Bangladesh

শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার পোশাক শ্রমিকদের

ফলে আজ সোমবার রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ প্রায় ৬০ ঘন্টা পর পুনরায় প্রত্যাহার করেছে। ফলে আজ সোমবার রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান। 

তিনি আরো জানান, দুপুরে শ্রম সচিবের আহবানে সাড়া দিয়ে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যায়। তারা শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শ্রম মন্ত্রণায়ের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, আগামী রোববারের মধ্যে এক মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে। বাকী বকেয়া নভেম্বরের মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মহাসড়ক ছেড়ে দেয়।

এর আগে শ্রম সচিব দুপুর একটার দিকে, একই আশ্বাস মোবাইল ফোনে দেয়ার পর শ্রমিকরা ২টার দিকে অবরোধ প্রত্যহারের ঘোষণা দেয়। কিন্তু তার এক ঘন্টা পর ৩টার দিকে তারা পুনরায় মহাসড়কের ওই অংশে অবরোধ করেছিল। তারপর থেকে দ্বিতীয়বার অবরোধ প্রত্যাহারের সর্বশেষ এ ঘোষণার আগপর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।

প্রথম দফায় টানা ৫৩ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। পরে শ্রম সচিব এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার পর অবরোধ তুলে নেন তারা।

কিন্তু, শুধু আশ্বাসের ওপর তারা আস্থা রাখেন না এমন কথা বলে বিকেল ৩টার দিকে আবারো তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

পোশাককর্মীদের দাবি, তারা আশ্বাস নয়, বেতন চান। বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেই তারা অবরোধ প্রত্যাহার করবেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘সচিব মহোদয়ের আশ্বাসের পর দুপুর ২টার পর তারা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তারা আবারও সড়ক অবরোধ করেন।’

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গত শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন আন্দোলনরত পোশাককর্মীরা। বেতন না পেলে মহাসড়ক না ছাড়ার ব্যাপারে অনঢ় অবস্থানের কথা জানান তারা।

আজ দুপুর ১টার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রমিকদের উদ্দেশে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দেন। তিনি সরকার দায়িত্ব নিয়ে আগামী রোববারের মধ্যে ছয় কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে বলে জানান। একইসঙ্গে পোশাককর্মীদের অন্যান্য দাবি ও পাওনা কীভাবে, কবে পরিশোধ করা হবে– তা আলোচনার জন্য পোশাককর্মীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান সচিব।

এসময় তিনি আন্দোলনরত পোশাককর্মীদের  মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ চালক, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ। বাধ্য পায়ে হেঁটে গন্তব্যে গেছেন অনেক যাত্রী।

টানা ৩ দিন মহাসড়কে অবরোধের ফলে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পায়ে হেঁটে বা বেশি ভাড়া গুনে বিকল্প পথে পৌঁছতে হয়েছে গন্তব্যে। অপরদিকে, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়েছে।

টানা ৩ দিন মহাসড়কে অবরোধ থাকার ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিজিএমইএ এর সাবেক একজন সহ-সভাপতি এবং বর্তমান দুই কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা কেউই পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না নিশ্চয়তা দেওয়ার পর তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তার মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রায় ৩০ ভাগ রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য এই মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়। 

শনিবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধের ফলে মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়ে রপ্তানি পণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে রপ্তানিকারকদের। এতে করে সময় ও খরচ উভয়ই বেশি লেগেছে। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে, দৈনিক মোট রপ্তানির চারভাগের এক ভাগ বিঘ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ, দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই হিসেবে গত ৩ দিনে রপ্তানি বিঘ্নিত হয়েছে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক শিল্প মালিক বলেন, “এই অবরোধের কারণে আশেপাশের দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ২০টি কারখানা ছুটি দিতে হয়েছে। এখনো শিল্প মালিকদের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে হলে ভবিষ্যতে তাদের যেকোনো উপায়ই হোক উৎপাদন বাড়াতে হবে।” 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button