Bangladesh

শূন্যতা পূরণ করতে পারছেন না নতুনরা

একাদশ সংসদ এবং এর আগের দুটি সংসদের (নবম ও দশম) অভিজ্ঞ সদস্যদের (এমপি) মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। তাদের মধ্যে বিশেষ করে তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সরকারি দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, আবদুর রাজ্জাক; বিএনপির খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, জাসদের মাইনুদ্দিন খান বাদলসহ ৫০ জনেরও বেশি এমপি ছিলেন যাদের বাহাস এবং বিতর্ক শোনার জন্য মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করত। এখনো আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং অন্যান্য দলের ৪০ জন এমপি রয়েছেন যারা একসময় তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। তবে এখন বয়সের কারণে তারাও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছেন। প্রবীণ সদস্যদের মৃত্যুর পর তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান কারা হবেন এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। নতুন প্রজন্মের মধ্যে কারা সেই স্থান দখল করবেন এবং জনগণকে সংসদ অধিবেশনমুখী করবেন শুরু হয় সেই আলোচনাও।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সবকিছুরই একটা অভিজ্ঞতা দরকার। আর সংসদ সদস্যদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালীবিধি ভালো করে যেমন বুঝতে হয়, তেমনি আইন প্রণয়নের বিষয়ে জানতে হয়। ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হতে হলে ভালো রাজনীতিক হতে হয় এবং জনগণের প্রতি নিবেদিত থাকতে হয়। তাই দলগুলোকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই বিবেচনা করা উচিত।

তারা আরও বলেন, সংসদ অধিবেশনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরু থেকেই সংসদে পেশাদার রাজনীতিকরা প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তৃণমূলে যারা রাজনীতি করতেন এবং জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তারাই মনোনয়ন পেতেন। তারা সংসদে এসে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে বক্তব্য রাখতেন। এতে সংসদ থাকত প্রাণবন্ত।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যায়ক্রমে সংসদে ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবীরা নানা কারণে মনোনয়ন পেয়ে সদস্য হয়ে এসেছেন। দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগই একেবারে নীরবেই মেয়াদ পার করেছেন। দিনে দিনে সংসদে পেশাদার রাজনীতিকদের সংখ্যা কমে আসছে। তবে একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নতুন তথা তরুণ এমপিদের মধ্যে কয়েকজনের সংসদের কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, ২০-২৫ জন সম্ভাব্য ভালো পার্লামেন্টারিয়ান পাবে সংসদ।

তাদের মতে, আওয়ামী লীগের পরবর্তী প্রজন্মের পার্লামেন্টারিয়ানের মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শাহরিয়ার আলম, নাহিম রাজ্জাক, মুহিবুল হাসান চৌধুরী, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১০-১২ জন রয়েছেন যারা সংবিধান অনুযায়ী যুক্তিতর্ক তুলে ধরে কথা বলেন। এ ছাড়া অল্প সময়ের জন্য হলেও বিএনপির সাত সদস্যের মধ্যে পাঁচজন সংসদে সরকারি দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এবং সংসদকে প্রাণবন্ত রেখেছিলেন। এর মধ্যে তরুণ সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা আলোচনায় সংসদকে সরব রাখেন।

বিশ্লেষকরা বলেন, জাতীয় পার্টি ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ ভূমিকা পালন করলেও বিভিন্ন বিলের ওপর আলোচনা এবং দেশের সমসমায়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলটির চার থেকে পাঁচজন সদস্য ‘টু দ্য পয়েন্টে’ কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নাম উল্লেখযোগ্য।

এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পেশাদার রাজনীতিকরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব না করলে ভালো পার্লামেন্টারিয়ান পাওয়া যাবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে তারা যেন যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়। তা না হলে সংসদ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের সংসদের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সে ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে রাজনীতিবিদদের দিয়েই জনপ্রতিনিধিত্ব করাতে হবে। একইসঙ্গে সংসদে বিরোধীপক্ষের সময় ঠিকমতো দিতে হবে। সংসদ আইন প্রণয়নের জায়গা, তাই সংসদ সদস্য হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা থাকে এমন কাউকেই মনোনয়ন দিতে হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক হলে প্রার্থীও সেরকম হবে। তৃণমূলের পরামর্শে প্রার্থী নির্বাচন করা আগে দলগুলোর একটা কালচার ছিল। কিন্তু এখন নানা ধরনের ইকুয়েশনে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। রাজনীতিবিদ না হলে ভালো সংসদ সদস্য হওয়া যায় না। এর মধ্যে এবার তো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিরোধী পক্ষের মতের কোনো গুরুত্ব ছিল না। আর সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তাদের দলীয় প্রধান আর দলের কর্মকাণ্ডের সাফাই গেয়েই সময় পার করেছেন। তারপরও এর মধ্যে কয়েকজনকে মনে হয়েছে, তারা সংবিধান চর্চা করেন এবং সে অনুযায়ী কথাবার্তায় পরিমিতিবোধ রয়েছে। আর বিরোধী পক্ষের বিষয়ে আমি বলব, তাদের তো মতপ্রকাশের সময় দেওয়া হয় না। তাহলে আমরা কীভাবে বুঝব কে ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হচ্ছেন।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘গণতন্ত্র ও সংবিধানের চর্চা আরও বাড়াতে হবে। বিগত কয়েকটি সংসদেই আমরা দেখছি সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের জন্য যে সময় বরাদ্দ দেওয়া হয় বিরোধী পক্ষের জন্য তা খুবই কম। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নোটিসের ওপর আলোচনা খুবই কম হয়। আবার বিলের ওপর বিরোধী দলের সমালোচনা গ্রহণ করা হয় না। ফলে সংসদ সদস্যরাও সংসদে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor