেয়েছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্বাক্ষরিত নথিতে সহায়তা স্থগিতের পক্ষে যুক্তি বলা হয়েছে, বর্তমান বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি কার্যকর কিনা, পুনরাবৃত্তিমূলক কি না এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা মূল্যায়ন করা অসম্ভব। তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ঘটনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগও করা হয়েছিল।

জানা গেছে, মার্কিন সরকারের নীতিতে নিজের প্রভাব রাখতে প্রেসিডেন্টদের মূল হাতিয়ার এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা নির্বাহী আদেশ। ক্ষমতা নেয়ার পর সেই হাতিয়ার ব্যবহারে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতেই একশোর বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলবেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার আক্ষরিক বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন দেশটির ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট।

এক কথায় এক্সিকিউটিভ অর্ডার হলো যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া একটি লিখিত আদেশ, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জারি করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ বলে প্রেসিডেন্ট এই আদেশ জারি করার ক্ষমতা পান। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা একজন প্রেসিডেন্টের ওপর অর্পিত হবে।

নির্বাহী আদেশের বদৌলতে সাধারণ ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নীতি নাটকীয়ভাবে পুরোপুরি উল্টে যাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে। যেমন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে জলবায়ু সংক্রান্ত আগের মার্কিন নীতির উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালে বিতর্কিত দুটি তেল পাইপলাইনের নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। যা পূর্বসূরী ওবামা প্রেসিডেন্সির নীতিগত অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। ওবামা আমলে ২০১৫ সালে ক্রিসমাস ইভে (বড়দিনের আগের সন্ধ্যা) সরকারি দপ্তরগুলো আধাবেলায় ছুটি দেয়ার মতো সাধারণ সিদ্ধান্তও নির্বাহী আদেশে পাল্টে দেয়ার নজির আছে ট্রাম্পের।

এদিকে, শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশের বড় ধরনের অর্থ সহায়তা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ কিছু কিছু দেশি ও ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করছে যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশের সহায়তা বন্ধ করেছে। এতে বোঝানোর চেষ্টা চলছে যে, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করায় মার্কিন প্রশাসন ক্ষুদ্ধ। একই সাথে ইঙ্গত দেয়া হচ্ছে ভারত মার্কিন প্রশাসনকে এমন পদক্ষেপ নিতে বলেছে। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের পরও মার্কিন প্রশাসন অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো বন্ধ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বাজেট কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সরকারের দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই)।

গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই অর্থায়ন বাতিলের কথা জানায় ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)। সেখানে একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অর্থ নি¤েœাক্ত ক্ষেত্রগুলোয় (প্রকল্প) খরচ হতে যাচ্ছিল, যেগুলোর সব কটি বাতিল করা হয়েছে।
মার্কিন এই ডিপার্টমেন্ট বলেছে, বাংলাদেশে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেরও বিপুল অঙ্কের সহায়তা বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে নেপালের একাধিক প্রকল্পে বাতিল করা হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে- মোজাম্বিকের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়ার জন্য ২.৩ মিলিয়ন ডলার, সার্বিয়ার জন্য ১৪ মিলিয়ন ডলার, মলদোভায় ২২ মিলিয়ন ডলার, নেপালে দুটি উদ্যোগে ৩৯ মিলিয়ন ডলার এবং মালিতে ১৪ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) প্রকল্পে অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলগুলো ও ভোটারদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হয়। ভারতেও একই ধরণের প্রকল্পে অর্থায়ন করছিল ইউএসএআইডি। সেখানে প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল নির্বাচনকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কাজ করা। তবে নতুন এই ঘোষণায় এখন থেকে এসব প্রকল্পে আর অর্থ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর দেশটিতে সরকারি দক্ষতা বিভাগ বা ডিওজিই নামের বিভাগটি প্রতিষ্ঠা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ককে। ডিওজিইর মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor