Hot

শ্রমবাজারে কেলেঙ্কারি, ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যশ্রমবাজারে কেলেঙ্কারি

দশজনের সিন্ডিকেট ভেঙে প্রথমে করা হয় ২৫ জন। তার পর একশ’ জন। তাতেও কোনো ফল হয়নি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে চলছে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি। সরকারের কোনো উদ্যোগই এখানে কাজে আসেনি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, এখন বিপুল সম্ভাবনার শ্রমবাজারটি বন্ধের পথে।  আগামী ১ জুন থেকে আর কোনো বিদেশী শ্রমিক না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। 
কারণ সরকার ন্যূনতম ৭৮ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয় বেঁধে দিলেও ঢাকা থেকে একজনও যেতে পারেনি এই ব্যয়ে। গত দুই বছরে এই ব্যয়ের চারগুণ, অর্থাৎ যে চার লাখ শ্রমিক পাঠানো হয়েছে, তাদের প্রতিজনকে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে। আগে পরের সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৯০ হাজার শ্রমিক কোনো কাজ পায়নি। তারা গোটা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কেউ  সেখানকার কারাগারে, কেউ জঙ্গলে, কেউ বাসাবাড়িতে লুকিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়া থেকে গণমাধ্যমে আসছে, কুয়ালালামপুরে প্রতারিত শ্রমিকদের বোবা কান্নার খবর। কেউ আবার কাজ বা খাবার কোনোটাই না পেয়ে পথে পথে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরছে। মোটা কথা কুয়ালালামপুরের পথে পথে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কান্নার রোল। সেই কান্না দেখারও নেই কেউ।

সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে গেলে চোখে পড়ে হাজার হাজার প্রতারিত শ্রমিকের ভিড়। তাদের সবারই বক্তব্য, হয় কাজ দাও, নয় দেশে পাঠাও। কেউ আবার শুধু তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা চায়। শ্রমবাজারের এমন কেলেংকারিতে অতিষ্ঠ হয়ে দেশটি ঘোষণা দিয়েছে  আগামী জুন থেকে আর কোনো শ্রমিকই নেবে না।

কুয়ালালমপুরের পথে ঘাটে কিভাবে কাজ বঞ্চিত বাংলাদেশী শ্রমিকরা দিন কাটাচ্ছেন, তার শুনলে গা শিউরে ওঠে। তাদেরই একজন কুষ্টিয়ার গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের যুবক তুহিন আলী। বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। দেশে একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। তুহিনের আয়ের ওপরই চলত তাদের সংসার।

আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্থানীয় দালাল রাজুকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দুই মাস আগে যান মালয়েশিয়ায়।  তাকে ভালো বেতনে কোম্পানির কাজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাজু। কিন্তু সেখানে গিয়ে তুহিন পড়ে যান মহাবিপাকে। তুহিন আলী মোবাইল ফোনে জানান, মালেশিয়ায় আসার পর কয়েকজন লোক তাকে নিয়ে যায় রাজধানী কুয়ালালামপুরের ‘সালাক সালাতান’ নামের একটি ক্যাম্পে। সেখানে তার মতো তিন শতাধিক যুবক বন্দি আছে।
তুহিনের মতোই করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন, ওই গ্রামের কাদের হেলালের ছেলে আনারুল ইসলাম। তিনি কাজীপুর গ্রামের গোলাম বাজার এলাকার বজলুর ছেলে মাজেদ মাস্টারের হাতে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যান। তিনি বলেন, শুধু আমি নয়, মাজেদ মাস্টারের হাত ধরে এলাকার তিন শতাধিক যুবক মালয়েশিয়ায় এসেছেন। সবার ভাগ্যে জুটেছে একই অবস্থা।
মুজিবনগর উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের বাহাদুর আলী বলেন, আমি গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের আদম ব্যবসায়ী নাড়া মেম্বরের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় এসেছি। আমরা প্রায় চার মাস একটি ক্যাম্পে আটকে আছি। এখানে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না। না খেয়ে মরে যাবো আমরা। আবার বাড়িতেও ঋণের কিস্তি। কথা বললে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এভাবেই চার মাস যাবৎ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। প্রশাসনের কাছে আবেদন, আমাদের এখানে থেকে উদ্ধার করেন।

তার মতো দেশে ফেরার আর্তনাদ জানান, তুহিন, বাহাদুর, আনারুল, জমিরুল বা লালচাদ ইসলাম নন, ওই ক্যাম্পে আটকে আছেন প্রায় চার শতাধিক যুবক। এটি শুধু একটি ক্যাম্পের চিত্র। এ রকম অন্তত ২০টি ক্যাম্পের হাজার হাজার প্রতারিত শ্রমিকের অভিযোগ রয়েছে শুধু মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসেই। যারা জীবনে স্বাবলম্বী হবার লক্ষ্যে কেউ দিয়েছেন জমি বন্ধক, কেউ সুদের ওপরে টাকা নিয়ে কেউ বা তুলেছেন ঋণের কি¯িত। কিন্তু সবই বৃথা গেছে। এখন কান্নাই তাদের একমাত্র সম্বল। 
এখন তাদের অভিযোগ, তাদের কোনো কথা বা কান্না শোনার নেই কেউ। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কোনো ফায়দা নেই। সবাই নির্বিকার। বিএমইটি, মন্ত্রণালয় ও বায়রা- সবাই চুপ। কারও কাছে কোন নালিশ জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। কুষ্টিয়ার কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, আমার এলাকার অনেক যুবক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। সব হারিয়ে তিন মাস যাবত কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

আমরা তাদের পরিবারের পাশে আছি। ঢাকার মুছা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়া গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারিত শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের মাধ্যমে নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের আশ্বাসে তারা মালয়েশিয়ায় আসেন। কিন্তু তিন থেকে ছয় মাসেও দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের কোনো কাজ দিতে পারেনি।

দালাল চক্রের পক্ষ থেকে প্রথমে খাবার ও পানি দেওয়া হলেও এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পে আটকে থাকা যুবকেরা বলেন, আমরা ৫/৬ মাস আগে এখানে এসেছি। আমাদেরও এই ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই এসব দালালের মাধ্যমে সহায় সম্বল বিক্রি করে চার মাস আগে মালয়েশিয়া এসে আটকা পড়ে আছে এই ক্যাম্পে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রতারিত বাংলাদেশীদের দুর্ভোগের কিছু ঘটনা এখন র‌্যাবও তদন্ত করছে। সম্প্রতি দেশটিতে প্রতারণার শিকার বাংলাদেশী এক নারীর করুণ কাহিনী নিয়ে সংবাদ সন্মেলনে র‌্যাব -৪  সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি মাজহারুল ইসলাম জানান-গত ২৭ আগস্ট ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর পল্লবীর এক নারীকে। এক টাকাও খরচ লাগবে নাÑ এমন প্রলোভনে নিজের অজান্তেই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে যান তিনি।

সেখানে নেওয়ার পর বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। বোনের এমন আকুতি দেখে ভুক্তভোগী নারীর ভাই বাদী হয়ে  পল্লবী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চিহ্নিত আসামি মো. রুবেলকে (২৯) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তার রুবেলসহ অন্যান্য সহযোগীরা এক বছর আগে ভুক্তভোগী নারীকে বিদেশে একটি শপিংমলের দোকানে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়।

কিন্তু বিদেশে নিয়ে ভুক্তভোগীকে শপিংমলের দোকানে চাকরি না দিয়ে অজ্ঞাতনামা একটি বাসায় আটকে রেখে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। ভুক্তভোগী বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে আসামিদের কাছে তাকে দেশে ফেরত আনার কথা জানান তারা। এ সময় পাচারকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাবে। দাবি করা টাকা আসামিদের না দিলে ভুক্তভোগীকে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করাসহ ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী ওই নারী বলেছেন, মালয়েশিয়ায় এসে কাজ তো পাইনি।

