Trending

শুল্ক হ্রাস ও প্রণোদনা দিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি আরো সহজলভ্য করার পরিকল্পনা 

বাংলাদেশের মোট কার্বন নিঃসরণের ১৫ শতাংশ হয় পরিবহন খাত থেকে।

কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে দেশের ৩০ শতাংশ যানবাহনকে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি-চালিত করার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরির কাজ করছে সরকার। এই রোডম্যাপের আওতায় বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) আমদানি, স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদনে আগামী অর্থবছর থেকে শুল্ক হ্রাস ও প্রণোদনা দেওয়া হবে।

এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি– ২০৪০ সাল পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে ইভি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া, এবং  উৎপাদন কাজে ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতি আমদানিতে আবগারি শুল্ক (কাস্টমস ডিউটি) ধাপে ধাপে কমানোর সুপারিশ করেছে।

বৈদ্যুতিক মোটরযান শিল্প উন্নয়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খানের নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারে কি কি সমস্যা রয়েছে তা খুঁজে বের করে সমাধানের সুপারিশ করা। গত ২৩ জানুয়ারি ওই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সভার বরাত দিয়ে মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) নিবন্ধন ব্যয় কমানো এবং চার্জিং স্টেশন সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে করা হলে সেখানে কর ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কমিটি মনে করে, স্থানীয়ভাবে ইভি উৎপাদন ও সংযোজনকে উৎসাহিত করতে ২০৩০, ২০৩৫ এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ করা দরকার। এছাড়া, লিথিয়াম ব্যাটারি আমদানি, দেশে উৎপাদন এবং  চার্জিং স্টেশন স্থাপনেও প্রণোদনা দিতে হবে।  

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী জানান, বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি ও বাজারজাত করার রাজস্বে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করা হবে। 

সড়ক বিভাগের ‘বাংলাদেশ ইলেকট্রিক মোবিলিটি রোডম্যাপ’শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট কার্বন নিঃসরণের ১৫ শতাংশ হয় পরিবহন খাত থেকে। অনেক বছর ধরে দেশে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি-চালিত তিন চাকার যান বা থ্রি- হুইলার থাকলেও–  গত বছরের এপ্রিলে একটি নীতিমালা হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত মাত্র ৪০০ বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছে। 

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে, বাংলাদেশ সরকার পরিবহন খাতের কার্বন নিঃসরণ ৩৪ লাখ টন কমানোর অঙ্গীকার করেছে। গতবছর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে–  ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ব্যবহৃত মোট গাড়ির মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির অনুপাত অন্তত ৩০ শতাংশ করতে হবে।  
 
ইভি শিল্পের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে

২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে– পরিবহন খাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানো এবং বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে– একটি দক্ষ, সাশ্রয়ী এবং কম দূষণকারী পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য আছে সরকারের। 

প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এ বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণের চাহিদা ছিল ২৪৬ বিলিয়ন প্যাসেঞ্জার-কিলোমিটার (বিপিকেএম), যা ২০৩১ সালে হবে ২,০৭২ বিপিকেএম এবং ২০৪১ সালে হবে ৪,২১৫ বিপিকেএম।  

এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে গণপরিবহন উন্নয়ন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিশন নির্ধারণের পাশাপাশি এই রূপকল্প অর্জনের জন্য একটি অ্যাকশন প্লান তৈরিতে সহায়তা করছে। 

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এনিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে গত ৩ – ৪ মার্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সাথে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় জানিয়েছে। 

এদিকে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার প্রসারে সরকার কিছু নীতি-নির্দেশিকা তৈরি করেছে এবং পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা করা হয়েছে, এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষ ইভির জন্য নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ তাদের পরিকল্পনার মধ্যেও পেট্রোল পাম্পে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন স্থাপনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

বর্তমানে এ ধরনের গাড়ির জন্য দেশব্যাপী ২০টির মত চার্জিং স্টেশন স্থাপন হয়েছে। এ খাতের ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)  বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য প্রকল্প নিচ্ছে। চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১ কোটি  ডলারের প্রকল্প নিয়ে আলোচনাও চলছে। 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, কার্বন নিঃসরণ ও জ্বীবাশ্ব জ্বালানির ব্যবহার কমানো, স্মার্ট ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে বিক্রি হওয়া জ্বালানি তেলের ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে জ্বালানির চাহিদা আরো বাড়বে। যানবাহনকে বৈদ্যুতিক যানে রূপান্তর করা গেলে কার্বন নিঃসরণ কমবে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয়ও কমবে’- যোগ করেন তিনি। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে জীবাশ্ম জ্বালানির গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি উৎসাহিত করতে বলেছে। এজন্য জ্বীবাশ্ম জ্বালানির গাড়ি আমদানিতে কর বাড়িয়ে– বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে কর হ্রাসের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।  

পরিকল্পনায় যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে

বর্তমানে, জ্বালানি তেল চালিত যানবাহন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের নিবন্ধন খরচ একই। যেমন ১০০ সিসির একটি মোটরসাইকেল এবং একটি ৫ কিলোওয়াটের বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল– উভয়েরই নিবন্ধন খরচ ২ হাজার টাকা। একইভাবে চালিকাশক্তির উৎস যেটিই হোক না কেন– তিন চাকার যানের নিবন্ধন নিতে দিতে হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,৮০০ টাকা।  

৬০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন সক্ষমতার গাড়ি এবং ৩০ কিলোওয়াট ইঞ্জিন সক্ষমতার বৈদ্যুতিক গাড়ি– উভয়েরই নিবন্ধন ফি ৯ হাজার টাকা। ইঞ্জিনের সক্ষমতা আরো বেশি হলে, সে অনুযায়ী নিবন্ধনের খরচও বাড়ে। 

এছাড়া, জ্বালানি তেল-চালিত ২০০০ সিসির মাইক্রোবাস, মিনিবাস, কার এবং জিপের মতো বড় যানবাহন এবং ১০০ কিলোওয়াট সক্ষমতার বৈদ্যুতিক যানবাহনের নিবন্ধন খরচও একই রয়েছে। 

এই বছরে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) তাদের বাজেট আলোচনায় বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে। 

বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন টিবিএসকে বলেন, উচ্চ শুল্ক এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি খুবই কম আমদানি হচ্ছে। “কিন্তু, ইভি-ই হলো ভবিষ্যৎ। ফলেই এখাতে শুল্ক ছাড়সহ অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে।” 

ইভি নিয়ে সরকারি উদ্যোগ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিটিআরসি) বৈদ্যুতিক গাড়ি সংক্রান্ত ৫টি প্রকল্প নিচ্ছে। এসব প্রকল্পে ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মাধ্যমে ১০০টি বৈদ্যুতিক দ্বিতল এসি বাস ও ২০০টি বৈদ্যুতিক একতলা এসি বাস ক্রয় এবং ৫৫টি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

এরমধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় ৫০০ জনকে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো ও ১০০ জনকে চার্জিং স্টেশন পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী অর্থবছর থেকে ধাপে ধাপে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d