শেখ হাসিনা জোর দাবি বাংলাদেশের অলৌকিক প্রবৃদ্ধির গল্প সম্পূর্ণ বানোয়াট
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশকে একটি অলৌকিক অর্থনীতি বলে অভিহিত করা হয়েছে। করোনা মহামারীর আগের দশকে দেশের অর্থনীতি বার্ষিক ৭শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যে হার চীনের সাথে তুলনীয়।
শেখ হাসিনা, যিনি ২০০৯ থেকে এই বছরের আগস্ট পর্যন্ত স্বৈরাচারীভাবে দেশ শাসন করেছিলেন, জোর দাবি করেছিলেন যে এই অলৌকিক প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব পুরোটাই তার। ছাত্র-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ঘটার পর এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত একটি নতুন শ্বেতপত্র তার এই অলৌকিক উন্নয়নের গল্পকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারী পরিসংখ্যানগুলি হাসিনার উন্নয়নের দাবিকে বৈধতা দিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ফুলিয়েÑফাঁপিয়ে তুলে ধরা হয়েছে এবং এটি বানোয়াট জিডিপি পরিসংখ্যান দ্বারা প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের (মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে) তত্ত¡াবধানে একটি বিশেষজ্ঞদের দলের ৩৮৫-পৃষ্ঠার গবেষণাটিতে বিশ্বব্যাংকের মডেল ব্যবহার করে নতুনভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গণনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির প্রকৃত হার সর্বোচ্চ ৩শতাংশ হতে পারে, হাসিনা সরকারের পরিসংখ্যান দ্বারা দাবি করা ৭শতাংশু নয়। প্রতিবেদনে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে প্রচারণা চালানোর জন্য জিডিপির হারে কারসাজি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের দলের সবচেয়ে গুরুতর আবিষ্কারটি দুর্নীতি সংক্রান্ত। তাদের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৩হাজার ৪শ’ কেটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে, এর পরিমাণ আজকের জিডিপির প্রায় ৩.৪শতাংশ। এই অবৈধ আর্থিক বহির্প্রবাহের মধ্যে রয়েছে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি থেকে মাদক পাচার পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে অর্জিত অর্থ।
বিশেষজ্ঞদের দলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুর্নীতির বেশির ভাগই এসেছে বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলি থেকে। এতে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন ধরনের দালাল জড়িত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। শ্বেতপত্র লেখা কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দুর্নীতির নজির বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে এর আগে কখনও এটি এত ব্যাপক এবং বিস্তৃত ছিল না। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর গভীর রাজনৈতিক ত্রæটিপূর্ণ প্রক্রিয়া এই অপকর্মের শিকড় গাড়তে দিয়েছে।’
এই সমস্ত সমস্যাগুলি স্বাভাবিকীরণকে কঠিন করে তুলেছে, বিশেষত যখন অন্তর্র্বতী সরকার তার পরিকল্পিত সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প‚র্ববর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে, ব্যবস্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে স্বাধীন পরিসংখ্যান ও অর্থনৈতিক কমিশন গঠন করা। এছাড়াও, সরকারের আরো অনেক জরুরী কাজ রয়েছে।
কয়েক মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ গতিতে চলছে এবং বিনিয়োগে ধ্বস নেমেছে। ১১ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের প‚র্বাভাস দিয়েছে। এদিকে, বিশ্বব্যাংক বলেছে, সমস্ত অ-দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারের অর্ধেকাংশেরই পুনরায় দারিদ্র্য কবলিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ যদি তার প্রতিষ্ঠানগুলি পুনর্গঠনের সময় এসব সংশোধন করতে পারে, তাহলে সেটাই হবে প্রকৃত অলৌকিক ঘটনা।