Bangladesh

শুল্ক কমে, দাম কমে না, লাভ ব্যবসায়ীদের

আসন্ন রমজান উপলক্ষে অস্থির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি ও খেজুরে শুল্ক ও কর কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পণ্যগুলোতে শুল্ক ও কর ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এদিকে শুল্ক কমায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে আলোচ্য পণ্যগুলোর নতুন দাম নির্ধারণ হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তবে গত বছর কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল সরকার। কিন্তু উল্টো ওইসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে শুল্ক কমানোর সুফল পায়নি ভোক্তারা। লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের ইচ্ছা শুল্ক কমানোর সুবিধা পাবে ভোক্তারা। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে শুল্ক কমানোর সুফল ভোক্তারা পায়নি; মূলত সুবিধা গেছে ব্যবসায়ীদের পকেটে। অন্যদিকে শুল্ক কমানোর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, শুল্ক কমানোর ইতিবাচক প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে আসে না। কিছুটা হয়তো পাইকারি পর্যায়ে পেতে পারে।

কিন্তু শুল্ক কমালে ভোক্তাও সুফল পেলো না, আবার সরকারও রাজস্ব ছাড় দিলো; মাঝখানে লাভ হয় পাইকারদের। সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া না হলে শুল্ক কমিয়ে বা বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না।

এনবিআর সূত্র জানায়, যেকোনো পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে প্রথমে ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকদের মূল লক্ষ্যই থাকে শুল্ক-কর কমানো। তারা সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দেন-দরবার করে শুল্ক-কর কমাতে সক্ষম হয়। অথচ যে কারণে শুল্ক-কর কমানো হয় তার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যায় না। 
গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, তেল এবং চিনির মূল্য আমাদের ট্যারিফ কমিশন নির্ধারণ করে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানিকারক এবং উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বসে যৌক্তিক পর্যায়ে নতুন শুল্কের প্রভাব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করবো। রমজান উপলক্ষে সেই দামে বিক্রি হবে। উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে মালামাল ট্রানজিটে আছে সেগুলো দ্রুত খালাস করে বাজারজাত করার আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে শুল্ক সুবিধা সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে যায়। 

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সই করা পৃথক ৪টি প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর মিলিয়ে ৪৭.২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিদ্যমান শুল্ক ও কর ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে ২০ শতাংশ। এই সুবিধা আগামী ১৫ই মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের ওপর প্রযোজ্য কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগামী ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
চিনির ক্ষেত্রে প্রতি টনে শুল্ক দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই সুবিধা ৩১শে মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। 

খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে। যার মধ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এটি আগামী ৩০শে মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। 
গত ২৯শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্য তেল, চিনি, খেজুর ও চালের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে যাতে এসব পণ্যের সরবরাহ কম না হয়। এর আগে গত ২২শে জানুয়ারি চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক ও করে ছাড় দিতে এনবিআরে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে শেষ অস্ত্র হিসেবে শুল্ক কমায় সরকার। তবে শুল্ক কমানোর সুফল যে ভোক্তা পায় না তার প্রমাণ পাওয়া গেছে চালের বাজারে। 

প্রামাণ-১: ২০২২ সালে চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানির অনুমতি দিয়েও উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পরে আমদানি উৎসাহিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ওই বছরের ২৭শে ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক প্রথমে ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। তাতেও যখন বাজার সহনীয় হয়নি তখন আরেক দফা চালের শুল্ক আরও ১০ শতাংশ কমানো হয়। খুব একটা না কমলেও বাড়তি দামে স্থির ছিল। যদিও ফলন ওঠার পর সরকার চালের শুল্ক বাড়িয়ে আবারো সাড়ে ৬২ শতাংশ করে। এভাবে শুল্ক কমিয়ে ভোক্তাকে যে এর সুফল দেয়া যায়নি- ভোক্তা ও বিশ্লেষকেরা প্রতিনিয়তই এ অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

প্রমাণ-২: গত বছর নভেম্বর মাসে এনবিআর চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করলেও বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি। এ ছাড়া সরকার ও চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যতবার চিনির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা একবারও কার্যকর হয়নি। ওই সময় খোলা চিনির কেজি ১৩০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে। এনবিআর প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করেছে, যা চলতি বছরের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। দাম যেন ক্রেতার নাগালে থাকে, সেজন্যই শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু এরপর বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বাড়েনি। এমনকি দামও কমেনি। আবার বেশি দাম দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে চিনি কিনতে পাওয়া যায়নি। 

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্বাভাবিক, দেশের সরবরাহ স্বাভাবিক। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে শুল্ক। এতদিন তারা দাবি করছিল শুল্ক কমানোর। এরপরেও দাম না কমানোর মানে হলো সিন্ডিকেট।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও ডলারের উচ্চ মূল্য চিনির বাজারে প্রভাব ফেলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d