Bangladesh

শুল্ক ছাড়ের প্রভাব নেই বাজারে

নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন। দিশাহারা মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে চাল, ভোজ্য তেল, চিনি, পিয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে তদারকি। গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। তারপরও ডিম ছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলোর দাম কমছে না, উল্টো বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও খুচরা দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। 

ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে: ভোজ্য তেলের দাম কমাতে স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি-উভয় পর্যায়ে ভ্যাট ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ১৭ই অক্টোবর এনবিআর পৃথক দুটি আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। প্রথম আদেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন কিংবা পাম তেলের উৎপাদন এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ মওকুফ করা হয়। অপর আদেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন কিংবা পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আমদানি পর্যায়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হ্রাস এবং প্রত্যাহার করা হলেও এর প্রভাব বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। বাজারে এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ১৫৬ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬৭ টাকায়। অন্যদিকে খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ছিল ১৪৬ টাকা। আর পাম তেল সুপার প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৩ টাকা, যা আগে ১৪৭ থেকে ১৫১ টাকা ছিল।

শুল্ক কমলেও বাজারে বেড়েছে চিনির দাম: চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে ৮ই অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে অর্ধেক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে এনবিআর। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫০ শতাংশ হ্রাস করা সত্ত্বেও বাজারে পরিশোধিত চিনির সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ১৭ই অক্টোবর পুনরায় পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে প্রতি টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। আশা করা হয়েছিল, এর ফলে দেশের বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়বে এবং পণ্যটির দাম কমে আসবে। কিন্তু উল্টো পণ্যটির দাম বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও চিনির দাম ১২৭ থেকে ১৩৫ টাকা ছিল। সরকার প্রতি কেজি চিনিতে কমবেশি ১১ টাকা শুল্ক-কর কমিয়েছে। তাতে চিনির দাম একই হারে কমার কথা ছিল।

পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা ও আলুর দামও বাড়তি: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আলু ও পিয়াজের দাম কমাতে গত ৫ই সেপ্টেম্বর আমদানি শুল্ক হ্রাস করে এনবিআর। সংস্থাটি আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। এ ছাড়া আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে পিয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করা হলেও কমেনি পিয়াজের দাম। উল্টো কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা ও আমদানি করা পিয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা আর আমদানি করা পিয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ১১০ টাকা। অন্যদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তার প্রভাব পড়েনি দামে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে।

শুল্ক ছাড়ের প্রভাব পড়েনি চালের বাজারেও: বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে গত ২১শে অক্টোবর পণ্যটির শুল্ক ছাড় দেয় এনবিআর। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান তিন ধরনের শুল্ক কমানো হয়েছে। এরমধ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এনবিআর বলছে, চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। পাশাপাশি বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে এবং দেশের আপামর মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করে এনবিআর। তবে বাজার বলছে ভিন্ন কথা। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়ার তথ্য দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আগারগাঁও বিএনপি বাজারের ব্যবসায়ী নাসির হোসেন বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। আর প্রতি বস্তায় চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে: এদিকে অভিযান ও আমদানি শুল্ক হ্রাসের পর স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মুরগি ও মাছের বাজার চড়া: বাজারে বেড়েই চলেছে মুরগির দাম। মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। এর আগে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেই নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ব্রয়লার মুরগি ৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button