Bangladesh

শেষ মুহূর্তে বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব পাশের হিড়িক দুই মাসে ১৮১৩ কোটি টাকা অনুমোদন 

বর্তমান সরকারের শেষ মুহূর্তে ক্রয়সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পণ্য সংগ্রহ-কেনাকাটা সংক্রান্ত প্রকল্পে অতিরিক্ত টাকা খরচের প্রস্তাব পাশের হিড়িক পড়েছে। গত দুমাসে (১০ অক্টোবর-১৩ ডিসেম্বর) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে এ ধরনের ১৯টি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি পাশ হয়েছে। পণ্য কেনাকাটাসংক্রান্ত এসব প্রস্তাবের বিপরীতে নির্ধারিত খরচ শেষ করেও অতিরিক্ত এক হাজার ৮১৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছর একই সময়ে এ ধরনের একটি প্রস্তাবও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়নি। 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রোববার যুগান্তরকে জানান, এ বিষয়টি অস্বাভাবিক। যে কারণে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যয়ের পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু প্রস্তাব অনুমোদনের আগে কেন ব্যয় বেড়েছে সেটি যাচাই করা হয়েছে কিনা এটি প্রথম প্রশ্ন। বাড়তি ব্যয় যথার্থভাবে হয়েছে কিনা, কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, এটি যাচাই করা হয়েছে কিনা সেটিও প্রশ্ন, যেহেতু ধারাবাহিকতার বাইরে হঠাৎ এত বেশি প্রস্তাব আসছে-এসব ব্যয় বাস্তবতার নিরিথে ঠিক ছিল কিনা। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি বা দুটি প্রস্তাব অনুমোদন স্বাভাবিক। কিন্তু এতগুলো প্রস্তাব খুব স্বল্প সময়ে পাশ এক ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমি নিজেও লক্ষ্য করে দেখছি-কেনাকাটাসংক্রান্ত প্রকল্পের বাড়তি ব্যয়ের ভেরিয়েশন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর একই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ভিন্ন নামে। সম্প্রতি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব আসার সংখ্যা বেড়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, সর্বশেষ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটাসংক্রান্ত দুটি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাব পুনরায় পর্যালোচনা করে উত্থাপনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এজেন্ডা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গত দুমাসে আটটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে মোট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ১৪২টি। অথচ গত বছরের একই সময়ে মাত্র দুটি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কেনাকাটার প্রস্তাব চারটি ছিল। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পণ্য সংগ্রহ ও কেনাকাটাজনিত প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ভেরিয়েশন প্রস্তাব ছিল না।

সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে ১৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ৫টি ছিল ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব। এর মধ্যে দুটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পের ভেরিয়েশন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয় ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। 

দ্বিতীয়টি হচ্ছে-বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৭৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্রয় প্রস্তাব। 

সম্প্রতি সময়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যেসব প্রকল্পে (কেনাকাটা-পণ্য সংগ্রহ) বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ‘উইকেয়ার ফেজ-১ : ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যৌথভাবে ইন্টারন্যাশনাল কনসুল্যান্ট অ্যান্ড টেকনোক্রাটস প্রা. লি. ভারত, রটন ইন্টারন্যাশনাল লি. ইউকে এবং বিসিএল অ্যাসোসিয়েটিস বাংলাদেশ জিকে। এতে পরামর্শক ফি খাতে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৫ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সার্মি কনসোর্টিয়াম কোরিয়ান জিকের জন্য ২৯ কোটি ২ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট সিম্পলসাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পে ২৮ কোটি টাকা, বরিশাল (চর কাউনিয়া) থেকে ভোলা (ইলিশা ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ত উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৩৩ কোটি টাকা, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি.র ‘কৈলাসটিলা ৮নং কূপ (অনুসন্ধানকূপ) খনন’ ড্রিলিং সার্ভিসের জন্য প্রায় চার ৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পাশাপাশি ‘কৈলাসটিলা ৮নং কূপ (অনুসন্ধানকূপ) খনন’ ওয়ারলাইন লগিং ও কোর অ্যান্ড পিভিটি অ্যানালাইসিস সার্ভিস খাতে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮০২ মার্কিন ডলার বা এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইন কেডুয়েলগেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বাড়তি ব্যয় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘ইরিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহুরী ইরিগ্রেশন প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় অতিরিক্ত সাড়ে ৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রায় ৬ কোটি টাকা, ‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজলাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের কেনাকাটায় অতিরিক্ত ৬৮৬ কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এছাড়া ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনারবারে ড্রেজিং’ প্রকল্পের কাজের ভেরিয়েশন বাবদ ১৯৫ কোটি টাকা, ‘মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের বাড়তি ব্যয় ২৭৪ কোটি টাকা ও আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইন কেডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের পূর্ত কাজের ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তবে ব্যতিক্রমী একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ রাজউকের প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন বাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। 

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, ‘যদি প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন যে, ভেরিয়েশন অর্ডার বা অতিরিক্ত কার্যাদেশ জারি করা আবশ্যক, সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আদেশ প্রণয়ন করবেন এবং ওই আদেশে ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত নোটিশসহ প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, কার্যের যৌক্তিকতাসহ আইটেম অনুসারে অতিরিক্ত কার্যের পরিমাণভিত্তিক হিসাব অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন। আর বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা, ডিজাইন অথবা বিন্যাসের পরিবর্তনজনিত কারণে কাজের সংযোজন বা বিয়োজন, প্রকল্পের সাধারণ ব্যাপ্তি ও ভৌত সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা সাপেক্ষে, কার্যের নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্তিসহ পরিমাণগত বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য ক্রয়কারী মূল ঠিকাদারের কাছে থেকে কার্য ও ভৌত সেবা ক্রয়ের জন্য ভেরিয়েশন অর্ডার জারি করতে পারবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d