শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আরও কয়েকজন প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক দিন, কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর নাটকীয়তা চলছেই। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীসহ। এছাড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করলেও মাইজভাণ্ডারী বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তরীকত ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি দলের এবং স্বতন্ত্র অন্তত ১০০ প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীদের বড় একটি অংশ নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালেও মাঠে নিষ্ক্রিয় আছেন।
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানো ও নির্বাচনের মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকায় রাজনীতির মাঠে নতুন প্রশ্ন উঠেছে।
জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে দলের নেতারা সুবিধা নেবেন আর আমাদের (বাকি প্রার্থীদের) ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন—সেটা কেন হবে? আমরা ৭ তারিখের পরে নেতাদের থেকে কড়ায়গন্ডায় এর হিসাব নেব।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশের মানুষ নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতায় আছে।
রংপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে সব [ভোটকেন্দ্র] দখল করে নেবে কি না, এ নিয়ে ভোটাররা এখনও শঙ্কায় আছে।
‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে চলমান সংকট ঘনীভূত হবে। দেশে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।’
এদিকে শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।
আওয়ামী লীগের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্য দলের অধিকাংশ প্রার্থীই ভোটের মাঠে শুরুতে সরব থাকলেও শেষ দিকে এসে অনেকটাই নীরব।
দেশের বিভিন্ন এলাকার আসনগুলোতে টিবিএসের প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হওয়া ২৬টি আসনের বাইরের ১০টি আসনেও প্রার্থীদের সরব প্রচারণা ছিল না জাতীয় পার্টির।
এছাড়া বিএনএমের ৩টি, তৃণমূল বিএনপির ৪টি আসনের প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাকি দলগুলোর অনেক আসনের ভোটাররাই জানেন না ছোট দগুলোর প্রার্থী কে।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরও অনেকে
নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের গাউছিয়া মঞ্জিলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তার প্রতি সম্মান জানানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে থাকলে ভোটের সমীকরণ অন্যরকম হবে। আমার প্রাপ্ত ভোট নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে বাধা হতে পারে।’
নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী আরও বলেন, ‘চারবারের মধ্যে তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বারবার সম্মানিত করেছেন। তার প্রতি সম্মান দেখানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। এমতাবস্থায় ফটিকছড়িতে “নৌকা” প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সমীচীন মনে করি না।’
এছাড়া যশোর-৪ আসনে বিএনএম প্রার্থী সুকৃতি কুমার মন্ডল ‘অন্যায্য’ নির্বাচনের পরিবেশের কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এল জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তিনি অসুস্থ, জরুরি চিকিৎসা নিতে যাবেন, তাই নির্বাচনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯৯ আসনে ১ হাজার ৯৭০ প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। ২৮ রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।