Bangladesh

শেরেবাংলা নগরে পার্ক নির্মাণ, প্রস্তাবিত নকশা দেখে অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী

মাঝখানে লেক বাদ দিয়ে নতুন নকশার জন্য প্রকল্প ফেরত * লন্ডনের হাইড পার্কের মতো করার নির্দেশ

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ ঝুলে গেছে। বর্তমান সরকারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নির্বাচনের আগেই প্রকল্প অনুমোদনের কথা ছিল। কিন্তু এর নকশা দেখে অসন্তুষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উপস্থাপন হলে অনুমোদন না দিয়ে প্রকল্প ফেরত দিয়েছেন তিনি। কেননা তার নির্দেশনামতো নকশা তৈরি করা হয়নি। শুধু নকশার কারণেই একটি ভালো উদ্যোগ পিছিয়ে যাচ্ছে। একনেক বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একনেকে অংশ নেওয়া সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল এ পার্কটি হবে লন্ডনের হাইড পার্কের মতো। তিনি একনেক বৈঠকে বিষয়টি বলেছেনও। কিন্তু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে নকশা তৈরি করেছে, সেটি তার পছন্দ হয়নি। এজন্য তিনি ক্ষুব্ধ হন। অনুমোদন না দিয়ে প্রকল্পটি নতুন করে নকশা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবকে। নির্বাচনের আগে প্রকল্পটির অনুমোদন না হওয়ায় এর কার্যক্রম ঝুলে গেছে। এখন আবার নতুন সরকার এসে অনুমোদন দিলে এর পরই শুরু হবে বাস্তবায়ন কার্যক্রম। সেক্ষেত্রে আরও প্রায় তিন মাস পিছিয়ে গেল প্রকল্পটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এ মুহূর্তে তেমন কিছুই বলতে পারব না। কেননা এত বিস্তারিত আমার মনে নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, নকশাসংক্রান্ত কারণেই প্রকল্পটির অনুমাদন আটকে গেছে। তবে সমস্যা নেই পরবর্তী সময়ে যখন একনেক হবে, তখন এটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন হবে নিশ্চয়ই।

সূত্র জানায়, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করা হয় ‘ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ’ প্রকল্পের। ৬ নভেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। এর একদিনের মাথায় দ্রুতগতিতে ৭ নভেম্বর একনেকের তালিকায় প্রকল্পটি যুক্ত করা হয়। ৯ নভেম্বর উপস্থাপন করা হয় একনেক বৈঠকে। সেখানে উপস্থাপিত প্রস্তাবে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে নির্মাণ হতে যাওয়া পার্কটির মাঝখানে লেক রাখা হয়েছিল। এতেই ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি বলেন, পার্কের মাঝখানে কোনো লেক থাকবে না। কেননা এতে শিশু ডুবে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনার ভয় থাকে। এছাড়া চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল করার প্রস্তাব ছিল। সেটিতেও ভেটো দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, পার্কটি থাকবে উন্মুক্ত। ওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখলে প্রার্কের প্রকৃত সৌন্দর্য ব্যাহত হয়। এছাড়া পার্কের চারপাশে থাকবে ওয়াকওয়ে। মাঝখানটা সবুজ চত্বর। প্রস্তাবিত নকশায় পার্কের ভেতরসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়। এতে আপত্তি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গাছ থাকবে পার্কের চারপাশে। মাঝখানে গাছগাছালি থাকলে শিশু খেলতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। সেজন্য লন্ডনের হাইড পার্কের মতো করে নতুন নকশা তৈরি করতে হবে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে পার্ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৩ কোটি টাকা। এটি নির্মাণের কথা গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসী পাবে একটি নতুন পার্ক। শিশুরা মন খুলে বেড়াতে পারবে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের মানোন্নয়ন ঘটবে। পাশাপাশি স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী ফাঁকা স্থানে লেক, সবুজ স্থান এবং শিশুদের জন্য রাইড, বিশ্রামের জন্য বসার স্থানসহ নান্দনিকভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এখন প্রস্তাবিত নকশা থেকে অনেক কিছুই বাদ যেতে পারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দ্রুতই যাতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া যায়, সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলাম। একটি ভালো উদ্যোগ সফল করতে তাড়াতাড়ি প্রক্রিয়াকরণও করা হয়। কিন্তু শুধু নকশা ঠিকভাবে না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আটকে যায় প্রকল্পটির অনুমোদন। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ব্যয় খুব বেশি নয়। এছাড়া জায়গাটি খোলা পড়ে আছে। এখনো যে কোনো সময় অন্য স্থাপনা হয়ে যেতে পারে। সেখানে যদি একটি পার্ক হয়, তাহলে রাজধানীবাসীর জন্য অনেক ভালো হবে। সেই চিন্তা থেকেই অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছিল প্রকল্পটি।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেশ কয়েকবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। এজন্য দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছিল। চার লাখ ডলার খরচ করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের জাতীয় সংসদ ভবনসহ পুরো শেরেবাংলা নগরের মূল নকশা দেশে আনা হয়েছিল। ওই সময়ের প্রকল্প অনুযায়ী শেরেবাংলা নগরে ১৪ তলার ভিতের ওপর ৯ তলাবিশিষ্ট চারটি মূল ভবন করার কথা ছিল। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় মিলনায়তন, সম্মেলনকেন্দ্র, মসজিদ, ব্যাংক, ডাকঘর, এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। কিন্তু এসব পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। এর কারণ হিসাবে জানা যায়, সচিবালয়ে এখন মোট ১১টি ভবন আছে। নতুন করে ভেতরে ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার একটি ২০ তলা, অন্যটি ১৫ তলা। এছাড়া সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় এরই মধ্যে। সেই সঙ্গে প্রচুর অর্থের সংস্থান এবং নিরাপত্তার একটি বিষয়ও আছে। এসব মিলেই বাদ দেওয়া হয়েছে সচিবালয় স্থানান্তরের পরিকল্পনা। আর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র সংলগ্ন জায়গায় এখন পার্ক বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d