Trending

শেয়ার বাজারে টানা দরপতন, আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা 

দেশের শেয়ার বাজারে টানা দরপতনে উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন পার করছেন বিনিয়োগকারীরা। ভালো-মন্দ সব ধরনের শেয়ারের ঢালাও দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি কমেছে ৪৯ পয়েন্টের বেশি। এ নিয়ে গত টানা ৯ কার্যদিবস সূচক কমেছে ২২৯ পয়েন্ট। ডিএসইর প্রধান সূচকটি এখন ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞাসা, কোথায় গিয়ে থামবে এ দরপতন? 

পুঁজিবাজারের বর্তমান এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন। 

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, সামনে বাজার ভালো হওয়ার মতো কিছু নেই, যা অনুঘটকের কাজ করবে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ। গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠন করা হলে বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, বাজার ভালো হবে। কিন্তু গত আট মাসে বিএসইসি বাজারের মূল সমস্যাই চিহ্নিত করতে পারেনি, সেগুলোর সমাধান করবে কীভাবে? 

তারা বলেছেন, শেয়ার বাজারের উন্নয়নে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, গত কয়েক মাসে এ টাস্কফোর্স পুরো প্রতিবেদনই দিতে পারেনি। তাহলে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হতে কত সময় লাগবে? শেয়ার বাজারের প্রাণ ভালো কোম্পানি। অথচ বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি নতুন কোম্পানিও তালিকাভুক্ত করা যায়নি। তাহলে বাজার কীভাবে ভালো হবে? 

আট মাস আগে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। আর গতকাল দরপতনের পর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসেবে গত আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮০২.৯০ পয়েন্ট কমেছে। 

গতকালের লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যে একের পর এক কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে থাকে। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫২টির, কমেছে ৩০০টির। আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টির। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০৪ পয়েন্টে ও বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪.৩৭পয়েন্ট কমে গতকাল ১৩ হাজার ৯৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। 

বাজারের এ অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ চলাকালে বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, গত দুই মাসে টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকৃত অর্থের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কমে গেছে। তারা পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 
ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক বলেন, বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজার সংস্কার করছে। কিন্তু এমন সংস্কার হচ্ছে যে, গত কয়েক মাসে পুঁজিবাজারের ৭০ থেকে ৮০ হাজার মূলধন হারিয়ে গেছে। এদিকে লেনদেন কমায় অনেক ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজনও ছাঁটাই করা হচ্ছে। 

দেশের একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের স্বত্বাধীকারী বলেন, প্রতি মাসে তার ব্রোকারেজ হাউজে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। তিনি আগামী জুন মাস পর্যন্ত দেখবেন। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি তার ব্রোকার হাউজের অনেক শাখা বন্ধ করে দেবেন। লোকজনও ছাঁটাই করবেন। তিনি একটি হিসেব তুলে ধরে বলেন, তার হাউজে এখন সক্রিয় ২ হাজার ১২০টি বিও অ্যাকাউন্ট আছে। এর মধ্যে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫টি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন লেনদেন করা হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন ডিএসইতে ৩০ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী লেনদেন করে না। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে একটি দেশের শেয়ার বাজার কীভাবে চলবে? 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, শেয়ার বাজার নিয়ে এত বেশি হতাশা এর আগে কাজ করেনি। বর্তমান কমিশন বাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেগুলোর সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, দেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকাররা লোকসানে চলে গেছে। ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, গত আট মাসে দেশের শেয়ার বাজারে একটি কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়নি। অথচ এ সময় অন্তত সরকারি ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত করা যেত।

পুঁজিবাজারে ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন বলেন, আমাদের বাজারের বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। তিনি বলেন, যে বাজারে পুঁজির নিরাপত্তা নেই, সেখানে বিনিয়োগকারী থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমান কমিশন চায়, বাজার বাজারের মতো চলুক। এখানে সূচক কমছে, কিংবা বাড়ছে, এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, বিএসইসি বাজারের উন্নয়নে টাস্কফোর্স করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে টাস্কফোর্স গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের পুরো প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d