International

শ্রীলঙ্কা কিভাবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল

পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা

২০২২ সালের শুরু থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে দেশটি দেউলিয়া হওয়া থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। খাদ্য ও জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠছে, মূল্যস্ফীতি কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ঊর্ধ্বমুখী।

গত বছর দেশটি চার হাজার ৬০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ প্রদান করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায়।

অথচ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে ফেরত দিয়েছিল পাঁচ কোটি ডলার। বাকি পাঁচ কোটি ডলারও চলতি মাসে ফেরত আসার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির আওতায় ২০ কোটি বা ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের ঋণের ৭৫ শতাংশ ফেরত দিয়েছে দেশটি। এমনকি অন্যান্য দেশ ও সংস্থার ঋণও এখন একটু একটু করে পরিশোধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা।

গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেম যাওয়ায় দেশটি কয়েক মাস খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকটে ভোগে। বিদ্যুত্হীন হয়ে যায় পুরো দেশ। ওই সময়ে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকটের পথ ধরে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ব্যাপক বিক্ষোভে তখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পতন হয়।

কিন্তু গত এক বছরে দেশটিতে সংকট অনেকটাই কেটে যাচ্ছে। যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯.৮ শতাংশ, গত জুলাই মাসে তা কমে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ এবং গত আগস্টে তা আরো কমে হলো ৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে মূল্যস্ফীতি আরো কমে আসবে।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন কোটি ৮০ লাখ ডলার বেড়ে হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো জাদুবলে নয় বরং নীতিগত কিছু সিদ্ধান্তের ফলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ধ্বংসের কাছে যাওয়া শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। দেশটির অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন পর্যটন খাতে সুদিন ফিরছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, শিল্প উৎপাদন বাড়ছে এবং কৃষি উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। ফলে রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

গত মার্চ মাসে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলার বেইল আউট ঋণ পেয়েছে। এ মাসে কলম্বোতে আবার আসছে আইএমএফ টিম। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করবে। আইএমএফ বলছে, ‘টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটি যে ঘুরে দাঁড়াতে পারল তার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াঙ্গা দুনুসিংহে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতি পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে রেমিট্যান্স ও পর্যটনের মতো কিছু ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পুনরুদ্ধার হয়েছে। এ দুটির সমন্বয়েই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আরো অনেক দূর যেতে হবে।’ সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে এবং সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে। এর ফলও অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক দুনুসিংহে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন ঋণদাতা দেশ এবং আইএমএফের মতো সংস্থার সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স অনেক গুণ বেড়েছে। আবার পর্যটনের মতো খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি গত বছর বিপুল পরিমাণ দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক বিদেশে গেছেন।’

আগের বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটন খাত থেকে শ্রীলঙ্কার আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। আর রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। তবে এই এক বছরে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে শ্রীলঙ্কার শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। কৃষি খাতও ভালো করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে চা ও রবার রপ্তানি বেড়েছে।

এ সাফল্যের পেছনে একজন ব্যক্তিকেও কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরাসিংহে। তাঁর নেতৃত্বে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার (সিবিএসএল) নেওয়া পদক্ষেপগুলোই দেশটিকে কার্যকরভাবে সমৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে এনেছে বলে অনেকে মনে করেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত জুলাইয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেউলিয়াত্ব থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ লক্ষ্য পূরণে তাঁর সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গাও এখন নন্দলাল বীরাসিংহে।

সিবিএসএলে নন্দলাল বীরাসিংহে ও তাঁর সহকর্মীরা এত দিন শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর জোর দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসায় তাঁরা এখন মনোযোগ দিচ্ছেন অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনার ওপর। গত বছর দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল ৭.৮ শতাংশ। চলতি বছর তা ২ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে শিগগিরই সুদহার ২০০ বেসিস পয়েন্ট (২ শতাংশ) কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সিবিএসএল। এর আগে জুন ও জুলাইয়ে সুদহার ৪৫০ বেসিস পয়েন্ট (সাড়ে ৪ শতাংশ) কমিয়েছিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এর কিছুদিন আগেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আগ্রাসীভাবে বাড়ানো হয়েছে সুদহার। চলতি বছরের এপ্রিল ও মার্চে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছিল রেকর্ড ১ হাজার ৫০ বেসিস পয়েন্ট (সাড়ে ১০ শতাংশ)।

তবে এর মধ্যেও সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোনো কোনো খাতে কর বাড়ানো, আবার কোনো খাতে ভর্তুকি কমানোর মতো পদক্ষেপও নিতে হয়েছে রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারকে। পাশাপাশি সংকট এড়াতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d