Trending

শুল্কের চাপে কঠিন বাজেট

  • স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা কম
  • অসম প্রতিযোগিতা বাড়বে
  • আমদানি পণ্য হবে সহজলভ্য

আর মাত্র তিন দিন পরই নতুন বাজেট। আগামী সোমবার ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রায় সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এমন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যখন জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে জনজীবন প্রায় অতিষ্ঠ। মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে প্রতিদিনই হিমশিম খাচ্ছে।

অথচ এই কঠিন সময়েই সাধারণ মানুষ নিত্য ব্যবহার করে এমন সব জিনিসপত্রে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে।

অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বাজেটের সব নথিপত্র ছাপার কাজও প্রায় গুছিয়ে এনেছে।

বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটটিও আগের সরকারেরই ধারাবাহিক বাজেট। আমূল বদলে দেওয়ার মতো বিশেষ নতুন কিছু নেই। আইএমএফের প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি আগের সরকারের মতোই কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে আমদানি পণ্যের শুল্কস্তর পুনর্গঠন ও শুল্কহার বাড়ানো-কমানোর মধ্যে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, আসছে বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের জালে ১৭২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া রপ্তানির প্রধান গন্তব্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করতে ১৩৫টি পণ্যের কাস্টমস শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা সরকারের। এতে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। দেশীয় শিল্পের অসম প্রতিযোগিতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে, যার ফলে এসবের দাম বাড়তে পারে; যেমন—বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতির কারণে চোখ খুললেই ঝলমলে আলো।

তবে চারদিকে আলো দেখতে হলে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। কারণ এই বাতি তৈরির উপকরণে বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ বাড়তি কাস্টমস শুল্ক। শিশুর হাতে একটি খেলনা তুলে দেওয়ার আগেও পকেটের বাড়তি টাকা খসাতে হবে। খেলনা আমদানিতে এখন ন্যূনতম মূল্য হিসাবে প্রতি কেজিতে ০.৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে। মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে হলেও গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। কীটপতঙ্গ মারার উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

বড় আঘাত আসছে নির্মাণ উপকরণে। এই খাতের বেশ কিছু দরকারি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। যেমন—সিমেন্ট, রড, বার, অ্যাঙ্গল, টাইলস, স্ক্রু, নাট, বোল্ট ও নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশ ছুঁতে পারে। সিমেন্ট তৈরির মূল উপকরণ ক্লিংকারের শুল্কায়ন হয় নির্ধারিত মূল্যে। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টনে ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা কাস্টমস শুল্ক আছে। তবে এখন বাজারমূল্যে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে কাস্টমস শুল্ক ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর ও বাজারের ওঠানামায় ব্যয়বহুল হতে পারে সিমেন্ট।

রড, বার ও অ্যাঙ্গল তৈরির কাঁচামালের ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি শুল্কের বোঝা। বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু, নাট ও বোল্ট কিনতে গেলে এখন প্রায় তিন গুণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এসব পণ্যে মোট করভার ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৩২ শতাংশ করা হয়েছে। টাইলস ও নির্মাণসামগ্রীর মূল উপকরণ মার্বেল ও গ্রানাইট বোল্টারের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে এর মোট করভার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২৭.৭২ শতাংশ।

স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে—এই অজুহাতে জিপসাম বোর্ড ও শিট আমদানিতে দ্বিগুণ করা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। এখন শুল্কহার হবে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরের অন্যতম বিরক্তিকর পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাকবীজে আগে শূন্য শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকলেও এখন তা ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সয়াবিন মিলের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এই পণ্যগুলোর দাম বাড়লে ব্যয় বাড়বে সাধারণ মানুষের। বাজেটে উড়োজাহাজের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ এবং হেলিকপ্টারে মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে।

বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন—এসব পণ্যের বেশি আমদানি হলে স্থানীয় শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত এসব পণ্য আবার অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে।

পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, মোটরশিল্প, ব্যাটারিশিল্প, লিফটম, এলইডি বাতি, রাইস ব্র্যান ওয়েল, টায়ার-টিউব দেশে উৎপাদন করা হয়। পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। এবার উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দেশে মোটর উৎপাদিত হওয়ায় এর আমদানি নিরুৎসাহ করার পদক্ষেপ আছে বাজেটে। এর উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি হাইব্রিড গাড়িতে ব্যবহার করা হয়। তাই এর কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। লিফটের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে পণ্যটি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

এলইডি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে রাইস ব্র্যান ওয়েল রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। টায়ার-টিউব খাতেও থাকছে সুরক্ষা। অবশ্য একচেটিয়া লাভবান হচ্ছে—এমন দাবি করে স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ কমছে মল্ট, গর্ভবতী নারীদের সাপ্লিমেন্টসহ কিছু পণ্যে।

কেমিক্যাল পণ্য আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বন্ডের অপব্যবহারও কমবে। বিভিন্ন সফটওয়্যার আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিদেশি সফটওয়্যারের সঙ্গে দেশি সফটওয়্যারের অসম প্রতিযোগিতা হবে। ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে কদর আছে জাপানিজ স্ক্যালোপের। তাই রপ্তানির সম্ভাবনা থাকায় জাপানিজ স্ক্যালোপ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া শুল্ক ফাঁকি রোধে কিছু পণ্যের শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ফাঁকি রোধ করা গেলেও ওইসব পণ্যের দামও বাড়বে স্থানীয় বাজারে। দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে কৃষিপ্রধান এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ দরকার। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প না হওয়ায় রেয়াতি সুবিধায় আমদানি করতে পারছেন না খাতের উদ্যোক্তারা। এবার কোল্ড স্টোরেজের যন্ত্রপাতি ১ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক দিয়েই আমদানি করতে পারবেন উদ্যোক্তারা।

আমদানি শুল্কের বিদ্যমান কাঠামো ছয় স্তরবিশিষ্ট। এই স্তরের শুল্কহার ০, ১, ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ শতাংশ। তবে এবারের বাজেটে একটি স্তর বাড়ানো হচ্ছে। স্তরগুলো হলো ০, ১, ৩, ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া সম্পূরক শুল্কেও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে এর স্তর ১২টি। স্তরগুলো হলো ১০, ২০, ৩০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০ ও ৫০০ শতাংশ। এবারের বাজেটে একটি স্তর বাড়তে পারে। স্তরগুলো হলো ১০, ২০, ৩০, ৪০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০ ও ৫০০ শতাংশ।

বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকছে। চিনির প্রতি মেট্রিক টনে শুল্কায়ন মূল্য ৫০০ টাকা কমতে পারে। কমতে পারে বাটার, লবণ, কম ফ্যাটযুক্ত সয়াবিন তেল, বিদেশি জুস, জ্বালানি তেল, ইনসুলিন ও এর প্যাকিং উপকরণ, পশুখাদ্যের দাম। এ ছাড়া চুনাপাথর, দেশীয় কাগজ, কালি, শিরিশকাগজ, নিউজপ্রিন্ট, ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস, ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাস, ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড ও ক্রাউফট লাইনার পেপার, পরিবেশবান্ধব ফ্রুট ব্যাগ, ব্রেক প্যাড ও ক্রিকেট ব্যাটের শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর পরিকল্পনা সরকারের। তবে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকলেও বাস্তবে এসবের দাম খুব একটা কমতে দেখা যায় না।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই মানুষের ওপর করের হার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছে। এর বাইরে আইএমএফেরও রাজস্ব বাড়ানোর দিকে একটা চাপ ছিল। সব মিলিয়ে সরকার আগের ধারাই অনুসরণ করছে। আমরা আশা করেছিলাম, তারা স্বতন্ত্রভাবে কিছু একটা করবে। মানুষের ওপর করের চাপ বাড়বে না। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি, মানুষ হতাশ। আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। মানুষের আয় বাড়েনি, খরচের পাল্লা বাড়ছে। মানুষ আর নিতে পারছে না। কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ বেকার। একদিকে বেকারত্ব বাড়ছে, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় যদি বাড়ত তাহলে খরচের পাল্লা বেশি হলেও ম্যানেজ করতে পারত। এখন এটা পারছে না। সে জন্য যেগুলো খুবই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেগুলোর মধ্যে কর আরোপ করা হলে মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

টলিভিশনে বাজেট ঘোষণা ২ জুন : আগামী অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদের বাইরে টেলিভিশন ও বেতারে পেশ করা হবে। আগামী ২ জুন সোমবার বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেট উপস্থাপন করবেন। এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতায় ছিল।

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলে দেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবারও সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন হচ্ছে। বর্তমানে জতীয় সংসদ চালু না থাকায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। ওইদিন বিকেল ৪টায় ধারণকৃত বাজেট বক্তব্য বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d