উল্টো আমাকে এখানে নির্যাতন করা হচ্ছে। খারাপ কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। আমাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করো। আমাকে বাঁচাও। মালয়েশিয়া থেকে মোবাইলে পরিবারের কাছে এভাবেই সেখানে হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন মালয়েশিয়ায় পাচারের শিকার হওয়া এক নারী।তাকে যে রুমে আটকে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে গোপনে একটি ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি। নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানান পরিবারের কাছে। 
বিপুল সম্ভাবনার এই শ্রমবাজারটি সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে যাওয়ায় মালয়েশিয়ার সরকার নতুন করে ঘোষণা দিয়েছে আগামী জুন থেকে আর কোন শ্রমিক নেওয়া হবে না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে  অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কর্মরত ২৩টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্র্যান্টস। 
দশ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এর পর দুই দেশের মধ্যে অনেক আলোচনার পর ২০২২ সালের আগস্টে আবার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত রাখার আন্দোলন হলেও তা করা হয়নি শেষ পর্যন্ত । তবে এবার যাতে কোন ধরণের অনিয়ম না হয়, সেজন্য প্রথমে দশজনের সিন্ডিকেট ভাঙা হয়।  প্রথমে ২৫ এজেন্সি দায়িত্ব পেলেও পরে এটি বাড়িয়ে ১০০ এজেন্সি করা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা দূর হয়নি।

এই চক্রের সহায়তাকারী হিসেবে মালয়েশিয়াতেও বেসরকারি এজেন্সির একটি চক্র সক্রিয় থাকায় ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। সর্বশেষ জানা গেছে, গত জানুযারি পর্যন্ত অন্তত লাখ চারেক শ্রমিক এ দফায় ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে যায়। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই সরকার নিধারিত ৭৮ হাজার বদলে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে অন্তত ২২ হাজার কোটি হাতিয়ে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট।

এত টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে বেশিরভাগ কাজ পেলেও অন্তত বিশ হাজার শ্রমিক বঞ্চিত হয়েছেন নির্ধারিত সুবিধা থেকে। তারা কাজ পায়নি, থাকার জায়গা পায়নি, খাবারও পাচ্ছে না। তারা একটি ফেস বুক পেজ খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরছেন প্রতারণার অনেক কাহিনী। তাদের  দৈন্যদশার চিত্র দেখে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ঘোষণা দেন, এখন থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সহায়তাকারী সংস্থাগুলির পরিষেবা তথা এজেন্সি সহায়তা লাগবে না।

এ বিষয়ে দু সপ্তাহ আগে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেন, ইভিসা আবেদন এখন ইমিগ্রেশন বিভাগের মাইভিসা পোর্টালের মাধ্যমে সরাসরি করা যাবে। বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়োগের বিষয়ে সরকার নিয়োগকর্তাদের সক্রিয় আইডি এবং ব্যবহারকারীর ম্যানুয়াল প্রদান করেছে। ভিসা অনুমোদনের পর অভিবাসী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় আনতে নিয়োগকর্তাদের চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সময বেঁধে দিয়েছে সরকার।

সাইফুদ্দিন বলেন, দেশের জনগণের সুবিধা বিবেচনায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ ও  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিদেশিকর্মী নিয়োগে এজেন্টের হস্তক্ষেপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। সে সময় তিনি বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের শ্রুমিকদের খরচ মাত্র ৩ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত।

কিন্তু বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের বেলায় প্রত্যেককে খরচ করতে হয় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত। এই খরচকে ‘আধুনিক দাসত্বের’ সমতুল্য বলে আখ্যা দেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এ ব্যয় কমানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। 
এদিকে মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ শ্রমিক বা কাজ বঞ্চিত শ্রমিকদের   আউট পাসের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ঢাকা থেকে একটি আউটসোর্সিং কোম্পানি নিয়োগ দেয়া হয়। গত ১৫ মার্চ কুয়াললামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে। আদেশে বলা হয়, ১৮ মার্চের পর দেশে গমেনেচ্ছু কারোর কোনো আবেদন আর দূতাবাসে নেওয়া হবেনা। তাদেরকে এক্সপার্ট সার্ভিস নামের কোম্পানির মাধ্যমে আবেদন করে দেশে ফিরে যেতে হবে। ওই কোম্পানি ৬৯ রিঙ্গিত চার্জের বিনিময়ে পাসপোর্ট আবেদন ও ট্রাভেল পারমিটের সব কাজ করে দেবে। 
দূতাবাসের এহেন সার্কুলারে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন দেশে ফিরতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ,দূতাবাস নিজের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে ৬৯ রিঙ্গিত করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার টার্গেট করেছে। এক্সপাট সার্ভিস নামের ওই কোম্পানিকে আউট সোর্সিংয়ের কাজ কিভাবে দেওয়া হলো সেটাও রহস্যজনক। মূলত আটকে পড়া শ্রমিকদের বিপদকে পুঁজি করেই তারা নতুন বাণিজ্যে নেমেছে। এটা যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দেখে দেশটির সরকারও যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। বাধ্য হয়েই মালয়েশিয়ার সরকার ঘোষণা দিয়েছে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশটিতে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের আর কোনো আবেদন আগামী ৩১ মে এর পরে নেওয়া হবে না। অর্থাৎ বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হওয়া এই বিপুল সম্ভাবনার শ্রমবাজারটি ফের বন্ধের মুখে পড়েছে। 
এ বিষয়ে মালয়েশিয়া থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বারবার শ্রমিক নিয়োগে দেশটিতে দেখা দেয় কেলেংকারি। তার মধ্যে ঢাকার সিন্ডিকেটের কেলেংকারি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। যেমন- চার বছর পর চালু হলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে লাগাম টানা যায়নি। যে কারণে এখনো মালয়েশিয়ায় পাঠাতে প্রতি কর্মীর জন্য দেড় লাখ টাকা দিতে হয় ১০০ এজেন্সির নামে গড়ে ওঠা চক্রকে।

এই চক্রের অধীন থাকা স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামেও বাণিজ্য চলছে। এতে একজন কর্মী গড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় গেছেন। তবে গিয়ে চাকরি পাননি অনেকেই। এমন খবর দেশী বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায়  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে মালয়েশিয়া সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে। এজন্যই মালয়েশিয়া এখন বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক করতে চায়। তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

কর্মীদের প্রতারণা ও দুর্ভোগের জন্য দুই দেশের চক্রকে দায়ী করেন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম। গত ১২ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের জানান, সমস্যার একটি কারণ হলো, দু’দেশের সিন্ডিকেট।  শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও কোনো কর্মী ১ জুন থেকে আর মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। এর জন্য বাংলাদেশের চক্রকে দায়ী করছে অন্য দেশগুলো। 
সর্বশেষ জানা গেছে, ১৯৯২ সাল থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গেছেন সাড়ে ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মী। এর মধ্যে গত বছর গেছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি। এর আগের বছর গেছেন ৫০ হাজার কর্মী। আগে পরে মিলিয়ে এই ১২ লাখের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বেকার ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকে নিয়মিত দূতাবাসে আসছেন সহায়তা চাইতে। যদিও দূতাবাস তাদের বলছে, তাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে তাদেরকে বিশেষ আউট পাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর জন্য একটি আউট সোর্সিং কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে এক দশক ধরেই চলছে অরাজকতা। বিশেষ করে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অনলাইন কাঠামোর কাজটি পায় সিনারফ্ল্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক দাতো সেরি আব্দুল বিন আমিন নূর হলেন এ প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর সহযোগিতায় ঢাকার ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। চুক্তি মোতাবেক,  ৩৩ হাজার ৩৭৫ টাকায় কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে অভিবাসন ব্যয় নিয়েছে তারা।

এ খাতে সিন্ডিকেট  সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়ে দেশ বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। বছর দুয়েক আগে বন্ধ থাকা শ্রমবাজার চালু হবার পর সিন্ডিকে ভেঙে দশ থেকে একশ’ করার পর স্বস্তি ফিরেছিল শ্রমিকদের মাঝে। কিন্তু সেটা হয়নি। এবারের একশ’ জনের সিন্ডিকেট আরও বেপরোয় হয়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতি। এতে বোঝা যায়  চার লাখ শ্রমিকের কাছ থেকে কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d