Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

শেখ বাড়ির ‘নিয়মেই’ চলত খুলনা 

  • এ বাড়ি ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক, সব ক্ষমতার কেন্দ্র
  • আলোচিত বাড়িটি এখন পোড়া এবং পরিত্যক্ত 

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুলনা নগরের শেরেবাংলা রোডের একটি দোতলা বাড়ি বিশেষ এ নামে পরিচিতি পায়। এটি ছাত্র-গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি। ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক এ বাড়িতে তৈরি হয়েছিল অলিখিত কিছু নিয়ম-কানুন। বাড়িটি হয়ে উঠেছিল সব ক্ষমতার কেন্দ্র। এ বাড়ির লোকজনের হুকুমেই চলত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। পেশাজীবী সংগঠনগুলোও চলত এ বাড়ির নির্দেশে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সংগঠনের নেতারা এখানে নিয়মিত হাজিরা দিতেন।

শেখ বাড়ির কথাই ছিল শেষ কথা। সরকারি জনবল নিয়োগ, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, মনোনয়ন-বাণিজ্য, নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসাবাণিজ্য এবং ক্রীড়াঙ্গনের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হতো এখান থেকেই। বাড়িটি খুলনার মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে-পরে ৪ ও ৫ আগস্ট হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে এ বাড়ির অবকাঠামো ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। বাড়িটি এখন পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ এবং পরিত্যক্ত। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তার ছেলেদের মধ্যে সবার বড় শেখ হেলাল উদ্দিন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে শেখ হেলাল আওয়ামী লীগে সক্রিয় হতে থাকেন। ধীরে ধীরে দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন হয়ে ওঠেন তিনি। গত দেড় দশকে সরকার বা দলের শীর্ষ কোনো পদে তাকে দেখা যায়নি। তবে তার ইশারায় খুলনা বিভাগ ছাড়াও জাতীয় রাজনীতির অনেক কিছু নির্ধারিত হত। তিনি বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট) আসনের ছয় বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। শেখ হেলালের অন্য চার ভাই শেখ সালাহ উদ্দীন ওরফে জুয়েল, শেখ সোহেল উদ্দীন, শেখ জালাল উদ্দীন ওরফে রুবেল, শেখ বেলাল উদ্দীন ওরফে বাবু ও শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময় আগে রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। তবে ২০১৪ সালের পর খুলনা অঞ্চলের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন তারা। 

২০১৮ সালে রাজনীতিতে আবির্ভূত হন শেখ জুয়েল। ওই বছর ২৫ অক্টোবর খুলনায় এলে বর্ধিত সভায় তাকে খুলনা-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০১৮ সালে বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হুট করেই রাজনীতিতে আসেন শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়। পারিবারিক কোটায় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০২৪ সালেও তন্ময় সংসদ সদস্য হন। শেখ সোহেল যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, খুলনা ক্লাবের সভাপতি, খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি, বিসিবির পরিচালক ও বিপিএলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। শেখ রুবেল ছিলেন খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি। জুয়েলের স্ত্রী শাহানা ইয়াসমিন শম্পার কয়েক বছর গণভবনে থেকে প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। শেখ ভাইদের সবাই ঢাকায় থাকলেও খুলনায় এসে শেরেবাংলা রোডের দোতলা পৈতৃক বাড়িতে থাকতেন। 

খুলনার শেখ বাড়ির পাশের চায়ের দোকানি বুলবুল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল ও শেখ সোহেল বাড়িতে থাকলে নানান লোকজন আসত। মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িটি সরগরম থাকত। বাড়ির সামনে দামি গাড়ির সারি দেখা যেত। তখন আমার দোকানে দিনে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকার বেচা-বিক্রি হত। এখন বিক্রি কমে গেছে। দিনে আড়াই-তিন হাজার টাকারও বিক্রি হয় না। কারণ বাড়ির মালিকরা নেই, লোকজনও আসে না। বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। পথচারী যাওয়ার সময় শুধু তাকিয়ে দেখে।’  

খুলনা আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী জানান, ‘হেলাল কিংবা তার ভাইরা কেউ কেন্দ্রীয় বা দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না। কিন্তু দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে হলে তাদের সম্মতি লাগত। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে খুলনা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ পরিবারের আশীর্বাদ নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। টাকার বিনিময়ে অনেককে শেখ ভাইয়েরা নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে দেওয়া নৌকার প্রার্থী পছন্দ না হলে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করাতেন তারা। শেখ হেলাল বা তার পরিবারের সদস্যদের তদবির এড়িয়ে যাওয়া কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সাহস হত না।’

তারা জানান, বাড়িটি আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ ছয় বছরে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। খুলনা অঞ্চলের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সবকিছু হত এখান থেকেই। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সংগঠনের নেতারা নিয়মিত হাজিরা দিতেন এ বাড়িতে। বাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। তারাই আওয়ামী লীগে বড় বড় পদ-পদবি পেতেন। দলের ত্যাগী নেতারা ছিলেন কোণঠাসা। এ কারণে শেখ বাড়ি নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই চাপা অসন্তোষ ছিল, যদিও ভয়ে কেউ মুখ খুলত না।’  

২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুই দিন আগে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী বিধান রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান ওরফে আশিক ও মো. গফুর মোল্লা সরে দাঁড়ান। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন। বিধান রায় শেখ সোহেলের প্রার্থী ছিলেন।

জলমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করা হয়, নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হয়। ৩২ জন কর্মীকে জেলে দেওয়া হয়। অবশেষে আমাকে শেখ বাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। আমাকে শেখ সোহেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। আমি থানা থেকে আমার কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তে সই করে চলে আসি। পরদিন দেখি আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি মর্মে একটা বিজ্ঞাপন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।’

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শেখ বাড়িতে অলিখিত কিছু নিয়ম তৈরি হয়েছিল। পুরো খুলনা বিভাগের সরকারি জনবল নিয়োগ, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, মনোনয়ন-বাণিজ্য, নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব নিয়ন্ত্রণ করত তারা। ঠিকাদার বা অন্য বড় ব্যবসায়ীরা শেখ বাড়িতে ভাগ না দিয়ে ব্যবসা করতে পারেনি।’

কয়েকটি সরকারি দপ্তরের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডিসহ সব সরকারি দপ্তর ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। শেখ পরিবারের নির্দেশে কাজের ভাগবাটোয়ারা হত। ঠিকাদাররা পার্সেন্টেজ না দিয়ে খুলনায় ব্যবসা করতে পারতেন না। শেখ বাড়ির কথাই ছিল শেষ কথা।’

খুলনা নৌপরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক ডি আব্দুল গাফফার বলেন, ‘শেখ পরিবারের হাতে ক্ষমতা ছিল।’ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের কয়েকজন সাবেক পরিচালক জানান, ‘শেখ পরিবারের পাঁচ ভাই, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে অনেক জাহাজ ছিল। শেখ পরিবার ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট মালিকদের জাহাজে পণ্য সরবরাহের পর অন্য মালিকেরা পণ্য সরবরাহের কাজ পেতেন।’

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃহত্তর খুলনা, খুলনা বিভাগ বা পদ্মার এ পাড়ে শেখ পরিবার পরিবারতন্ত্রের সর্বোচ্চ চর্চা করেছে। তাদের কারণেই আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক চর্চা ছিল না। শেখ বাড়ি আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিই শেষ করে দিয়েছে। এছাড়া নৌ-পরিবহন ব্যবসা, জমি বেচা-কেনা, ঠিকাদারি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, বালুমহল দখল সবকিছু থেকে ফায়দা লুটেছে। ব্যবসায়ীদের চাপে ও ভীতিকর অবস্থায় রেখে অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নষ্ট করেছে, দখলও করেছে।’

৫ আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাই আত্মগোপনে। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto