‘শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে জোর করে নেয়া হয়েছিল’: আবু সাঈদের বড় ভাই
‘আমার ভাইয়ের মরদেহ যেদিন রাতে বাসায় নিয়ে আসা হয়— স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন এসে বলেছে রাতের মধ্যেই মাটি দিতে হবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, সর্বোচ্চ সকাল আটটার মধ্যে মাটি দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ এর পরিবারকে জোরপূর্বক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
টিবিএসএর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই শহীদ হয়েছে, আমরা (হাসিনা) সরকারের কাছে সাহায্য, কিংবা বিচার চাইনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসে আমাদের জোর জবরদস্তি করে বলেছেন, ঢাকায় যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তোমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন।’
‘আমাদের উপজেলার ইউএনও ঢাকার উদ্দেশ্যে আমাদের নিয়ে চলেন। গেল শনিবারে আমরা ঢাকায় এসে পৌঁছাই, তখন আমরা কল্পনাও করিনি এত অল্প সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন হবে। এমনটা বুঝলে চাপ দিয়েও আমাদের (গণভবনে) নিতে পারত না।’
‘ঢাকায় আমাদের পুলিশ লাইনের পাশে একটি হোটেলে ওঠায়। আমাদের বারবার ইউএনও কল দিয়ে বলেছে, তোমরা হোটেল থেকে বের হবা না, কারণ তোমাদের পরিবার জাতীয় ইস্যু। আমাদের সার্বিক দেখবাল করার জন্য তারা ড্রাইভারকে রেখে গেছেন।’
‘আমাদের যেখানে নেয়া হয়েছে, সেখানে কোন আন্দোলনকারী আহত ছাত্ররা ছিল না, সব আওয়ামী লীগের লোকজন, যারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘাত করতে গিয়ে আহত হয়েছেন। কয়েকজন পুলিশ-আনসার সদস্যও ছিল। অথচ আমাদের বলেছে, সেখানে আহত ছাত্ররা ও তাদের পরিবার থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘হোটেলে একজন লোক আমাদের বলেন, আপনারা কেন এসেছেন? যে আপনার ছেলেকে মেরেছে, সেই আবার আপনাকে সান্তনা দিতে ডেকে নিয়ে এসেছে। তখন আমরা মা বলতেছে, চল আমরা চলে যাই এখান থেকে। আমি মাকে বললাম কীভাবে যাবে, বের হতে হলে একজন, একজন করে বের হতে হবে।’
‘আমি তখন চিন্তা করলাম– আমরা পালিয়ে গেলে আমাদের এলাকার ইউএনও’র চাকরি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী এত অল্প সময়ে দেশ ছেড়ে যাবেন, সে সময় জানলে আমরা হোটেল থেকে বের হয়ে যেতাম।’
‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে একটা মাইক্রোবাসে আমাদের পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের সঙ্গে বেশকিছু প্রশাসনের লোকও ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখি সেখানে কিছু পরিবারের লোকজন।’
‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দুই মিনিট সময় দিয়েছেন। টিভিতে দেখেছি আমার আম্মার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও ভিডিও। ভিডিওতে দেখেছি আমার মা শব্দ করে কান্না করছে, আসলে মায়ের কান্নার সঙ্গে অন্য কারো কান্নার শব্দ অ্যাড করা হয়েছে। আমার ছোট বোন এটা দেখে বলতেছে, দেখ এরা কত বড় শয়তান, মায়ের কান্নার সঙ্গে অন্য কারো কান্না অ্যাড করে দিয়েছে।’
‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তদন্ত করে বিচার করবেন। তখন আমরা বলেছি, আবু সাঈদকে যারা মারছে স্পষ্ট ভিডিওতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী আমার মায়ের সঙ্গে কান্না করেছেন, আসলে এগুলো কান্না না আই ওয়াশ।’
‘আমার ভাইয়ের মরদেহ যেদিন রাতে বাসায় নিয়ে আসা হয়— স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন এসে বলেছে রাতের মধ্যেই মাটি দিতে হবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন সর্বোচ্চ সকাল আটটার মধ্যে মাটি দিতে হবে। আমরা তখন বলেছি, আমাদের ভাই কি সন্ত্রাসী ছিল? তাকে গোপনে কেন মাটি দিতে হবে? তার অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে, তারা আসবে তারপর জানাজার নামাজ হবে।’
গত ১৬ জুলাই বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অন্যতম সমন্বয়কারী আবু সাঈদ (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে।