Trending

সংকট উত্তরণই বড় চ্যালেঞ্জ

মূল্যস্ফীতির অসহনীয় চাপ, রিজার্ভে ডলার সংকটের চরম মাত্রা, আমদানিতে সংকোচননীতি, জ্বালানি সংকট, ব্যাংক খাতের করুণ দশা ও অর্থ সংকটে উন্নয়নে সংকোচনসহ নানা সংকটে শেষ হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছর। আজ থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে এসব সংকট উত্তরণই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, এই অর্থবছরে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং জ্বালানি ও রিজার্ভ সংকট থেকে উত্তরণ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, ১৪ মাস ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

যে হারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে তার চেয়ে ২ শতাংশ কম হারে বাড়ছে বেতন। অর্থাৎ প্রতি মাসেই একজন মানুষকে এই পরিমাণ অর্থ ধার করে চলতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকনীতি সুদহার বাড়িয়েছে। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাগে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বিবিএসের মাসিক মূল্য ও মজুরির তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি-২০২৩ থেকে জানুয়ারি-২০২৪ এই এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯.৫৮ শতাংশ এবং গড় মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৪৯ শতাংশ, যার কারণে দেশের ৩৭ শতাংশ পরিবারই ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। আর এই ঋণের পরিমাণ গড়ে এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা বলে উঠে এসেছে খানা আয়-ব্যয় জরিপে।

মূল্যস্ফীতির শুরু বৈশ্বিক কারণে হলেও সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে যে পথে চলার দরকার ছিল, আমরা তার উল্টো পথে চলেছি।

যার কারণে প্রায় এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি, কমানো যাচ্ছে না। আমরা এখন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা আরো অনেক আগে নেওয়া দরকার ছিল। এ ছাড়া আমরা বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ হয়েছি। যার মাসুল গুনছে সাধারণ জনগণ।’

এদিকে গত অর্থবছরে তলানিতে নেমেছে সরকারের রিজার্ভ, যা ৪৮ বিলিয়ন থেকে কমে ২৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক অর্থনীতিতে। আমদানি সংকোচন করায় রপ্তানিও কমেছে। কমেছে শিল্প উৎপাদনও। এই অবস্থায় কমেছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। যার সার্বিক প্রভাব পড়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে। পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

অর্থ সংকটের বড় চাপ পড়েছে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সর্বনিম্ন এডিপি, মাত্র ৫৭.৫৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তার বড় অংশই বৈদেশিক ঋণের। সরকারের অর্থায়নের প্রকল্পগুলো বরাদ্দ পাচ্ছে সামান্যই। এদিকে নতুন অর্থবছরেও সরকারের অর্থায়নের প্রকল্পে অর্থ বাড়ানো হয়নি, বরং আগের তুলনায় কমেছে। ছয় হাজার কোটি টাকা বেশি খরচের টার্গেট নেওয়া হয়েছে বৈদেশিক অর্থ ছাড়ের।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাপ বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের। অর্থবছরের ১১ মাসেই ৩০৭ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। এবার ঋণ পরিশোধ প্রায় শতকোটি ডলার বেড়েছে, যার বড় কারণ সুদ বেড়ে যাওয়া। নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে, যা সরকারের রিজার্ভ সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button